- দে । শ
- মে ২০, ২০২৪
পেয়েছিলেন আধার বাতিলের চিঠি । ভোট মিটতেই কী বলছেন বর্ধমান পূর্বের এই মতুয়া গ্রামের বাসিন্দারা

ভানুমতী রায়, গৌরাঙ্গ সরকার, রতন বিশ্বাসরা মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভার এই তিন মতুয়া-ভোটার জানালেন, ‘ভোটটা মমতাদির দলকেই দিয়েছি। মোদি আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ভোটের মুখে ক্যা পাশ করে নানারকম তথ্য দিতে বলছেন। আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। এতদিন বাস করার পর যদি দেশত্যাগী হতে হয়, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।’ তারপর তর্জনীতে আঁকা ভোটের কালি দেখিয়ে জানালেন, ‘তবে দিদি (মমতা ব্যানার্জি) পাশে আছেন। এখানে সভা করতে এসে বলে গিয়েছেন, আমাদের কোনও দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। এ রাজ্যে ক্যা, এনআরসি চালু করতে দেব না।’ ‘দিদির প্রতি কৃতজ্ঞতা’ থেকেই কালনা, কাটোয়া, পূর্বস্থলী, জামালপুরের মতুয়া সম্প্রদায়ের সিংহভাগ লোকজন, বিশেষ করে মহিলারা বলছিলেন, ভোট দিয়েছি ঘাস-ফুলেই। ভোটদানকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের মহিলারা মনে করিয়ে দেন মমতাবালা ঠাকুরের রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণের ঘটনাটি। অভিযোগ, মমতাবালার হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নেওয়া আটকে দিয়েছিল বিজেপি সরকার। তারপর প্রশ্ন তোলেন, রামের নামে শপথ নিলে সমস্যা নেই। আর আমাদের আরাধ্য হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের নামে শপথ নিলেই সমস্যা? এই বিজেপির মতুয়া-দরদ? মতুয়া সম্প্রদায়ের বহু সদস্য কবুলও করলেন, উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে বিশ্বাস করে পদ্মফুলে ছাপ মেরেছিলাম। কিন্তু এবার যে ‘সেই ভুল করেননি’, তাও জানিয়ে দিলেন। মতুয়াদের মনের কথা, এই ভোট ছিল নিজেদের অস্তিত্ব আর অধিকার রক্ষার ভোট। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা এলাকায় মতুয়া ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। এইসব এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায়ের বহু বাসিন্দাদের কাছে আধার কার্ড বন্ধের চিঠি আসে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কও রয়েছে পূর্ণমাত্রায়।
পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা জুড়ে মতুয়াদের পাশাপাশি বহু তন্তুজীবীর বাস। এলাকার নসরৎপুর, নাদনঘাট, নিমতলা, শ্রীরামপুর, ধাত্রীগ্রাম-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার সিংহভাগ বাসিন্দার রুটি-রুজি হল তাঁত। ওইসব এলাকায় চক্কর দিয়ে ভোটের খবর যা মিলল, তাতে তৃণমূলের হাসি চওড়া হওয়ার কথা। সমুদ্রগড়ের পদ্মা চৌধুরি, ধাত্রীগ্রামের গৌর বসাকরা বলছিলেন, ‘মমতা দিদি আমাদের জন্য কী না করেছেন ! বিনা পয়সায় তাঁতযন্ত্র দিয়েছেন। উৎপাদিত সামগ্রী সরাসরি কেনার ব্যবস্থা করেছেন। বাম জমানায় মুখ থুবড়ে পড়া তাঁতশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন।’ সেইসঙ্গে কেন্দ্র সরকারের সমালোচনাও শোনা গেল ভোটকেন্দ্রে হাজির তাঁতিদের মুখে। বলছিলেন, ‘কেন্দ্র সরকারের ভুল নীতির কারণেই সুতো-সহ তাঁতের যাবতীয় সরঞ্জামের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই সরকার বদলানো দরকার।’ তবে বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের কথায়, ‘তৃণমূল নানাভাবে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। সন্ত্রাস করেছে। তবু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’
❤ Support Us