সোনারপুরে সমবায় ব্যাংকের নামে ১০ কোটি টাকার দুর্নীতি, অভিযোগ গ্রাহকদের। পথ অবরোধ বাইপাসের কামালগাজিতে। মন্ত্রীর কড়া জবাব, কঠোর শাস্তি হবে অপরাধীদের

শনিবার লাঙলবেড়িয়ায় এই বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বারুইপুর এবং সোনারপুর থানার পুলিশ। পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়। তবে ওই ঘটনায় ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গ্রাহকেরা।

সারদা বা রোজভ্যালির মতো চিটফান্ড নয়। রীতিমতো সরকারি সমবায় ব্যাঙ্ক, সোনারপুর সমবায় সমিতিতে ১০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। এদিকে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় এই প্রসঙ্গে বলেছে, “এফআইআর করুক। যারা অন্যায় করেছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
সোনারপুর সমবায় সমিতিতে যারা টাকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চাষের কাজ করে, বাজারে মাছ বিক্রি করে কেউ আবার লোকের বাড়ি কাজ করে। তবে এর মধ্যে সামান্য একটা অংশের আমানতকারী চাকরিজীবীও আছেন।
শনিবার এই আমানতকারীরা কামালগাজি বাইপাসে রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে তাদের হঠিয়ে দেয়।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে সমবায় দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে সমবায় সমিতিতে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এল। শনিবার সোনারপুরের লাঙলবেড়িয়া অঞ্চল সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিরুদ্ধে অন্তত ১০ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের অভিযোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু করে গ্রামবাসীরা। কামালগাজি-বারুইপুর বাইপাস অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা দাবি করে, ‘‘কয়েক হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লুট হয়ে গিয়েছে। চেক দিলে সেই চেক বাউন্স হচ্ছে।এই নিয়ে একাধিক বার অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। স্থানীয় বিধায়ক, সমবায়মন্ত্রী, পঞ্চায়েত প্রধান, থানা সব জায়গায় জানান হয়েছে কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”

সোনারপুরের লাঙলবেড়িয়া অঞ্চল সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডে গ্রাহকদের অভিযোগ, গত ছয় মাস ধরে ব্যাঙ্কের মোট ৬,৩১৯ জন গ্রাহক তাঁদের জমানো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। ঋণ দেওয়ার নামে গ্রাহকদের অর্থ নয়ছয় হয়েছে বলে আমানতকারীরা অভিযোগ করছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। এ নিয়ে বিডিও অফিস থেকে শুরু করে মহকুমাশাসকের কাছে দরবার করেও গ্রাহকদের কোনও সুরাহা হয়নি। তাঁদের আরও অভিযোগ, অডিট করার নামে প্রহসন চলছে। সমবায়ের যিনি স্পেশাল অফিসার ছিলেন, সেই সৌগত চক্রবর্তীকে বদলি করা হয়েছে। তিনিই এই ‘ষড়যন্ত্রের মূলচক্রী’ বলে অভিযোগ করছেন বিক্ষোভকারীরা।
শনিবার প্রথমে গ্রাহকরা সমবায় অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে বারুইপুর কামালগাজি বাইপাস রোড অবরোধ করেন। এই ‘দুর্নীতির তদন্তে’ তাঁরা সিবিআই এবং ইডি তদন্তের দাবি করেছেন। এটা একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকরা এবার আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে শনিবার জানিয়েছেন।

এদিকে আলিপুরদুয়ারের মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে ৫০ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সিআইডিকে তদন্ত বন্ধ করতে বলে শেষ পর্যন্ত  সিবিআই এবং ইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।