- প্রচ্ছদ রচনা
- জুলাই ১৫, ২০২২
আজ সৌদিতে বাইডেন-সলমানের শীর্ষ বৈঠক। ফিলিস্তিনেও আব্বাসের মুখোমুখি জো ।

শুক্রবার, সৌদি আরবের প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমান আর সৌদি বাদশাহ সলমানের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে, বেথেলহামে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও একই টেবিলে মিলিত হবেন জো বাইডেন । প্রিন্স সলমানের সঙ্গে তাঁর আসন্ন শীর্ষ বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার রক্ষীরা। তাঁদের অভিযোগ, সাংবাদিক খাসোগির হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের যুবরাজ সুলেমানের নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে। বাইডেন বলেছেন, খাসোগি খুনে আমেরিকার হাত নেই । অথচ বাউডেনই ১৯১৮ সালে, সৌদি আরবের সমালোচনা করে বলেছিলেন—-খাসোগি হত্যা বরদাস্ত করা যায় না। ক্ষমতায় বসার পর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেল। এ কি শুধু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা, না পুরনো মিত্রকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আনার চেষ্টা? যুবরাজ সলমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব পূর্বের দিকে তাকাতে শুরু করেছে। চিন হাত বাড়িয়ে রেখেছে। ভারত-সৌদি সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে আরও। ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা করেনি রিয়াধ। এরকম পরিস্থিতিতে আমেরিকা পুরনো বন্ধু সৌদি আরবকে হাত ছাড়া করতে পারে না । ফিলিস্তিনি সমস্যাও তার নজরের বাইরে নয়। ওয়েস্টব্যাঙ্কে ইসরাইলি আগ্রাসনকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার প্রবণতায়ও ট্রাম্পের সমর্থন অজানার বাইরে নয়। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে বাইডেন বলেছিলেন, ইসরাইলের ‘অ্যানেক্সসেশন ম্যাপ-র’ বাড়িয়ে তোলার পরিকল্পনায় আমরা হস্তক্ষেপ করব না। এক্ষেত্রেও তাঁর মত বদল কি সম্ভব?—প্রশ্ন উঠছে।
সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতেই পশ্চিম এশিয়া সফর শুরু করেছেন জো বাইডেন। ফিলিস্তিন ইসরাইলের মানচিত্র বূদ্ধির সর্বাত্মক বাসনাকে মানতে পারে না। এটা তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন । এক্ষেত্রে পশ্চিম এশিয়ার সবকটি দেশ ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে। ইসরাইলের বাড়াবাড়ি মানেই ইরানের সামাজিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি । অস্ত্র সম্ভারে ইরান আজ স্বনির্ভর।
তার নৌসেনা, বিমান সেনা পদাতিক বাহিনীর কলেবর বেড়েছে। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের সামনে তেহরান এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ রুখতে সৌদি আরবের পাশে মার্কিন অবস্থান জরুরি। জরুরি, ফিলিস্তান নিয়ে আমেরিকার দৃষ্টিবদল। ওবামার জামানায়, অর্ধরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছিল ফিলিস্তিন। পূর্ণরাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবিতে এখনও অটল ফিলিস্তিনবাসীরা। লাগাতার চাপ বাড়াচ্ছে ইরানের মদতপুষ্ট হিজবুল্লাহ। শক্তিধর মিসাইল ও অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্রে তারা সুসজ্জিত। তাদের শক্তিবৃদ্ধির মানচিত্রে বাইরে নয় ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, কাতার সহ বহুদেশ। এদের রুখতে হলে সৌদি আরবকে সরাসরি শক্তি জোগাতে হবে। এটাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সফরের আরেক লক্ষ্য। সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, সৌদি-মার্কিন শীর্ষ বৈঠকে, বিদ্যুৎ সরবরাহ, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। স্বাভাবিক প্রশ্ন, কার নিরাপত্তা? কোন ধরণের নিরাপত্তা? আমেরিকা কি বিপন্ন ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলি আগ্রাসনের রক্তচক্ষু থেকে বাঁচাতে পারবে? রুখতে পারবে তেল আভিবের ক্রমাগত হামলা? হিজবুল্লার বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে ব্যাপক কোনো ঝুঁকি নেবে? পশ্চিম এশিয়ায় চিনের নিঃশব্দ প্রবেশ থামাতে নিজের আরও জোরালো উপস্থিতি কি জাহির করবে?
বাইডেন নরম মনের মানুষ। অভিজ্ঞ। আক্রমণাত্মক নন। তাঁর পক্ষে পশ্চিম এশিয়া নিয়ে দুঃসাহসী হয়ে-ওঠা অসম্ভব। মার্কিন অর্থনীতিতে ইহুদি লভির হাত বড়ো দীর্ঘ। তাদের চাপ আগ্রাহ্য করে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে তেলআভিবের দারোগাকে শাসানো কঠিন। বাইডেন ঝুঁকি নেবেন না। যুবরাজ সলমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক— অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মতোই শেষ হবে। সমস্যা সমস্যাকে জড়িয়ে থাকবে। রক্ত যেমন রক্তের উপর ভাসে, তেমনি ফিলিস্তিনি রক্ত, ইয়েমেনি রক্ত জলে-জমিনে ভাসতে থাকবে। ‘অ্যানেস্কশন নীতি’ থেকে ইসরাইল সরবে না, আগ্রাসনাক্তক নীতির বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাবে। দক্ষিণ ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপে মার্কিন সমর্থন বজায় থাকবে, ওখানকার জঙ্গি আর বিদেশি জঙ্গিদের সহযোগী ফ্রন্টের জেদ বাড়বে। তার মানে আমেরিকার পশ্চিম এশীয় নীতির দুনয়নে ত্রিনয়নের সংযোগ অসম্ভব।
❤ Support Us