- এই মুহূর্তে দে । শ
- এপ্রিল ১২, ২০২৩
নাট্যকর্মীর ওপর দুষ্কৃতী হামলা। অভিযোগের তীর শাসক দলের দিকে। প্রতিবাদে সরব কৌশিক,ঋদ্ধি ও বাদশা
নাট্যকর্মীকে হেনস্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র, ঋদ্ধি ও কৌশিক সেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সামাজিক প্রচার মাধ্যমে পোস্ট করেছেন ঋদ্ধি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতার দাবি, দোষীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অভিনেতা বাদশাও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
রানাঘাটের বিনপাড়া নিবাসী নিরুপম ভট্টাচার্য পেশায় একজন নাট্যকর্মী। সম্প্রতি ভারভারা রাও রচিত কসাই কবিতা অবলম্বনে একটি নাটক পরিবেশন করে তার দল। যা এলাকার শাসক দলের সমর্থকদের রোষানলে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে নিরুপম একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে । প্রচার করা হচ্ছে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা মাকে ডেকে খুনের হুমকিও দিয়েছে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, যে নাটক নিয়ে তাকে এত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে , তাঁর মূল বিষয়বস্তু রূপে এসে উঠেছে হাসখালি ধর্ষণের কথা। রাষ্ট্রর দমন-পীড়নের কথা নাটকটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাই শাসক দলের একাংশ যে এতে কুপিত হবেন তাতে সন্দেহ নেই। অভিযোগ সে কারণেই নিরুপমকে এতটা হেনস্থার শিকার হতে হল।
নাট্যকর্মীর ওপর আক্রমণের তীব্র ওপর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাদশা মৈত্র। তিনি বলেন, ঘটনাটিকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে কম বলা হয়। ছেলেটা থিয়েটারের মতো একটা সুস্থ সংস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আমাদের উচিত তাঁকে আরও উৎসাহ ও সমর্থন দেওয়া, যাতে সে ভালো করে কাজ করতে পারে। তা না করে যে কবিতা নিয়ে সে নাটকটা করেছে তা বন্ধ করার চেষ্টা করা হল। আমার মনে হয়, কোনও রাষ্ট্রের সমালোচনা কোনও নাটকে, সিনেমায়, কবিতায় থাকলে সেটা তো গণতান্ত্রিক অধিকার, সেটা যেকোনও ফর্মে উঠে আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, কোনোভাবেই শাসক দলের বা তার আশ্রিত কারও এই অধিকার থাকে না, গায়ের জোর বা মানসিকভাবে নির্যাতন করে শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার। এই ঘটনা শুধু ওর উপর আক্রমণ নয়, যাঁরা মুক্তমনে চিন্তা করছে রাষ্ট্র নিয়ে, শিল্প মাধ্যমে তাঁদের প্রকাশ করতে চাইছে তাঁদের সবার উপর আক্রমণ। তাই এটাকে কোনও ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত এবং অপরাধীদের অত্যন্ত দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
ফেসবুকে ঋদ্ধি নিজের দীর্ঘ পোস্টে লেখেন, নিরুপম ভট্টাচার্যের দোষ কী? সৎভাবে থিয়েটার করে, নিজের মতো করে থিয়েটারকে বদলানোর স্বপ্ন দেখে, সে তার নাটকে সত্যি কথা বলে। সেই জন্যই শাসকের কালো হাত টেনে ধরে তার কলার, ভেঙে দিতে চায় ডাকঘর (নিরুপমের নাট্য অনুশীলনের জায়গা)। কারণ ডাকঘরের বদলে আরও একটা ক্লাবঘর হলে সুবিধে অনেক, জমানো যাবে আরও কিছু চুরির টাকা, অশিক্ষা আর আর ডিজে চালিয়ে নাচ। আর সংস্কৃতি বরাদ্দ থাকবে শুধু তাদের জন্যে, যারা মহানায়ক উত্তমকুমার সম্মান আর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রথম দিনে নীল সাদা রঙের সামিয়ানার তলায় থাকবেন। নাহলেই মার, চোখ রাঙানি। আসলে রাজনীতি বরাবরই স্বাধীন মনের শিল্পীদের রগড়ে দিতে চায়। এই জঘন্য ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতেই হবে। নিরুপম ভট্টাচার্য নিরাপদ নন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্রেফ রাজনীতি করেন বলে যদি তার বাসস্থানের বাইরে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের রাস্তা অর্ধেক আটকে একটা আস্ত পুলিশ ফোর্স সঙ্গে দু’টো ট্যাঙ্ক যদি ২৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে নিরুপম ভট্টাচার্যকেও সুরক্ষা দিতে হবে, কারণ দু’জনেই মানুষ, তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়। ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন কৌশিক সেনও। নিরুপমকে স্বপ্নসন্ধানীর উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর ‘কসাই’ নাটকটি সেখানে মঞ্চস্থ করার অনুরোধ করেন।
❤ Support Us