Advertisement
  • খাস-কলম দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪

অসমে ভুইফোঁড় ধর্মীয় সংগঠনের হুমকি, ১৫ দিনের মধ্যে মিশনারি স্কুলের খ্রিস্টীয় অভ্যাস ছাড়তে হবে। ফতোয়া পোশাকে। আর্চ বিশপের প্রতিক্রিয়া, আইনের সাহায্য নেব আমরা

বিপদ বাড়বে বৃহত্তর অসমিয়া জাতি সংগঠনের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অসমে ভুইফোঁড় ধর্মীয় সংগঠনের হুমকি, ১৫ দিনের মধ্যে মিশনারি স্কুলের খ্রিস্টীয় অভ্যাস ছাড়তে হবে। ফতোয়া পোশাকে। আর্চ বিশপের প্রতিক্রিয়া, আইনের সাহায্য নেব আমরা

মিশনারিদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্রিস্টিয় প্রতীক, অভ্যাস, পোশাক-আশাক বর্জনের ডাক দিয়েছে কটুম্ব সুরক্ষা পরিষদ নামের একটি অচেনা সংগঠন । ধর্মযাজক, নান ও খ্রিস্টান শিক্ষকদের তারা ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়ে বলেছে, ধর্মীয় পরিচিতির সমস্ত প্রতীক মুছে ফেলতে হবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণ থেকে ।

সুরক্ষা পরিষদের প্রেসিডেন্ট জনৈক সত্যরঞ্জন বরুয়া ৭ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, খ্রিস্টান মিশনারিরা স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধর্মান্তরিত করতে চাইছে। সংবাদ সংস্থার খবর, গুয়াহাটির আর্চবিশপ জন মুলাচিরা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ওঁদের হুমকি আমাদের অজানা নয়। আমরা বুঝতে পারি না, ওঁরা কেন প্ররোচনা তৈরি করেছেন । সংবাদ সংস্থাকে আর্চ বিশপ বলেছেন, এরকম প্রকাশ্য হুমকির বিরুদ্ধে আমরা আইনের শরণাপন্ন হব । খ্রিস্টধর্মাবলম্বী নেতারা ঠিক করেছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দ্বারস্থ হবেন ।

অসমে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ২‌.৩ শতাংশ। হিন্দু ও মুসলিমদের পরেই সংখ্যাগত দিক থেকে তৃতীয় বড়ো শক্তি । বিভিন্ন জনজাতি ও জনগোষ্ঠী, বিশ্বাসের নিরিখে খিস্টান হলেও, তারা বৃহত্তর অসমিয়া সমাজেরই অংশ। যে জাতিগঠন প্রক্রিয়া অসমের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, বিভাজন তৈরির চেষ্টা সে প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করে তুলবে এবং বৃহত্তর অসমিয়া জাতিগঠনের ধারাবাহিকতার সঙ্কট বাড়িয়ে তুলেছে ।

বিভিন্ন জনজাতি, চা শ্রমিক এবং আদি ভূমিপূত্র বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের অনেকেই খ্রিস্টান। বড়ো, কাছারি, অহোম, মিরি-মিসিং রাজবংশীরা ভাষিক পরিচিতিতে স্বতন্ত্র হলেও একসময় অসমিয়া সংস্কৃতি ও ভাষাকে নিজের মাতৃভাষা হিসেবে ঘেষণা করতে সংশয়বোধ করেননি। রাজনীতিতে এর সেরা দৃষ্টান্ত শরৎচন্দ্র সিংহ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বলতম দুই উদাহরণ বিষ্ণুরাভা ও জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়াল। জ্যোতিপ্রসাদ ছিলেন চা শিল্পের কারিগর। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দেশে ফিরে ব্যবসার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক মিশ্রধর্মী কর্মকান্ডে এবং মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের অসমিয়া রূপান্তরের কারিগর হয়ে উঠেছিলেন। বিষ্ণুরাভা কিংবা জ্যোতিপ্রসাদকে অসমিয়ারা কখনো ভিন্ন জনগোষ্ঠীর সদস্য ভাবেননি। বিভিন্ন জনজাতিকেও অসমিয়া সমাজ স্বভাষী ও স্বগোত্রীয়তার অন্তর্ভূক্ত করেছে। বাঙালি মুসলিমরা, যাঁরা প্রধানত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাও স্বেচ্ছায় অসমিয়াকে মাতৃভাষার গুরুত্ব দিয়েছেন। এভাবেই শত শত বছর জুড়ে বৃহত্তর অসমিয়া জাতিগঠন প্রক্রিয়ার ভিত্ তৈরি হয়েছে । এই ভিতে্ বারবার আঘাত পড়েছে। দেশভাগ, অসম আন্দোলন, নেলির গণহত্যা, বড়োল্যান্ডে আরোপিত হিংসা ও নির্মীয়মান অসমিয়া জাতিসত্তাকে বিভ্রান্ত করেছে বটে । এ বিভ্রান্তির সবশেষ এবং সংশায়াচ্ছন্ন চেহারা তৈরি করেছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। বিজেপির বিভিন্ন ছায়া সংগঠন বিভাজনের রেখাই শুধু চিহ্নিত করেনি, হিন্দু অসমিয়া, হিন্দু বাঙালি, হিন্দু জনজাতির সঙ্গা নিরূপন করে জাতি পরিচয়ের বাইরে ও ভেতরে সাম্প্রদায়িকতাকে ক্রমশ বড়ো করেছে ।

অসমিয়া ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তার সামনে এ এক ভয়ঙ্কর বিপদ। প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে দুভাবে । এক. নিখুঁত অসমিয়া জনগোষ্ঠী উগ্রজাতীয়বাদী স্বরকে চওড়া করতে পারে। দুই. বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় তাদের সাম্প্রদায়িক পরিচিতি টিঁকিয়ে রাখতে সাংগঠনিক মঞ্চ তৈরি করে নেতিবাচক কৌশলে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবে । যে আজগুবি কিংবা অচেনা সংগঠন মিশনারি পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খ্রিস্টের প্রতীক, ধর্মযাজক ও নানদের পোশাক আশাক বদলে ফেলার ডাক দিয়েছে, তারা কার সহোদর, কতটা সনাতন হিন্দুধর্মের দর্শন ও ভারতের মহাজাগতিকতার অনুসারী, এ নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ আছে। ভোটের আগে, তারা কেন উগ্রতা ছড়াতে চাইছে, প্রশ্নটি রহস্যময়, কিন্তু নিরর্থক নয়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!