- ধা | রা | বা | হি | ক
- জুলাই ৩১, ২০২১
আমার ছেলেবেলা

মাস ছয়েক পর বাবা পুনরায় বিবাহ করেন, এবারও সেই কিশোরগঞ্জেই । এবারও এক দত্ত-পরিবারে। বাবা যেন কিছুতেই দত্ত বংশের প্যাঁচ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না। আমার নতুন মায়ের সঙ্গেও ঠাকুরমার সম্পর্কটা শুরু থেকেই শীতলরূপ ধারণ করলো। আমার নতুন মা স্বাস্থ্যে এবং কলহশক্তিতে আমার আপন মায়ের চেয়ে সবল হওয়ায় সংসারে প্রবেশ করার অল্পদিনের মধ্যেই তিনি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভাগ করে দেয়ার জন্য ঠাকুরমার উপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হন। ঠাকুরমা শুধুমাত্র জমি ভাগ করে দিতে রাজি হন। অস্থাবর সম্পদের অধিকাংশই ঠাকুরমা নিজের দখলে আগলে রাখেন। আমরা যে ঘরটিতে থাকতাম, কিঞ্চিৎ সংস্কার সাধন করে বাবা ঐ ঘরটির নামকরণ করেন ‘ছিন্নকুটির’। নতুন মায়ের স্নেহছায়ায়, ছিন্নকুটিরে শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।
অল্পদিনের ব্যবধানেই ঠাকুরমা পরলোক গমন করেন। মূত্যুর সময় তিনি তার বড়পুত্রের সঙ্গে ছিলেন। জ্যাঠামশাই ঠাকুরমার মৃত্যুর সংবাদ বাবাকে জানান নি, কাকার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন, কাকা সে সংবাদ বাবাকে জানান নি। লোকমুখে খবর পেয়ে বাবা পরের ট্রেনে ময়মনসিংহে যান, কিন্তু ততক্ষণে ঠাকুরমার দাহ সম্পন্ন হয়ে যায়। বাবা ঠাকুরমাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হন। এভাবেই আপন পুত্রের সঙ্গে আপন মায়ের অবিশ্বাস্যপ্রায় এক দুঃসহ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
♦–♦–♦
আমার নতুন মা আমাদের সংসারে এসেই এমন সব সমস্যার সম্মুখীন হন, যেগুলো মোকাবিলা করার মানসিক প্রস্তুতি থাকলেও, বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁর আদৌ ছিল না। আমি খুব ছোট ছিলাম; মায়ের মৃত্যু আমার মনে মোটেও রেখাপাত করে নি। আমি খুব সহজেই নতুন মায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিলাম। আমার মনে হলো আমার মা যেন মৃত্যুর পর আরও মোটাসোটা হয়ে ফিরে এসেছেন। আমি অচিরে আমার নতুন মায়ের আঁচলধরা পুত্রের পরিণত হই। এই মা যে আমার আসল মা নয়, তা আমাকে কেউ বুঝাতেই পারতো না। রান্নাঘর থেকে পূজার ঘর পর্যন্ত আমি মায়ের অষ্টপ্রহরের সঙ্গী বনে যাই। আমার ছোটবোন সোনালিও মাকে সহজেই মেনে নিতে পারলো। সমস্যা হলো আমার দাদামণি এবং বড়বোন রুপালীকে নিয়ে। বিশেষ করে আমার দাদা কিছুতেই বাবার দ্বিতীয় বিবাহকে মেনে নিতে পারলো না। মায়ের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিলো। এই বিরোধের মধ্যে বাবা ভীষণ নাজুক অবস্থায় পড়লেন । সে এক দুঃসহ অবস্থা আমাদের বৈমাত্রেয় জ্যাঠামশাইর একমাত্র পুত্র শান্তনু, আমরা তাঁকে বড়দা বলে ডাকতাম বাবার দুর্দিনে বাবার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। বড়দা তখন বিএ পাশ করে কিশোরগঞ্জের রামানন্দ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি দাদামণিকে সঙ্গে করে কিশোরগঞ্জে নিয়ে যান এবং রামানন্দ স্কুলে ভর্তি করে দেন। সংসারে সাময়িকভাবে শান্তি ফিরে আসে। সেনবাড়ি থেকে দুলালীকে আমাদের ঘরে ফিরিয়ে আনা হয়। বাবা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাঁচেন—ছোট বোনটিকে কাছে পেয়ে আমারাও খুব আনন্দে দিনপাত করতে থাকি। কিন্তু সেই আনন্দের দিনগুলি দ্রুত অবসান হয়। কিছুদিনের মধ্যেই আমার নতুন মা অন্তঃসত্বা হন এবং সন্তানের জন্ম দেয়ার জন্য তিনি পিত্রালয়ে চলে যান। তাঁর অনুপস্তিতিতে দুলালীকে আবার তার পুরনো আশ্রয়ে, সেনবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হঠাৎ একদিন দুপুরে দুলালী তার অনিশ্চিত জীবনের ইতি টেনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার কী অসুখ হয়েছিল জানি না। মাতৃহীনতার চেয়ে বড় অসুখ আর কী আছে? আমার মনে পড়ে, চোখ দুটো তুলসিপাতায় ঢাকা অবস্থায় মৃতা দুলালীকে শুইয়ে রাখা হয়েছে আমাদের বাড়ির উঠানে, তার ছোট্টদেহখানিকে ঘিরে খেলা করছে নারকেল গাছের চিরলপাতার আলোছায়া। মা’র মৃত্যুতে আমি কাঁদি নি—দুলালীর জন্য কেঁদেছিলাম।
♦–♦–♦
আমাদের গ্রামের নাম কাশতলা। কাশ মানে সর্দিকাশির কাশ নয়, কাশফুলের কাশ। এই ব্যাপারটাকে স্পষ্ট করে তোলার জন্যই আমি আমাদের গ্রামের নামটিকে পাল্টে রেখেছিলাম কাশবন। কাশবন নামটা অনেকেই গ্রহণ করেছিল। চিঠি পত্রেও আমরা কাশবন ব্যবহার করতাম। পোস্টাপিসের পিয়নরাও জানতো কাশবন মানেই কাশতলা। বারহাট্টা রেলস্টেশন থেকে মাইল দেড়েক দক্ষিনে কাশবন। বারহাট্টা থেকে ডিস্ট্রিক বোর্ডের চওড়া-উঁচু সড়ক আমাদের গ্রামের সামনে দিয়ে ডেমুরা চাপারকোণা হয়ে বিষ্ণাই নদীর তীর পর্যন্ত গেছে। ঐ নদী পেরুলেই আটপাড়া থানার শুরু। আমাদের আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের নাম বারঘর, গড়মা, গোবিন্দপুর, আন্দাদিয়া, গুহিয়ালা, যোগীশাসন, যশমাধব, রসুলপুর, ডেমুরা চাপারকোণা, সাধুহাটি ইত্যাদি। বাংলাদেশে কত সুন্দর সুন্দর নামের গ্রাম যে আছে। যশমাধব এবং ডেমুরা এই দুটো গ্রামে মুসলমানদের বাস ছিল—আশপাশের অন্য গ্রামগুলোর সবাই হিন্দু। যশমাধবের দারোগা বাড়ি ছিল খুব বিখ্যাত। সংগ্রামী জননেতা আজিজুল ইসলাম খান ওই দারোগা বাড়ির মানুষ। ঐ গ্রামের আলতাফ ভাই নির্বাক নজরুলের চরিত্রে অভিনয় করতেন নজরুলজয়ন্তীতে। তাঁর চেহারা ছিল অবিকল নজরুলের মতো। ওই গাঁয়র রফিজ খাঁ সাহেব বাবার বন্ধু ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে জনাব তাহেরউদ্দিন খান ছিলেন আমাদের ইংরেজী শিক্ষক, পরে তিনি সরকারী কলেজের অধ্যাপক হন। তার ছোট ভাই আছাবউদ্দিন ছিলেন কবিয়াল। বারহাট্টা ক্লাবের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যশোমাধবের সংস্কৃতিবান মুসলমানদের লক্ষণীয় ভুমিকা ছিল। ডেমুরা গ্রামের মনফর খাঁ ছিলেন ধনী কৃষক— আমাদের তালুকদারির একটা অংশ ক্রয় করে তিনি তালুকদার হয়েছিলেন। তাঁর বড় ছেলে বি.এ. পাশ করে আমাদের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন— আমি তাঁর বাড়িতেও প্রাইভেট পড়তে যেতাম। সেমুরার আবাল হোসেন ডাক্তার বাবার বন্ধু ছিলেন। ঐ গ্রামের মুসলমান ছেলেরা দল বেঁধে আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে বারহাট্টা স্কুলে পড়তে যেতো— ওদের সঙ্গে আমাদের ভাব ও বন্ধুত্ব ছিল খুবই গভীর।
আরেকটি বর্ধিষ্ণু মুসলমানপ্রধান গ্রাম ছিল বিক্রমশ্রী। ঐ গ্রামের ঠাকুর পরিবার মাত্র কয়েক পুরুষ আগেও ছিল ব্রাহ্মণ—ঐ পরিবারের অন্যতম অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ঠাকুর, বাংলা একাডেমীর একজন অফিসার। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ডঃ ইন্নস আলীও ঐ গ্রামের সন্তান। তিনি জন্মেছিলেন এক চাষী পরিবারে জীবনে অভাবিত প্রতিষ্ঠা লাভের পর তিনি গ্রামের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন করেন, এমনকি পিতার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন না। এই কৃতী বিজ্ঞানীকে ঘিরে আমাদের এলাকাবাসীর মনে একই সঙ্গে গর্ব ও ক্ষোভ বিদ্যমান ছিল, এখনো আছে। কী কারণে তিনি তার জন্মভূমির প্রতি এহেন অভিমানমিশ্রিত ঘৃণা পোষণ করতেন বা এখনও করে চলেছেন তা আমার জানা নেই।
♦–♦–♦
‘গুণ’ পদবীটা একটু ব্যতিক্রম ধরনের। আমাদের পূর্বপুরুষ নিজেদের কায়স্থশ্রেণীর হিন্দু বলে দাবি করতেন। বাবা কাকার কাছে শুনেছি আমাদের পূর্বপুরুষ বর্গীর হামলার সময় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে পালিয়ে পাণ্ডববর্জিত পূর্ববাংলার প্রত্যয়ান্ত নিম্নাঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। আরব্য রজনীর গল্পের মতো— নিজেদের সম্ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্যই আমাদের বাবা-কাকারা এই গল্পটি বানিয়েছিলেন কিনা জানি না। এটা ঠিক, বর্ধমান খুব দূরের নয়-বর্গীর হামলার ব্যাপারটা সত্য । বারহাট্টার নিকটবর্তী কালিকা, আধ মাইল দক্ষিনে গড়মা এবং প্রায় মাইল দক্ষিণে অবস্থিত কাশতলা এই তিনটি গ্রামে গুণদের বাস।
শিক্ষাদীক্ষা এবং ধনবলে কালিকার গুণরাই ছিল শীর্ষে। কালিকার মোহিনী গুণের সাত পুত্রের একজন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। ক্ষিতিন্দ্রমোহন ছিলেন নামকরা ডাক্তার। বিলেত থেকে এফ আর সিএস পাস করে এসে তিনি কলকাতার নীলরতন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করতেন। অতীন্দ্রমোহন গুণ ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক। পঙ্কজমোহন গুণ ছিলেন ই পি সি এস। তাঁদের এক ভাই অতসীমোহন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহকুমা হাকিম হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মালতীকাকার (পঙ্কজমোহন) কাছে শুনেছি, একটা অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের উপর বক্তৃতা দেবার সময়ই তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারানোর ব্যাপারটা প্রথম ধরা পড়ে। পাগল হয়ে যাওয়ার জন্যই কাকিমা অতসীকাকাকে ত্যাগ করেছিলেন, নাকি দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণেই কাকা পাগল হয়েছিলেন; তা জানবার উপায় ছিল না। কালিকার বিরাট প্রাচীরঘেরা দরদালান সমৃদ্ধ বাড়ির ভিতরের একটি নির্জন ঘরে আমাদের ওই পাগল কাকাকে বন্দী করে রাখা হতো। অনেকেই তাঁকে দেখতে যেতো। চমৎকার স্বাস্থ্য, চওড়া কপাল, গৌরবর্ণও দীর্ঘদেহী অতসিকাকার মুখভর্তি দাড়ি ছিল। শান্ত অবস্থায় তিনি যখন কলকাতা থেকে আসা স্টেটসম্যান পত্রিকার পাতায় নিমগ্ন থাকতেন, তখন তাকে রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতোই মনে হতো। কিন্তু প্রায়ই তিনি উন্মাদের মতো আচরণ করতেন। শরীরে প্রচন্ড শক্তি ছিল বলে তাঁকে তখন সামাল দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়তো। এজন্যেই এক-পর্যায়ে তাঁর হাতেপায়ে শিকলবেড়ী দেয়া হয়েছিল। স্নানের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল অনীহা, চারপাঁচজনে মিলে ধরাধরি করে তাঁকে পুকুরে স্নান করাতো। আমরা আমাদের কাকীমাকে কখনো গ্রামের বাড়িতে আসতে দেখি নি। কাকার একমাত্র কন্যাটিকে নিয়ে তিনি কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। আমি প্রায়ই ঐ কাকাকে দেখার জন্য কালিকার বাড়িতে যেতাম। তাঁকে দেখে আমার খুব কষ্ট হতো, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করতো কিন্তু সাহস পেতাম না। তিনি উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন, কারো সঙ্গেই কথা বলতেন না। উন্মত্ত অবস্থায় বন্দী সিংহের মতো গোঁ গোঁ করতেন এবং উত্তেজনায় ছটফট করতেন। পরে একসময় চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতের রাঁচি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়— ওখানেই তাঁর যন্ত্রণাদগ্ধ দুর্বিষহ জীবনের অবসান ঘটে।
গড়মা এবং কাশকলার গুণদের মধ্যে ঐ পর্যায়ের উচ্চশিক্ষিত কেউ ছিল না। কালিকার গুণরাই ছিলেন বাকি সকল গুণপদবীধারীদের গৌরবের কারণ। অবশ্য শিক্ষক হিসেবে গড়মা গ্রামের মণীন্দ্র গুণ, কাশতলার বড়োদাসুন্দর গুণ এবং শ্যামেন্দ্র গুণ মহাশয়ের খুব খ্যাতি ছিল। হীতেশ গুণ ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে খুব নাম করেছিলেন।
আমাদের বাড়িটা বড়-বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল শহুরে জীবনের স্বপ্ন চোখে নিয়েই যে নির্মাতারা এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন, তা সহজেই বোঝা যেত। বাড়ির সীমানাঘেরা ছিল কাটামেন্দির ঝোপ দিয়ে। পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার পরও নিয়মিতভাবে আমাদের বাড়ির সৌন্দর্যপরিচর্যার খাতে কিছু অর্থ ব্যয় করার রেওয়াজটি চালু ছিল। একদা এক ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট, গ্রাহাম সাহেব আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি আমাদের বাড়ি দেখে মুগ্ধ হন। মোহনগঞ্জের কংগ্রেস অফিসে অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে তিনি এসেছিলেন ময়মনসিংহ থেকে—এলাকার প্রথম এন্ট্রান্স পাস সরকারী কর্মচারী, আমার ঠাকুরদা রামসুন্দর গুণের নামের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল— সেই সূত্রেই তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। গ্রাহাম সাহেবের প্রশংসার হয়েছিল এই যে, আমাদের সাধ্য হ্রাস পাওয়ার পরও বাড়িটি সুন্দর রাখার ব্যাপারে আমার বাবা ও কাকার সাধের ঘাটতি ছিল না। প্রকান্ড কান্ডবিশিষ্ট দীর্ঘ পাম গাছ, বিলাতি সুপারির সুসজ্জিত ঝোপ, চিরসবুজ ঝাউ, দীর্ঘদেহী ইউক্যালিপটাস, কর্পূরবৃক্ষ আমাদের গন্ড-গ্রামের বাড়িটাকে দিয়েছিল এক পৃথক বৈশিষ্ট্য। আমাদের বাড়ির সামনের ফুলের বাগানটিতে নানারকমের বিরল গোলাপের চাষ হতো। গোন্ডিফ্লাওয়ার গাছে যখন ফুল ফুটতো সারাবাড়ি মৌ মৌ করতো তার গন্ধে। আমার বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে বাবার পৃথক হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওই ফুলের বাগান টি দৈন্যদশা শুরু হয় এবং পরিচর্যার অভাবে ক্রমশ বাগানটির অপমৃত্যু ঘটে। পরিচর্যা ছাড়া যে গাছগুলি বাঁচার শক্তি রাখে, সেগুলো শুধু মাথা তুলে সাক্ষীগোপাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাবাও কাকার মধ্যে আমাদের বাড়িটি ভাগ হয়ে যায়। আমাদের অংশে বাবা একটি ছোট্ট ফুলের বাগান করেন, তবে ফুল গাছের পাশাপাশি ঐ বাগানে তখন একইসঙ্গে কিছু অর্থকারী মৌসুমী শাকসবজি চাষ ও যুক্ত হয়। নিছক সৌন্দর্যচর্চার সাধ্য ক্রমশ লোপ পেতে থাকে। জমিদারি ও তালুকদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের উপরি- আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
❤ Support Us