- Uncategorized দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
বাল্য বিবাহ আটকাতে আসাম সরকারের কড়া পদক্ষেপ। সাত দিনে গ্রেফতার ২৭৬৩। প্রশ্নের মুখে বিশ্বশর্মার প্রশাসনিক নীতি

বাল্য বিবাহ রুখতে আসাম সরকারের অদূরদর্শী কঠোর পদক্ষেপ। গত এক সপ্তাহে নাবালিকার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অভিযোগে ২৭৬৩ জনকে গ্রেফতার করেছে আসাম পুলিশ।
বাল্য বিবাহ সামাজিক ব্যাধি। পরাধীন ভারতে তো বটেই, স্বাধীন ভারতেও এ সমস্যার সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব হয়নি। এমন এক গুরুতর সমস্যার সমাধান ধারাবাহিক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে, জোর জবরদস্তি এ রোগের নিরাময়ে সচেষ্ট আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বাল্য বিবাহ এক সামাজিক অপরাধ। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে শিশু স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানকে প্রকাশ্যে এনে তাঁর মন্তব্য, অসমের ৬.২ লক্ষ মহিলার মধ্যে কৈশোরেই গর্ভধারণ করেন। সন্তান ও তাঁর মা উভয়ের জন্যই এ এক অশুভ ইঙ্গিত। তাই এই প্রবণতা আটকাতে যে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা সরকার নিয়েছে। আগামী দিনেও এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।
বেশ কয়েকবছর ধরে আসামে গর্ভবতী মেয়েদের সন্তান প্রসবকালে মারা যাওয়ার খবর আসছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মৃত মহিলাদের অনেকেই নাবালিকা। বয়স ১৪ থেকে ১৮-এর মধ্যে। পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে আসামে এমনই এক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ১৮ বছরের গর্ভবতী এক তরুণীর সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যু ঘটে। ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী ও তাঁর শ্বশুরকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিশ।তারপর থেকে যে সমস্ত এলাকায় নাবালিকা কিশোরীকে বিবাহের ঘটনা ঘটেছে সেই সমস্ত এলাকায় ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে পুলিশ। বহু পরিবারে বিবাহিত স্বামীরা গ্রেফতার হয়েছেন। বলপূর্বক বাল্য বিবাহ আটকানোর প্রচেষ্টায় বিপাকে পড়েছেন স্বামীর ওপর নির্ভরশীল মেয়েরা। নিজেদের অসহায়তা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তারা। যদিও পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য,এমন কোনো বিক্ষোভের খবর তাঁরা পাননি। তাঁরা জানিয়েছেন, অসহায় স্ত্রীদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে উদ্যোগী প্রশাসন। তাদের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে সরকার। এই লক্ষ্যপূরণে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ক্যাবিনেটের উপ কমিটি তৈরি করেছে আসাম সরকার, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী রনোজ পেগু।
গত মাসে আসামে বাল্য বিবাহ রুখতে বিশেষ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় অভিযান। গত সাত দিনে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায় নির্বিশেষে গ্রেফতার হয়েছেন ২০০০ এর অধিক মানুষ। বাল্য বিবাহকে গুরুতর সামাজিক সমস্যা স্বীকার করে নিয়েও তা রুখবার পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন সমাজকর্মীরা। তাদের বক্তব্য, মেয়েদের কেন অল্পবয়সেই স্কুল ছুট হতে তাঁর দিকে খেয়াল না রেখে শুধুমাত্র বিবাহিত ছেলেদেরকেই নিশানা করছে আসাম সরকার। আসামের ৮৬ শতাংশ মানুষ গ্রামের বাসিন্দা যাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়েদেরই দশ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ হয় না। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়স্ক এক তৃতীয়াংশ মেয়েদেরই বিবাহ হয় ১৮ বছরের আগে। তাদের ধারণা, যে স্তর পর্যন্ত শিক্ষা আসামের মেয়েরা পান তা তাদের বিবাহ ও পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিন্তু মেয়েদের শিক্ষালাভের দিকটিকে রাখা হয়েছে অবহেলিত। তাদের ধারণা, যথাযথ শিক্ষালাভের সুযোগ পেলে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার সমস্যার খানিকটা সুরাহা হবে।
আসাম সরকারের বলপূর্বক বাল্য বিবাহ বন্ধের সমালোচনায় বিরোধী শিবির। তাদের বক্তব্য বাল্য বিবাহ আটকানো প্রয়োজন, কিন্তু পদ্ধতি নির্বাচনে সংবেদনশীলতা থাকা প্রয়োজন। যে সমস্ত ছেলেরা ইতিমধ্যে বাল্য বিবাহ করেছে তাদের গ্রেফতার করায় সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন শুধুমাত্র স্বামীর উপার্জনের ওপর নির্ভর করে থাকা স্ত্রীরা। এমতাবস্থায় বাল্য বিবাহ আর নতুন করে যাতে না হয়, সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ, মত বিরোধীদের।
❤ Support Us