- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ১৭, ২০২৫
অসম-অরুণাচলের সেনাঘাঁটিতে পরপর জঙ্গি হামলা, উত্তপ্ত উত্তর-পূর্বের সীমান্ত অঞ্চল

মধ্যরাত, ঘুমন্ত তিনসুকিয়া তখন নিস্তব্ধ। অখণ্ড নিস্তব্ধতা চিরে আচমকাই গুলির শব্দ। গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণ। সেনাঘাঁটির চত্বরে ছুটে বেড়াচ্ছে জঙ্গিদের ছায়া। অসমের তিনসুকিয়া জেলার কাকোপথার সেনাঘাঁটিতে বুধবার গভীর রাতে এক সশস্ত্র হামলায় জখম হলেন অন্তত ৩জন সেনা জওয়ান। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অজ্ঞাতপরিচয় জঙ্গীরা’ একটি চলন্ত গাড়ি থেকে আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে। ব্যবহার করা হয় গ্রেনেড লঞ্চার এবং স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র।
জওয়ানরা প্রথমেই সাবধানতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। আশপাশে বহু অসামরিক বাড়ি থাকায় সেনা পাল্টা হামলায় অত্যন্ত সংযত ছিল বলেই জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে কোনো দেরি না করে কড়া জবাবও দেওয়া হয়েছে বলেই সেনা সূত্রের দাবি। সেনাদের তৎপরতায় সন্ত্রাসবাদীরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পিছু হটতে বাধ্য হয়। ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় তারা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সেনাবাহিনী তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। গোটা এলাকা জুড়ে চলছে চিরুনি তল্লাশি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ফের ‘উলফা’-র মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রতিরক্ষা মহলে।
সেনা ও গোয়েন্দা সূত্রের মতে, এ হামলার পিছনে ‘উলফা’-র হাত থাকতে পারে। গত কয়েক বছরে ওই অঞ্চলে এই জঙ্গি সংগঠনের তেমন কোনো কার্যকলাপ চোখে পড়েনি। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, তিনকোনিয়া— ‘উলফা অধ্যুষিত অঞ্চল’ বলে পরিচিত, এলাকাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে শান্তই ছিল। তবে, সম্প্রতি ইন্দো-মায়ানমার সীমান্তে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন অল আউট’-এ ‘উলফা (আই)’-এর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন। গোয়েন্দাদের মতে, তারই বদলা নিতে এই হামলা। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার সকালে অরুণাচল প্রদেশের চাংলাং জেলার ২টি অসম রাইফেলস ক্যাম্পেও পরপর হামলার খবর মিলেছে। প্রথম হামলাটি হয় চাংলাং জেলার একটি কোম্পানি অপারেটিং বেসে।‘ ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড – খাপলাং ইয়ুং আং গোষ্ঠী’র জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জখম হয়েছেন ২ জন জওয়ান। পরে একই জেলার মানমাও এলাকায় অসম রাইফেলসের আরও একটি ক্যাম্পে হামলা চলে। পুলিশ সূত্রের দাবি, এই হামলা ‘উলফা’ ও ‘এনএসসিএন-কে ওয়াই (এ) -এর যৌথ অপারেশন হতে পারে।
একাধিক হামলার ঘটনায় উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অসম ও অরুণাচল প্রদেশের সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে ড্রোন এবং বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রতিরক্ষা সূত্রের বক্তব্য, ‘পিছু হটেছে জঙ্গিরা, তবে এলাকা পুরোপুরি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চলবে।’ সেনা সূত্রে আরো জানা গিয়েছে, আহত জওয়ানদের স্থানীয় সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাদের যে ছায়া কিছুটা হলেও সরে গিয়েছিল, ফের কি তা গাঢ় হতে চলেছে? পরপর এই হামলা সেই আশঙ্কাকেই যেন জোরালো করছে।
❤ Support Us