- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র স্মৃ | তি | প | ট
- জুন ৯, ২০২৩
শতবর্ষ পেরিয়ে প্রয়াত পিকাসোর স্বাধীনচেতা বান্ধবী চিত্রী ফ্র্যাঁসোয়া
১৯৪৮, পিকাসো এবং ফ্র্যাঁসোয়া
প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ফ্র্যাঁসোয়া জিলোর জীবনাবসান ঘটেছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন তিনি। ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার মাউন্ট সিনাই ওয়েস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। খবরটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে অরেলিয়া এঙ্গেল।
১৯২১ সালের ২৬ নভেম্বর প্যারিসে ফ্র্যাঁসোয়া জিলোর জন্ম। পাঁচ বছর বয়সেই শিল্পী হওয়ার বাসনা থেকে ছবি আঁকা শুরু করেন। পরে মা-বাবার ইচ্ছা অনুসারে আইন নিয়ে পড়াশোনা করলেও শিল্পের প্রতি আবেগ কখনো কমেনি। ১৯৪৩ সালে তার চিত্রকর্মের প্রথম প্রদর্শনী হয়। সেই বছর জগৎখ্যাত চিত্রকর পিকাসোর সঙ্গে এক রেস্তোরাঁয় মুলাকাত। পরিচয়ের পর পিকাসো নিজের স্টুডিওতে আমন্ত্রণ জানান তাঁকে। সেখান থেকে তাঁদের সম্পর্কের সূচনা ।
এরপর দুই চিত্রির যৌথ সংসারে জন্ম হয় তাঁদের দুই সন্তান ক্লদ ও পালোমার। স্বাধীন চেতা ফ্র্যাঁসোয়া একসময় সম্পর্কে ইতি টানেন পিকাসোর সঙ্গে।এপ্রসঙ্গে জিলো বলেছিলেন, নিজের ইচ্ছায় পিকাসোর সঙ্গে ছিলাম। নিজের খুশিতে এসেছি, যখন চাই তখন চলে যাবো।
একসময় তাঁদের চিত্র সম্পর্ক গ্রন্থবদ্ধ হয় ফ্র্যাঁসোয়ার কলমে। নাম লাইফ উইথ পিকাসো। বইটি ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়।শোনা যায়, বই প্রকাশ নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল পিকাসোর। এনিয়ে আইনের দারস্থও হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু প্রত্যেক মামলাতেই পরাস্ত হন পাবলো। তিনবারের পর হার মেনে নিজেই ফোন করেন প্রাক্তন প্রেয়সী জিলোকে, জানান অভিনন্দনও।এ পর্বের পর প্যারিস তো বটেই, নিউইয়র্ক ও লন্ডনের একাধিক গ্যালারি ও সংগ্রহশালায় জিলোর ছবি প্রদর্শিত হয়। এমনকি সে-সময় নিলামে ১৩ লক্ষ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়ে নতুন নজির গড়েছিল তাঁর আঁকা ছবি ‘পালোমা আ লা গিটার’।
১৯৭০ সালে মার্কিন চিকিৎসক জোনাস সালকে বিয়ে করেন জিলো।চলে যান ক্যালিফোর্নিয়ায়।দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় ফাইন আর্টস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। অধিকর্তার দায়িত্ব সামলেছেন । ১৯৮৩ সালে এখান থেকে অবসর নেওয়ার পর ভারত, সেনেগাল এবং ভেনিস ভ্রমণে যান।সেখানে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু স্কেচের বই প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর অপর একটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘ইন্টারফেস: দ্য পেইন্টার অ্যান্ড দ্য মাস্ক’। বিশ্বের পাঠকমহলে জনপ্রিয় হয়েছিল সে বই। নব্বইয়ের দশকে এবং চলতি শতকেরও প্রথম দিকেও অব্যাহত ছিল তাঁর শিল্পীজীবন। পুনর্জাগরণের ওপর বিভিন্ন সিরিজ-চিত্রকলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন ফ্র্যাঁসোয়া। তাছাড়াও তরুণ ও মহিলা শিল্পীদের জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন ।
গত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর শিল্লী জীবনের পথ চলা। একের পর এক চিত্রকল্প বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে তাঁর তুলিতে। চিত্রপটে অসামান্য প্রতিভার নজির রাখা ব্যক্তিত্ব সারা জীবনই পরিচিত হয়েছেন পাবলো পিকাসোর প্রেমিকা হিসেবে। প্রচারের সামনের সারিতে সেভাবে আসেনি তাঁর কাজ। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেও সে আক্ষেপ তাঁর কখনো মেটেনি। সেই অপ্রাপ্তি নিয়েই চলে যেতে হল ‘লাইফ উইথ পিকাসো’-রচয়িতাকে।
❤ Support Us