- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুন ১২, ২০২৪
আধার পরিচয়েই ছাড়পত্র জামাই আদরে, নদীয়ার অজ গ্রামে আজব নিয়ম
ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত এক বাঙালি বাবু , এক গাল হাসি, এক হাতে মিষ্টির হাড়ি , অন্য হাতে একটি ইয়া বড় ইলিশ মাছ। জামাইষষ্ঠীর চিরপরিচিত ছবি। তবে জীবন্ত চিত্র সবসময় জীবনের সঙ্গে মেলেনা । যেমন মেলেনা নদিয়ার চর মেঘনার বাসিন্দাদের।
নদিয়া জেলার হোগলবেড়িয়া থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২০ নম্বর কাঁটাতারের গেট পেরোলে দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে চর মেঘনা গ্রাম। এ গ্রামের পশ্চিমে কাঁটাতারের বেড়া আর পূর্বদিকে মাথাভাঙা নদী। এই গ্রামের জামাইদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন কানে কানে বলে দেন, বিয়ে হোক বা জামাইষষ্ঠী , সঙ্গে করে মিষ্টি না আনলেও চলবে। কিন্তু আধার কার্ড না আনলে চোখে আঁধার দেখতে হবে এবং সেটা দেখাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কারণ গ্রামে , প্রবেশের ছাড়পত্র একটিই । সেটি হল সরকার প্রদত্ত আধার কার্ড। শুধু যাওয়া নয়, আসার দিনক্ষণও বিএসএফকে আগে থেকে জানিয়ে দিতে হবে।
শুধুমাত্র এটুকুই নয়, আঁধার কার্ডের সঙ্গে চেহারার সামান্য অমিল পেলেই আটকে দেবে সেনা। এত্তেলা পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট ‘শ্বশুরবাড়িতে ‘। তাঁরা এসে ‘জামাই শনাক্তকরণ’ করার পর তবেই নির্দিষ্ট ‘জামাই’কে নির্দিষ্ট ‘শ্বশুরালয়ে’ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেছেন, ‘কাঁটাতারের ও পারের বাসিন্দাদের এতে কোনও অসুবিধা হয় না। তবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় সামগ্রিক নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে অতিথি-অভ্যাগতদের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। আর কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
ভারতীয় ভূখণ্ডের অ্যাডভান্স পজিশনে অবস্থিত চর মেঘনা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম। ২০১৬-র আশেপাশে গ্রামবাসীরা ভারত-ভুক্তির আবেদন জানিয়ে তদানীন্তন বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি দিলে, তিনি এই গ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে গ্রাম ঘিরে থাকা কাঁটাতারের বেড়া এখনও পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়নি। সন্ধ্যার আঁধার নামলে, গ্রীষ্মে মাথাভাঙা নদী শুষ্ক হয়ে পড়লে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মহিষকুণ্ডি, জামালপুর থেকে বাংলাদেশি ডাকাতেরা প্রায়ই হানা দেয় গ্রামে। তখন অবশ্য পুলিশ বা সেনা কারোরই তৎপরতা চোখে পড়েনা। ওই অজ গ্রামের বাসিন্দাদের আধার, রেশন, প্যান সব ধরনের পরিচয়পত্র থাকলেও, তাঁরা যেন ‘নিজভূমে পরবাসী।’
❤ Support Us