- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুলাই ২২, ২০২৪
পোশাক নিয়েও এবার ভেদাভেদ ! গুজরাটে আক্রান্ত দলিত যুবক

স্বাধীনতার পরও যে জাতিভেদ প্রথার ব্যধি ভারতবর্ষ থেকে দূরীভূত হয়নি তার প্রমাণ পাওয়া গেল গুজরাটে। তথাকথিত উচ্চবর্ণের পোশাক পড়ে সমাজমাধ্যমে ছবি পোস্ট করার ‘অপরাধে’ প্রহৃত হলেন একজন অটোচালক।
ঘটনা গত গুজরাটের সবরকন্ঠ জেলার সায়েবাপুর এলাকার। অজয় পারমার নামের ২৪ দলিত সম্প্রদায়ের একজন যুবক মাথায় পাগড়ি ও চোখে রোদচশমা পড়ে ইন্সটাগ্রামে ছবি পোস্ট করেন। সে ছবি এলাকার বেশ কিছু মানুষের নজরে পড়ে। তাঁরা ওই যুবককে মারধোর করেন। গত ১৭ জুলাই এই ঘটনা ঘটে। পরেরদিন ১৮ জুলাই অজয় থানায় এফ আই আর দায়ের করেন। সেখানে তিনি জানান দরবার সম্প্রদায়ের চার ব্যক্তি যথাক্রমে কৃপাল সিং রাঠোর, মনু সিং রাঠোর, হিতেন্দ্র সিং রাঠোর ও সুকল সিং রাঠোর তাঁকে মারধোর করেন। উল্লেখ্য দরবার সম্প্রদায়ের মানুষজন ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীভুক্ত। গুজরাট রাজ্যে একাধিক ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে। ওই চার যুবক নবনগর বাস স্ট্যান্ডের কাছে ওই অটো চালককে বেধড়ক মারধোর করেন বলে অভিযোগ। অজয় পারমার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই চার যুবক মারতে মারতে তাঁকে বলেন যে পাগড়ি ও সানগ্লাস পড়ার অধিকার একমাত্র দরবার সম্প্রদায়ের মানুষদেরই আছে। তাঁরা অজয়কে সমাজমাধ্যম থেকে ওই ছবি মুছে ফেলার জন্য জোর করতে থাকেন।
শুধু তাই নয় , আরও বেশ কয়েকজন মানুষের হাতে তিনি প্রহৃত হন। ঘটনাচক্রে , ওই গ্রামে অজয় পারমারের পরিবার একমাত্র দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত । অজয় সংবাদমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন, সংবাদ পাওয়া মাত্র তাঁর বাবা পুলিশে যোগাযোগ করেন। তবে পুলিশ গ্রামে এসে পৌঁছায় এক ঘণ্টা দেরীতে। হিম্মতনগরের সাব ইন্সপেক্টর সঞ্জয় গোস্বামী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্যে এমন ঘটনায় রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে চারিদিকে। তবে এই ঘটনা গুজরাটে নতুন নয়। গত বছর এমন ঘটনার সাক্ষী ছিল পশ্চিমের এই রাজ্য। গুজরাটের পালামপুর জেমার মোটা জেলায় দামি পোশাক ও সানগ্লাস পড়ার অপরাধে জিগরভাই চানুকা শেখালিয়া নামে এক দলিত যুবক রাজপুত সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের হাতে প্রহৃত হন।
ওই বছরে এক দলিত যুবক তাঁর মালকিনের কাছে বেতন চাইবার অপরাধে হেনস্থার শিকার হন। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন , তাঁর প্রাপ্য চাইবার অপরাধে মালকিনের পাদুকা মুখে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হয় ওই ২১ বছরের যুবককে।
গত বছরের জুনে, খাবারের অর্ডার দেওয়া নিয়ে তর্কের জেরে এক উচ্চবর্ণের হোটেল ম্যানেজার মারধোর করার পরে এক দলিত যুবক নিহত হন।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাটে এরকম একটি ঘটনা ঘটে । দলিত সম্প্রদায়ের এক যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার সময় চার ব্যক্তির হাতে হেনস্থা হন বলে অভিযোগ ওঠে।
উপরের এই সবকটি ঘটনা একটি বিষয়ে ইঙ্গিত করে, স্বাধীনতার ৭৬ বছর কেটে গেলেও, সংবিধান সম্প্রদায়গত সুযোগ সুবিধা প্রদান করলেও, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও ভারতবর্ষের বুকে দলিতদের ওপর অত্যাচারের মানসিকতা এখনও বিদায় নেয়নি। উচ্চ-নীচের ভেদাভেদ তার বিষাক্ত শিকড় বহুদুর বিস্তৃত করেছে। ভারতবর্ষের সাংবিধানিক প্রধানের পদ আলোকিত করছেন একজন আদিবাসী নারী।তারপরেও অতীতের সোনালী দিনের জম্বুদ্বীপ এখনও তার ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারেনি।
❤ Support Us