- প্রচ্ছদ রচনা
- এপ্রিল ২৬, ২০২২
সুপ্রিম কোর্ট: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও গ্র্যাচুইটির সুবিধা পাওয়ার অধিকারী ।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন । উপভোক্তাদের সনাক্তকরণ, পুষ্টিকর খাবার রান্না করা , স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন এবং শিশুদের দেখভাল করার মতো কাজ এরা করে থাকে ।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করা হয় । প্রায় সময়ই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের তরফে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে । এবার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পাশে দাঁড়াল সুপ্রিম কোর্ট । সোমাবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, পেমেন্ট অব গ্র্যাচুইটি অ্যাক্ট ১৯৭২ অনুযায়ী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরও গ্র্যাচুইটি প্রাপ্য । বিচারপতি অজয় রাস্তোগি এবং বিচারপতি অভয় এস ওকার বেঞ্চ জানিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এবং সরকারের অঙ্গ হিসাবে কাজ করে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়কদের জন্য ১৯৭২ সালের আইন প্রযোজ্য কি না, তা জানতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল । এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। জেলা উন্নয়ন আধিকারিক এবং আরও দুই ব্যক্তি উক্ত বিষয়ে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন ।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়কদের গ্র্যাচুইটির আওতায় আনার দাবি উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সেই নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়কদের তরফে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। হাইকোর্টে মামলা খারিজ হয়ে গেলে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। যদিও গুজরাত সরকার তার বিরোধিতা করে পাল্টা আবেদন জানায়। আদালতে গুজরাত সরকারের দাবি ছিল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের গ্র্যাচুইটি দিতে গেলে রাজ্যের ঘাড়ে ২৫ কোটি টাকার অর্থনৈতিক বোঝা চাপবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি জানান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে কোনও ব্যবসায়িক লাভ নেই। এটি শুধুমাত্র একটি জনকল্যাণ প্রকল্প। সেটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। তাই গ্র্যাচুইটির প্রশ্ন ওঠে না।
কিন্তু সোমবার শুনানি চলাকালীন, গুজরাত সরকার এবং কেন্দ্রের সেই যুক্তি খারিজ করে দেয় আদালত। বিচারপতিরা জানান, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশুদের শরীরে পুষ্টি জোগানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়করা। ভবিষ্যৎ সমাজের ভিত গড়ার গুরুদায়িত্ব তাঁদের কাঁধে। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদে-সহায়কদের অংগঠিত ক্ষেত্রের আওতায় ফেলে তাঁদের সুস্থ জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। করোনার সময় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেও মনে করিয়ে দেয় আদালত।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সংবিধানের ৪৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা রাজ্যের বাধ্যবাধকতাগুলি কার্যকর করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তাই নিশ্চিতভাবেই আদালত জানিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের পদগুলি বিধিসম্মত। এঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন । উপভোক্তাদের সনাক্তকরণ, পুষ্টিকর খাবার রান্না করা , স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন এবং শিশুদের দেখভাল করার মতো কাজ এরা করে থাকে । বিচারপতি রাস্তোগি জানিয়েছেন, সময় এসে গেছে, এখন কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারকে যৌথ ভাবে ওঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়কদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করার উদ্যোগ নিতে হবে ।
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা । শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়করাও সুস্থ এবং নিরাপদ জীবনের অধিকারী। ভাল ভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে তাঁদেরও। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরির সুবাদে তাঁদেরও গ্র্যাচুইটি প্রাপ্য । এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একেবারে তৃণমূল স্তরে কর্মরত ২৫ লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়ক উপকৃত হবেন।
❤ Support Us