Advertisement
  • খাস-কলম দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • এপ্রিল ২৬, ২০২৩

গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, আঁচ পড়বে পঞ্চায়েত ভোটে

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, আঁচ পড়বে পঞ্চায়েত ভোটে

২০১৮- র পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভিত্তিতে আজকের বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির শক্তিকে মাপা ঠিক নয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে শাসকদলের সন্ত্রাস সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে পঞ্চায়েতে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। ২০১৮-র নিরিখে রাজ্যে বিজেপির শক্তি এখন অনেকটাই বেড়েছে। তবে সেই শক্তি যৌথ শক্তি কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।কারণ রাজ্য বিজেপি এখন বহুভাগে বিভাজিত।

২০১৮- পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে  লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে ১৮টি আসন পায় বিজেপি। তারপর ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় আসার দাবি জানালেও ফল প্রকাশের পর বিজেপির সেই দাবি অসারতাপ্রাপ্ত হয়। তবে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়ে রাজ্যে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়ে। কাজেই রাজ্যে বিজেপির শক্তি বাড়েনি, একথা প্রলাপসম ।

একদা তৃণমূলের সংগঠক,মন্ত্রী, একাধিক জেলার তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভেন্দু অধিকারী এখন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর বিজেপির শক্তি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর অন্তর্কলহের চোর স্রোতও বেড়েছে  গেরুয়া শিবির। আর এই আবহেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছে বিজেপি।

শুভেন্দু অধিকারী নিজের মতো করে দল পরিচালনা করছেন, এই অভিযোগ দলের অন্দরে। পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের তিন হেভিওয়েট শুভেন্দু অধিকারী,  দিলীপ ঘোষ এবং সুকান্ত মজুমদারের  আলাদা গোষ্ঠী রয়েছে। আদি আর নব্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন জনসমক্ষে। শাহ তাঁর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে এসে, নিউটাউনের হোটেলে যে কোর কমিটির বৈঠক করেছেন, সেখানে দলীয় কোন্দল ভুলে একযোগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই বৈঠকেই শুভেন্দু বিরোধী গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে নালিশ জানায়, দলে আলোচনা না করেই একতরফা ভাবে নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে !
অমিত শাহ অভিযোগ শুনেআবারও বলেছেন, সংগঠনগতভাবে মজবুত হয়ে,একসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে বঙ্গবিজেপির লড়তে হবে। বিজেপি সূত্রেই এই খবর জানা গেছে।

আগাম প্রার্থী দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে নন্দীগ্রামের হরিপুরে। নন্দীগ্রামের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন তাম্রলিপ্ত সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল। মেঘনাদ পাল শুভেন্দু ঘনিষ্ট,আর তাঁর নির্দেশেই তিনি ভোট ঘোষণার আগে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন বলে বিরোধী গোষ্ঠীর অভিযোগ।

মেঘনাদ শুধু প্রার্থী তালিকার ঘোষণাই থেমে থাকেননি, তিনি সেখানে সংখ্যালঘু মুখ হিসেবে মহিলা প্রার্থীও ঘোষণা করে দিয়েছেন।হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ১৫টি। তার মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতার বক্তব্য, “এই ৫ নম্বর অঞ্চলে বিজেপি অত্যন্ত সংগঠিত। সারা বছর এলাকার কর্মীরা মানুষের কাজ করেন,মানুষের পাশে থাকেন। তারই ফসল হিসেবে ১৪ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছি। এই ১৪টি আসনেই আমরা জয়ী হব।”

শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে প্রথম থেকেই বুঝিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে গেলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি, তাই রাজ্যে শাসক বিরোধী আন্দোলনে অত নিয়ম মেনে চলতে পারছেন না। দলের বিভিন্ন কমিটিতে আলোচনা করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত, প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার যে নিয়ম দলে আছে তাতে সময় নষ্ট হবে। তাতে আখেরে দলের ক্ষতিই হবে।

অন্যদিকে বিজেপিতে যাঁরা সংঘ পরিবার থেকে এসেছেন, তাঁরা  শুভেন্দুর এই “এখনই করতে হবে” নীতিকে মানতে নারাজ ।এতে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা। কিন্তু বঙ্গবিজেপির মুখ এখন শুভেন্দু। তাই আদি বিজেপি বা শুভেন্দু বিরোধীরা তাঁকে কিছু বলতেও পারছেন না।

এতো গেল দলের নেতাদের কথা। কর্মীদের অবস্থা প্রসঙ্গে এবার আসা যাক। বিজেপির সম্পর্কে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রায়শই একটা কথা বলেন, “বিজেপির একটা মণ্ডল কমিটির বৈঠক ডাকতে হলেও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে সদস্য খুঁজতে হয়।” এই কথাটা কতটা বাস্তব কতটা নয় তা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে। বিজেপি তাদের সংগঠন এই রাজ্যে বাড়াতে পেরেছে সেটা যেমন ঠিক তেমনই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথ আগলে রাখার, সবকটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সাধ্য বা সাংগঠনিক জোর যে গেরুয়া শিবির এখনও অর্জন করতে পারেনি সেটাও সত্য।

তাই নিয়োগ দুর্নীতি ও শাসক দলের অন্যান্য ত্রুটি নিয়ে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহারা টিভিতে, মঞ্চে তীব্রভাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু ৩৩৩৪টি পঞ্চায়েতে প্রার্থী খুঁজতে শুভেন্দু-দিলীপ-সুকান্তদের সমস্যায় পড়তে হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

পঞ্চায়েত ভোট এলাকা নির্ভর। রাস্তা,পানীয় জল, মাথা গোজার বাড়ি ইত্যাদি স্থানীয় দাবিদাওয়া নিয়ে নির্বাচন হয়। বঙ্গের গ্রামাঞ্চলে গিয়ে তৃণমূল কাজ করেনি বলে বোঝাবে তখন শাসকদল পাল্টা প্রচারে নরেন্দ্র মোদি সরকার ১০০ দিনের প্রকল্প, আবাস যোজনার অপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। পাশাপাশি যারা প্রতিমাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পায় তারা স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা হলেও তৃণমূলের কেন্দ্র বিরোধী কথায় আস্থাশীল।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয়, চেনা ও পছন্দের একটা গুরুত্ব আছে। সেখানেও বিজেপির স্থানীয় ও বুথ স্তরে ততটা মজবুত সংগঠন নেই। শুধু উচুঁতলার নেতাদের বক্তৃতার ঝাঁজে পঞ্চায়েত ভোট জেতা যাবে না। কারণ বাংলার নির্বাচনে “বুথ ক্যাপচার”, বলে একটা কথা আছে। তাই পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে লোকসভা পর্যন্ত সব নির্বাচনেই এই ফর্মুলা কাজ করে। বিজেপি কী পারবে পঞ্চায়েতে সব বুথ আগলে বসে থাকতে? সেটা করতে হলে রাজ্য বিজেপির যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হচ্ছে দলের গোষ্ঠী কোন্দলে রাস টানা, গ্রামে সংগঠন মজবুত করা। সেটা পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপি যত বেশি করতে পারবে ততই পঞ্চায়েতে তারা লাভবান হবে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!