- Uncategorized এই মুহূর্তে দে । শ
- মার্চ ১৪, ২০২৪
অসমে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় আশ্চর্য চমক, করিমগঞ্জে হাফিজ, কাজিরাঙায় রেজলিনা, স্বভূমিতে গৌরব। অপ্রতিহত আজমলের পুর্ণজয়ের স্বপ্ন। বরপেটার তালুকে সিপিএম এর মনোরঞ্জন। সিএএ নিয়ে বিড়ম্বিত বিজেপি
প্রত্যাশার টানাটানি আর খুচরো উত্তেজনা শেষ। অসমের ১৩ লোকসভা আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল কংগ্রেস।উত্তর লক্ষীমপুরের প্রার্থীর নাম আপাতত স্থগিত। এটিও শীঘ্রই চূড়ান্ত হয়ে যাবে।১৪ আসনের মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ ডিব্রুগড় কেন্দ্রটি বরাদ্দ করেছে অসম জাতীয়তাবাদী পার্টির লুরিনজ্যোতি গগৈকে।তরুণ, কর্মঠ নেতা । স্থানীয় বাসিন্দা। এবার হাওয়া অনেকটাই অনুকূল কংগ্রেসের। প্রার্থী তালিকার সবচেয়ে বড় চমক, সর্বভারতীয় স্তরে পরিচিত আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী।কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন অভিজাত পরিবারের সন্তান। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। কয়েকশ বছর জুড়ে তাঁর পরিবার অবিভক্ত ও বিভক্ত করিমগঞ্জের বাসিন্দা। রক্তে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অবিভাজ্য স্রোত। ভোটে আগেও লড়েছেন, কিন্তু বরাকের করিমগঞ্জ আসন থেকে এই প্ৰথম।দলের প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন অবশ্যই মাস্টারস স্ট্রোক। বিভেদকামী, সংঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক শক্তিকে পরাভূত করতে হাফিজ রশিদকে প্রার্থী করা হোক, তা দলমত নির্বিশেষে প্রায় সব অংশের ভোটার চেয়েছেন। তাঁকে মনোনয়ন দিয়ে সামাজিক দাবি পূর্ণ করল কংগ্রেস। দলের ভেতরেও তাঁকে নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন ছিল না, গণ থেকে বিশিষ্ট, খুশী সব মহল। হাফিজের পরিচয় একমাত্রিক নয়।গুয়াহাটি হাইকোর্টের সেরা আইনজীবীদের অন্যতম।বাগ্মী।আন্তর্জাতিক স্তরের মানবাধিকার কর্মী। মেধাবী ছাত্র।প্রথমিক লেখাপড়া করিমগঞ্জে।পরে হাইলাকান্দিতে। প্রাক্তন কটনিয়ান।গুয়াহাটি আর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পড়িয়েছেন দেশে বিদেশে। অধ্যাপনা নাইজেরিয়ায়, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে। সামলেছেন শিলচর একে চন্দ ল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বার কাউন্সিলের কর্মসমিতির চেয়ারপার্সন কিংবা নয়া দিল্লির মানবোন্নয়ন উদ্যোগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর তৎপরতা মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে।প্রয়াত মইনুল হক চৌধুরী, গোলাম ওসমানি, জোৎস্না চন্দ, দেবকান্ত বরুয়া, সন্তোষমোহন দেব, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের পর দিল্লিতে অসম আর বরাকের যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছিল, হাফিজ রশিদ আহমেদের সম্ভাবনাময় নির্বাচন, সে ঘাটতিকে পূর্ণতায় রূপান্তরিত করতে পারে- সম্ভবত এ কারণে, বৃহস্পতিবার তাঁর নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই একতার আওয়াজে দাবি উঠল, করিমগঞ্জ হাইলাকান্দির ভূমিপুত্রকে এবার দেখতে চাই সংসদে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, কেবল হাফিজের মনোনয়নেই নয়, অসমে ঘোষিত ১৩ আসনের প্রার্থী তালিকার হিসেব নিকেষকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছে কংগ্রেস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এর ছেলে আর লোকসভায় দলের ডেপুটি নেতা গৌরব গগৈকে উজান অসমের জোরহাটে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁর আসন বদল হয়নি। নওঁগা কেন্দ্রে মনোনীত হয়েছেন প্রদ্যোৎ বরদলৈ। গুয়াহাটিতে মীরা ঠাকুর গোস্বামী। নতুন মুখ, দুঃসাহসী মহিলা। শিলচর সংরক্ষিত আসনে সোম্যকান্তি সরকার। লোকসভা ভোটে তিনিও এই প্ৰথম। বরপেটায় দীপ বয়ান। এ আসনে গত লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন সুবক্তা আবদুল খালেক। অনেকের ধারণা ছিল, নব সংরক্ষিত এ আসনের পরিবর্তে খালেককে দাঁড় করানো হবে ২৭ লাখ ভোটারের ধুবড়ি কেন্দ্রে। অজ্ঞাত কারণে, আব্দুল খালেক টিকিট পাননি। পেয়েছেন প্রাক্তনমন্ত্রী, নওগাঁর বাসিন্দা রাকিবুল হাসান। রাকিবুলকে এআইডিএফ এর বিক্রমশালী প্রেসিডেন্ট আর তিনবারের বিজয়ী সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে লড়তে হবে। আজমল দেশে বিদেশে পরিচিত ফিলানথ্রপিস্ট। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের কারিগর। তাঁর পরিবারিক সুগন্ধী ব্যবসা জগৎ বিখ্যাত। অসমে মুখে মুখে একটি কথা চালু আছে, হোজাই বুম্বাই দুবাই ছড়িয়ে আছেন আজমল, ছড়িয়ে আছে তাঁর পারিবারিক বাণিজ্য। পশ্চিম এশিয়া ছাড়া, ইউরোপ আমেরিকায়ও জমিয়ত এ উলেমার অন্যতম নেতার প্রভাব ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। অসমের ধর্মীয় ও ভাষিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার অর্জনের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তত দুই দশক আগে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই আর এআইইউডিএফের প্রতিষ্ঠা। সে সঙ্কল্পে এখনো অবিকল ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন রাজনীতিক। এরকম তেজস্বী আর দূরদর্শী সাংসদের সঙ্গে কীভাবে আর কতটা টক্কর দেওয়া সম্ভব, নঁওগার আদিপুত্র আর প্রধানমন্ত্রী রাকিবুলের এ নিয়ে সংশয় বিস্তর। প্রশ্নও অপ্রতুল নয়। আমরা নিছক পর্যবেক্ষক কিংবা দর্শক। ধুবড়ি থেকে যোজন যোজন আমাদের দূরত্ব। আমরা শুধু ঘুর্ণীয়মান পরিস্থিতির উল্লেখ করতে পারি।
সর্বজনবিদিত যে, বৃহত্তর অসমে লোকসভার আসন সংখ্যা ১৪।আপার অসমের ডিব্রুগড়, লক্ষীমপুর, মধ্যাঞ্চলের নওঁগা, গুয়াহাটি ভোটের লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিব্রুগড় থেকে বিজেপির হয়ে লড়বেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও এখানকার কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। অগপর লোরিন জ্যোতি গগৈকে প্রার্থী করে তাঁকে অনাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে দিয়েছে কংগ্রেস। আবার নবগঠিত কাজিরাঙা আসনে রোজলিনা তিরকে কে প্রার্থী করে চা শ্রমিকদের হাতের তলায় ফিরে আসার আবেদন জানিয়েছে। রোজলিনা সুরচি আর সুশিক্ষার সমাহার। লোকসভায় তাঁর উপস্থিতির দিকে তাকিয়ে থাকবে উত্তর আর দক্ষিণ অসমের মধ্যস্থলীয়, জাতীয় অভয়ারণ্যের ক্ষুদ্র বড়ো জনগোষ্ঠী সমূহ। কাজিরাঙা থেকে একটু দক্ষিণে এগোলেই ডিপো। ওখানকার কংগ্রেসপ্রার্থী জয়রাম ইংলেঙ্গ। দরং এ মহাদেব রাজবংশী, কোকরাঝাড়ে গৌরাঙ্গ মহেশ্বরী শোণিতপুরে প্রেমলাল। উত্তরলক্ষীমপুর কার বরাতে জুটবে, অনিশ্চিত এখনো।
❤ Support Us