Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • মে ২, ২০২৩

২০২৪ এর নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট তৈরির আহ্ববান মমতার। তৃণমূল নেত্রী জোটের বোঝা, কটাক্ষ অধীরের। বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুললেন সুজন

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
২০২৪ এর নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট তৈরির আহ্ববান মমতার। তৃণমূল নেত্রী জোটের বোঝা, কটাক্ষ অধীরের। বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুললেন সুজন

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে গদিচ্যুত করতে মঙ্গলবার সব বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশবাসীর প্রতি বার্তা দিয়ে বলেন, “২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্বাচন। মন কি বাতের নামে ঝুট কি বাত চলছে। কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৩টি করে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। উজালা গ্যাস সিলিন্ডার এখন আর মানুষ পাচ্ছে না। আমাদের লড়তে হচ্ছে মানি পাওয়ার, মাসেল পাওয়ার, মাফিয়া পাওয়ারের বিরুদ্ধে, একটা আগ্রাসী,ভয়ঙ্কর, সরকারের সঙ্গে। তাও আমরা বাংলার মানুষ ভয় করি না, মাথা নিচু করি না। দেশের আগামী নির্বাচন পরিবর্তনের নির্বাচন। ১২ বছর ধরে একটা মিথ্যার, সংহারের সরকার, দেখছি। যারা ইতিহাস বদলে দিচ্ছে, এনআরসি-র নাম মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। আমি বিরোধীদের কাছে বলছি, আসুন, সমস্ত বিরোধী শক্তি এক হই। সমস্ত বিরোধী শক্তি একত্রিত হলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পতন অনিবার্য।”

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আবেদন শোনার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন সেটা চতুর্থ শ্রেণির একজন ছাত্রও জানে। মমতা এখন বিরোধী জোটের সম্পদ নয়, বোঝা।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও মমতার এই আহ্বান নিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করেছেন। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপির কাছাকাছি চলে যাওয়ার যে মানসিকতা রয়েছে, অতীতে যা বহুবার প্রকট হয়েছে, তার নিরিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের বিজেপি বিরোধীরা বিশ্বাস করতে পারছে না। ইটা বাস্তব। তবে এর ফল ঘুরিয়ে হলেও বিজেপির শক্তি সঞ্চয়ে অক্সিজেন যোগাবে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের ধারণা।

আমরা এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় এই রকম ঐক্যের আহ্বান শুনেছি। মঙ্গলবার তিনি বিজেপি হঠাতে যে বিরোধী ঐক্যের ডাক দিলেন এই ডাক তাঁর মুখে নতুন ধ্বনিত হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্য থেকে বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। তারপর রাজ্যে ক্ষমতায় এসে তিনি এই কংগ্রেসকে শূন্যে পরিণত করেছেন, সাইনবোর্ডে পরিণত করেছেন। সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠকে হয় নামমাত্র উপস্থিতি তৃণমূল রেখেছে না হলে অনুপস্থিত থেকেছে। কংগ্রেসকে জাতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধিতায় ব্যর্থ বলে বারবার আওয়াজ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমন কী কুণাল ঘোষের মতো তৃণমূল মুখপাত্র পর্যন্ত রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকলেই যে রাজ্যের সব বিজেপি বিরোধী দল তাঁর ডাকে সাড়া দেবে সেটা নাও হতে পারে। তাছাড়া এই রাজ্যে বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে একযোগে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ লড়ছে। শাসক বিরোধী এই জোটের আন্দোলনকে প্রতিহত করতে যখন তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ আগ্রাসী হয়ে যায়, তুলনায় বিজেপির আন্দোলন, মিছিলে রাজ্যের পুলিশকে ততটা আগ্রাসী হতে দেখা যায় না। তার উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোটের সমীকরণ হচ্ছে যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সেই রাজ্যে সেই দল বিজেপি বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেবে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম, কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী হবে? কী হবে বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ? সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। তারা কেন নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি, সম্ভাবনা মমতার হাতে ছেড়ে দেবে?  আবার মমতার এই জোটের আহ্বানে যদি বিজেপি বিরোধী সব দল এক না হয় তাহলে ভোট ভাগাভাগিতে বিজেপি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঠিক এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে। তখন নো ভোট টু মমতা স্লোগান দেওয়া হয়েছিল কিন্তু মমতাকে ভোট না দিলে কাকে ভোট দিতে হবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তার ফলে লাভবান হয়েছে বিজেপি।

সম্প্রতি আমরা দেখেছি,  বীরভূমের সিউড়িতে বিজেপির এক জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি আসনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫টি আসনে বেঁধে দিয়েছেন।  তিনি বলেছেন, বাংলা থেকে ৩৫টি আসন পেলে ২০২৫ সালের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পড়ে যাবে। ওই সভায় তাঁর আরও দাবি ছিল, এটা হলেই  লোকসভায় অন্তত্য ৩০০টি আসন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসবে বিজেপি,আর নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন।

অমিত শাহ ওই বক্তব্যের পরই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা।  একের পর এক নেতা-মন্ত্রী টুইটে কিংবা সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেন, অমিত শাহ নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন। তৃণমূল নেত্রী অমিত শাহের এই বক্তব্যের পর তিনদিন ধরে নীরব ছিলেন। ৭২ ঘণ্টা পরই নবান্নে থেকে মুখ্যমন্ত্রী তোপ দাগেন অমিত শাহর বিরুদ্ধে।
আর এর পরেই রাজ্যে জোটের বার্তা নিয়ে আসেন নীতিশ কুমার , তেজস্বী যাদব। মমতা তাঁদের দুজনকে দু পাশে বসিয়ে বিজেপি বিরোধী জোটের আহ্বান জানান বিজেপি বিরোধী দলগুলির কাছে। আর ঠিক তার পর আজ, ২ মে, মঙ্গলবার মমতা আবার মা-মাটি-মানুষ দিবসের দিন নবান্ন থেকে ফের বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ার ডাক দিলেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!