- ধা | রা | বা | হি | ক
- নভেম্বর ২১, ২০২১
ধা|রা|বা|হি|ক: কয়েকটি প্রেমের গল্প |পর্ব ২৭|

অলঙ্করণ: দেব সরকার
জীবনের রোজনামচায় আকস্মিক তার আগমন। স্থায়িত্বে কোথাও সে পূর্ণাঙ্গ, আবার কোথাও অসম্পূর্ণ। রূপক এ নয়, নানান জীবনচর্যায়, সেই পূর্ণ অপূর্ণের রূপ নিয়ে দেবপ্রিয় চক্রবর্তীর ধারাবাহিক কথামালা…
| পর্ব ২৭ |
বাল্যপ্রেমের অভিশাপ ও মাঝরাতের কফি
অমিতাভদাকে শুতে পাঠিয়ে গেস্টরুমের বিছানায় আধশোয়া হয়ে লীনাকে ফোন করল অভি। এই ব্যস্ততার মধ্যে একটা কথা মনে খচখচ করছিল। মিসেস গুপ্তা যে রিয়া সে কথা লীনাকে বলা দরকার। কিন্তু এভাবে হুট্করে সেটা বলায় পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা বুঝে উঠতে পারছিল না সে। কারণ হঠাৎ নিজের বাবার সঙ্গে মুখোমুখি এবং তাঁর অসুস্থতা নিয়ে মানসিকভাবে লীনা যে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের মধ্যে আছে, তার মধ্যে রিয়ার এই অপ্রত্যাশিত পরিচয় বলা কি উচিত? অভি জানে না। তাই কথাটা মুখোমুখি বলাই ঠিক হবে বলে মনে হল তার।
-‘হ্যালো অভি। সব ঠিক আছে? কেমন আছেন উনি এখন?’ ফোন তুলেই প্রশ্ন লীনার। যদিও মেসেজে অভি মাঝে মাঝে জানিয়েছে পরিস্থিতি।
আশ্বস্ত করার জন্য বলল, -‘একদম ঠিক আছেন। চিন্তা করো না লীনা। শরীর ঠিক আছে অমিতাভদার। এখন ঘুমিয়ে পড়েছেন। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমোও। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট-এর পর দেখা করছি তোমার সঙ্গে। কেমন?’
-‘ঠিক আছে। তুমিও তো ক্লান্ত নিশ্চয়ই। ঘুমোও। কাল কথা হবে।’
লীনার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করলেও অভি আলোচনাটা বাড়াল না। নিজের ইমোশনগুলোকে একটু গুছিয়ে নিতে হবে। সে গুলোকে চেষ্টা করে দাবিয়ে রেখেছে দুদিন ধরে। কিন্তু ও জানে লীনা নিজের বাবার মুখোমুখি হওয়ায় যতটা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে এতদিন পর রিয়ার মুখোমুখি হয়ে অভির ভেতরের ঝড়টাও কম কিছু নয়। এর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার এই মুহূর্তে কোন উপায় নেই।♦♦♦
সিধুর মধ্যস্থতায় রিয়া দেখা করতে রাজি হয়েছিল অভির সঙ্গে। অনেক আশা নিয়ে তনুশ্রীদের বাড়িতে দেখা করতে গেল অভি। রিয়ার পাশে বসে ওর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলেছিল, -‘ফিরে এস রিয়া। আমি নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিনা।’
হাত ছাড়ানর চেষ্টা করল না রিয়ায়। অভির চোখে অপলক চেয়ে থাকা, দুচোখ জলে ভরে আসা রিয়ার কন্ঠস্বরে এক অচেনা নারীকে বলতে শুনল অভি।
-‘আমি তো যাইনি কোথাও অভি। কিন্তু আমাদের ভালোবাসার পরিণতি নেই কোন।’ অভির প্রিয়তমা উচ্ছলা কিশোরী রিয়া যেন কোন এক অপরিচিত পরিণত নারীর আড়ালে হারিয়ে গেছে। নিজের ভেতরে বাড়তে থাকা ভয় দুঃখ আর হতাশা গলায় উঠে এসে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করে দিচ্ছিল অভির। রিয়ার উত্তর কি হবে জানা সত্ত্বেও ধরা গলায় প্রশ্ন করেছিল, -‘কেন রিয়া? আমাদের সম্পর্ক তো আমাদেরই। কেন আমরা আগের মত হতে পারবো না?’
মৃদু কিন্তু নিষ্কম্প কণ্ঠস্বরে উত্তর দিয়েছিল রিয়া -‘আমার বাবা আমার কাছে সবচেয়ে বড় অভি। আর আমার বাবার জীবনের সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে তাঁর নিজের সম্মান। আমি গত ক’দিন ধরে সেই সম্মান হারানোয় ওনার যন্ত্রণা দেখেছি। সেটার কারণ তোমার বাবা। তোমার পরিবারের সঙ্গে আমার পরিবারের কোনো সম্পর্ক সম্ভব নয় আর।’
-‘আর আমাদের ভালোবাসা?’ মরিয়া হয়ে বলেছিল অভি।
-‘সে তো আছে। থাকবেও। সেটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে আর কোনদিন আমরা আর আগের মত হতে পারব না। অন্তত আমি নয়।’
-‘সময় সব ঠিক করে দেয় রিয়া। প্লিজ এভাবে বলোনা।’
এবার ধীরে ধীরে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ থেকে জল মুছে বলেছিল রিয়া, -‘বিশ্বাস কর অভি তোমার চেয়ে আমার কষ্ট কম নয়, হয়ত বেশীই। স্বপ্ন আমিও কম দেখিনি। কিন্তু সে সব স্বপ্নই থেকে যাবে। তোমার সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। এরপর আমি চাইনা তোমার সামনে আসতে। তুমিও প্লীজ চেষ্টা কর না। তাতে আমার দুঃখটা বাড়বে। এ ছাড়া আর কিছুই হবে না।’
অভি অনুভব করছিল রিয়া অনেক দূরে চলে গেছে। অভির নাগালের অনেক বাইরে। কি বলবে বুঝতে পারছিলো না সে।
-‘পারলে আমাকে ক্ষমা কর।’ বলে অভির উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল রিয়া। সঙ্গে নিয়ে গেল অভির কিশোর মনের সমস্ত স্বপ্ন, মিষ্টি অনুভূতি আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে। সেদিন নিজের ভেতরে খানিকটা মরে গিয়েছিলো অভি।♦♦♦
আজ একা একা শুয়ে সেদিনের সেই যন্ত্রণাটা আবার ঘিরে ধরলো অভিকে। গত কদিনে এই চেপে রাখা ব্যথাটা লীনার বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় ভুলতে আরম্ভ করেছিল। আবার নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিল। নিয়তি কি পরিপূর্ণতার অনুভুতি নিষিদ্ধ করে রেখেছে তার জীবনে? অস্থির হয়ে বিছানা থেকে উঠে পরলো অভি।
লীনাকে মেসেজ করল, ‘শুয়ে পড়েছ?’
-‘না। কি হলো?’ কয়েক সেকেন্ডএর মধ্যে উত্তর এসে গেল। লীনার নম্বর ডায়াল করে ফোনটা কানে তুললো অভি ঘড়িতে দেখল রাত সোয়া এগারটা।
-‘কি হলো অভি? কেমন আছেন উনি?’ লীনার উদ্বিগ্ন স্বরে নিজের বাবার সম্পর্কে প্রশ্নটা অভির সম্বিৎ ফিরিয়ে দিল।
-‘একদম ঠিক আছেন। লীনা কিছু চিন্তা নেই। ঘুমোচ্ছেন।’
-‘তুমি ঘুমোওনি কেন?’ আশ্বস্ত হয়ে বলল লীনা।
হুট করে প্রশ্ন করল অভি, কিছু ভালো করে না ভেবেই।
-‘লীনা একটু বেরোতে পারবে?’
-‘এখন? এত রাতে?’
-‘আমার তোমার সঙ্গে কথা বলা খুব প্রয়োজন লীনা আমি দশ মিনিটে পৌছে যাব। পারবে বেরোতে?’
-‘কি হয়েছে অভি? ফোনে বলো না।’
-‘না লীনা ফোনে নয়। মুখোমুখি বলতে হবে। প্লিজ।’
বলতে বলতে বুঝল অভি, পাগলামো হচ্ছে। নিজের অস্থিরতার জন্য লীনাকে বিব্রত করাটা ঠিক নয়। মাথাটা একটু পরিষ্কার হয়ে আসায় নিজেকে সামলে বলল, -‘আচ্ছা বাদ দাও। কাল কথা হবে।’
-‘আরে না। এসো আমি তৈরি হচ্ছি। এবার আর আমারও ঘুম হবেনা, তোমার কথা না শুনে। চলে এসো। রাখছি।’
অমিতাভদার ঘরে উঁকি মেরে তাকে অঘোরে ঘুমোতে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে সাবধানে শব্দ না করে একটা ফ্ল্যাটের সদর দরজা লক করে বেরিয়ে পড়ল অভি।লীনাকে পোশাক বদলাতে দেখে রিনা প্রশ্ন করলো, – ‘কি হলো এত রাতে কোথায় বেড়োচ্ছিস?’
রিনাকে বাবার সঙ্গে দেখা থেকে নিয়ে সবই বলেছে লীনা তারপর দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাকে এক্ষুনি কিছু জানাবে না।
-‘অভি দেখা করতে চাইছে।’
লীনার উত্তরে রিনা চিন্তিত সুরে বলল।– ‘এত রাতে কেন? অদ্ভুত তো?’
-‘অদ্ভুত তো ওর মিডলনেম দিদি। ঐরকমই ইম্পালসিভ। কি জানিস তো দিদি? ওর পাল্লায় পড়ে আমিও কেমন সেরকমই করছি। ভালোও লাগছে।’
-‘হুম্। বুঝলাম। আমি মেসেজ করলে উত্তর দিবি বা ফোন করবি। ঠিক আছে? নইলে চিন্তা হবে। কি হলো জানাস্।’
–‘সে তো অবশ্যই। আসছি।’ বলে বেরিয়ে গেল লীনা।♦♦♦
লীনার বাড়ির সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে দুজনে এসে বাইপাসের পাঁচতারা হোটেলের কফিশপে দুটো কফি নিয়ে বসার পর অভি বলল, – ‘স্যরি এত রাতে তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য।’
– ‘কি হয়েছে সেটা বল না। এমনিতেও ঘুম আর হচ্ছে কোথায় আজকাল।’ অভিকে থামিয়ে দিয়ে বলল লীনা।
– ‘লীনা এই যে আমরা একটা অদ্ভুত জটিলতার মধ্যে পড়ে গেলাম। তোমার কি মনে হয় – এটা কি করে সমাধান হবে? তুমি দেখা করবে – তোমার বাবার সঙ্গে?’ নিজের আসল কথাটা কিভাবে তুলবে বুঝতে পারছিল না অভি।
লীনা শান্তভাবে বলল, -‘দেখা করার কি আছে? কিছুই বদলায়নি তো।’
-‘না লীনা বদলায়নি। তোমার অভিযোগ, দুঃখ, অভিমান, রাগ কিছুই বদলায়নি। কিন্তু এটা কি বুঝতে পারছ না – বদলায়নি তোমার বাবার প্রতি ভালোবাসাও।’
কফির কাপটা ঠোঁটে তুলতে গিয়ে থেমে গেল লীনা। মুখ তুলে অভির চোখে চোখ রেখে বলল, – ‘কিসের ভালবাসা? ওই মানুষটা আমার বাবা সেটা আমি কি করে মেনে নেব?’
-‘লীনা মানুষটা তো একই আছে। ভুল হোক বা অন্যায় সেটা কি ক্ষমা করা যায় না?’
-‘না যায় না অভি। সব অপরাধ ক্ষমার যোগ্য হয় না।’ জেদি স্বরে বলল লীনা।
অভি বোঝাবার চেষ্টা করল, -‘ঠিক আছে। কিন্তু একটু ভেবে দেখ, উনি যা করেছেন সেটা কি পরিস্থিতিতে হয়েছে সেটা তো বিচার করা উচিত। সব অপরাধীকেই তার নিজের দিকটা বলার অধিকার দেয়া হয়।’
-‘কি বলার আছে ওনার?’
-‘তোমাকে কি বলার আছে জানি না। তবে আমাকে যা বলেছেন সেটা বলতে পারি। বলে অমিতাভদার কাছ থেকে শোনা তাঁর বক্তব্য পুরোটা লীনকে বলল অভি। কথা শেষ হলে লীনা বলল –‘জানিনা অভি। ওনার সঙ্গে যাই হোক। আমি কি করে ভুলে যাব গত সাত বছরের কাটানো আমার মায়ের যন্ত্রণাভরা জীবনটা। আমার লজ্জা, দুঃখ, রাগ? এত সহজ?’
-‘সহজ তো নয়ই। জীবনটাকে শোধরানো খুব কঠিন লীনা। কিন্তু কখনো কখনো যখন সুযোগ আসে তখন নিয়তির সাহায্য নিতে অস্বীকার করাটা ভুল। তোমার হয়ে সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারব না। জোর করারও প্রশ্ন ওঠে না। শুধু এটুকু বলতে পারি – ভালো করে ভেবে দেখো। জীবন এবং সম্পর্ক দুটোই তোমার নিজস্ব। আমি শুধু আমার মতামত দেবার অধিকারটা ফলাচ্ছি। আশা করি সেটা মাত্রা ছাড়াইনি?’
এক ঝলকের জন্য অভি দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে নিলো লীনা। মৃদুস্বরে বলল, – ‘না ছাড়াও নি।’
অভি তখনও বলছে, -‘তা ছাড়াও লীনা, আরেকটা দিক ভেবেছ কি? আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত জটিলতাগুলোর সমাধান করতে না পারি তবে আমাদের প্রফেশনাল লাইফে কত বড় সমস্যা দাঁড়িয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারছ?
-‘হ্যাঁ অভি। আশাবরী যদি এভিসির সঙ্গে চুক্তিটা করে তবে আমাকে কাজটা ছেড়ে দিতে হবে। সেটা কোনো সমস্যা নয়। আর তোমার কি অসুবিধে? তুমি তো কাজ করতেই পারো।’
-‘পারি না লীনা। আমার সমস্যার সমাধান আমার সামনে এই মুহুর্তে কিছু নেই। আশাবরীতে কাজ তো দূরের কথা যাওয়াও উচিত নয় আমার।’
–‘কেন তোমার কি হলো আবার?’ অবাক চোখে অভির দিকে তাকাল লীনা।
-‘আশাবরীর মালিক মিসেস গুপ্তার কুমারী নাম আরোরিয়া কারিওয়াল – ডাক নাম রিয়া। আর কিছু বলতে হবে?’
স্তম্ভিত লীনার চোখের দিকে তাকিয়ে অভির মনে হল নিজের জীবনের এই জটিলতা লীনার মনের অস্থিরতার মধ্যে না বললেই হয়তো ভালো হতো। জীবনে হঠাৎ পাওয়া একটা ভালো লাগা মুঠোর মধ্যে থেকে বালির ঝড়ে যাওয়ার মত যেন তার জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
তিন ফুট কফি টেবিলের দুদিকে বসে থাকা দুটো মানুষের মধ্যে একটা অনতিক্রম্য দূরত্ব হঠাৎ এসে পড়েছে। কি বলবে কেউই বুঝতে পারছিল না।
এমন সময় দুজনকে চমকে দিয়ে লীনার ফোন বেজে উঠলো। দিদির কল দেখে লীনা ফোন তুলে বললো –‘আসছি দিদি – পনের মিনিটে।’ বলে ফোনটা কেটে বললো, – ‘চলো উঠি।’ পার্স থেকে কফির দাম মেটাতে তিনটে একশ’ টাকার নোট কফি কাপ এর নিচে চাপা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল লীনা।
অভি কাউন্টারের দিকে ইশারা করে পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। অস্বস্তিকর নীরবতার দেয়াল দুটো মানুষের এই কদিন অবলীলায় কাছে চলে আসাটার মাঝে হঠাৎ একটা ছেদ টেনে দিয়েছে। লীনার ব্যবহারের বদলটা অভি কিভাবে সামলাবে ঠিক করতে না পেরে কথা বাড়ালো না। বাড়ির সামনে এসে মৃদু সুরে ‘গুডনাইট’ বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল লীনা।♦♦♦
থমথমে মুখে বোনকে ঢুকতে দেখে রিনা বুঝল নৈশ সাক্ষাৎকার শুভ হয়নি। -‘কিরে কি হলো কি বলল অভি?’
রিনার প্রশ্নের উত্তরে পোশাক বদলে রাতের পোশাক পরতে পরতে লীনা বলল, – ‘দুর্- সব মিনিংলেস। ইমোশন, ফিলিংস, এ গুলো কে পাত্তা দিলে জীবনটায় ঝামেলা ছাড়া আর কিছু হয় না।’
মন্তব্য না করে বোনের কথা শুনছিল রিনা।
-‘একটা বড় ভুল হয়ে গেছে রে দি’। ক’দিনের পরিচয়ে হঠাৎ করে নিজের মনের লাগাম ছেড়ে দিয়েছিলাম। এই ভুলটা আমি কি করে করলাম? নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন।’
-‘কি হয়েছে তা তো বল।’
বিছানায় বসে মেঝের দিকে চেয়ে লীনা বলল, – ‘রিয়া ফিরে এসেছে। আশাবরীর এমডি মিসেস গুপ্তাই রিয়া।’
-‘কি বলছিস!’
-‘ঠিকই বলছি। সেটাই বলতে ডেকেছিল অভি।’
রিনা বলল, – ‘তোর মনে আছে? তোকে যখন প্রথমবার জিজ্ঞেস করেছিলাম – বলেছিলি ভালো লেগেছে কিন্তু প্রেমে পরিস নি। সেটা কি বদলে গেল?’
-‘সেটা জানিনা দি’। কিন্তু অভির জীবনে রিয়ার ফিরে আসাটা আমার ভালো লাগছে না। এটা যদি প্রেম হয় তাহলে তাই।’
-‘অভি কি বলছে?’
-‘এ নিয়ে কথা হয়নি। আমার ভালো লাগছিলো না। তার মধ্যে তোর ফোন এলো আমি সেই ছুতোয় চলে এলাম।’
-‘তোর আলোচনা করা উচিত ছিল।
-‘করব দি’। একটু সময় চাই তার আগে। গুড নাইট।’ বিছানায় শুয়ে পড়ে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বলল লীনা। ঘুম দুজনের কারোই আসছিল না অন্ধকারে দিদির গলা শুনতে পেলো লীনা।
-‘আচ্ছা একটা কথা বল।’ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল রিনা, – ‘অভি কি বলেছে? রিয়ার সঙ্গে দেখা করবে?’
-‘না।’
-‘তবে কি বলেছে?’
-‘ও বলেছে আশাবরীতে কাজ করা দূরের কথা ওর নাকি ওখানে যাওয়াও উচিত নয়।’
-‘তাহলে তুই এত অস্থির হচ্ছিস কেন?’
-‘দি’ ও বলেছে যাওয়া উচিত নয়। এটা বলেনি যে, যেতে চায় না বা যাবে না।’
-‘তাতে কি হল?’
-‘অবশ্যই হলো দিদি। অভি সেটাই বলে যেটা ও ভাবে। উচিত না বলেছে। তার মানে এই নয় যে রিয়ার প্রতি দুর্বলতা ফিরে আসেনি। আর ফিরে আসা ছাড়্, ওই দুর্বলতা ওর মন থেকে কখনো গেছে কিনা সেটাই তো নিশ্চিত নয়।’
-‘দ্যাখ, কি হবে জানিনা। কিন্তু যেটা অভি উচিত নয় বলেছে, সে কাজটা ওর মতো ছেলে করবে বলে মনে হয় তোর?’
-‘দি’ তুই কেন বুঝিস না। এটা শুধু অভির ব্যাপার নয়। রিয়া যদি ফিরতে চায় তোর মনে হয় অভি অস্বীকার করতে পারবে?’
-‘এ প্রশ্নের উত্তরটা আমি দিতে পারবো না রে। এটা তোকে অভিকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।’
-‘ভিক্ষের থালা নিয়ে আমি কারো কাছে যাবো না দিদি। অভি যাক, রিয়াকে নিয়ে সুখী হোক। আমার জীবনে এসব ঝামেলার কোন দরকার নেই। অনেক হয়েছে। এবার ঘুমো।’
-‘ঘুম হবে?’ বলল রিনা।
-‘জানিনা। চেষ্টা করছি।’ কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারল রিনা বোনের মানসিক অবস্থা এখন আলোচনা করার মতো নয়। পরে ঠান্ডা মাথায় এটা নিয়ে কথা বলবে চিন্তা করে চুপ করে গেল সে।
ক্রমশ…
❤ Support Us