Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ডিসেম্বর ২১, ২০২৩

হাইকমান্ডকে প্রদেশ বার্তা, বাংলায় জোট সমীকরণ কি, ঠিক করুক দল

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
হাইকমান্ডকে প্রদেশ বার্তা, বাংলায় জোট সমীকরণ কি, ঠিক করুক দল

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে বিজেপির বিরুদ্ধে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে লড়বে কি না সেই দায় বঙ্গ কংগ্রেস নেতৃত্ব সোজা হাই কমান্ডের উপরই ছেড়ে দিয়েছে। বাংলার কংগ্রেস নেতারা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধির সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে বিজেপিকে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ কি হওয়া উচিত সেই দায় শীর্ষনেতৃত্বের উপরই ছেড়ে দিয়েছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে তা যেন সম্মানজনক হয়, সেই শর্তও হাই কমান্ডকে দিয়েছে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্য স্তরে নয়, তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কথা বলুক হাই কমান্ড, এটাই বাংলার কংগ্রেস নেতাদের মত, সেই মত তাঁরা জানিয়েছেন খাড়গে ও রাহুলকে।  তবে সেই অর্থে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে হাতে হাত ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে সম্মত নয় সেটাও পাশাপাশি স্পষ্ট করে হাই কমান্ডকে অধীর রঞ্জন চৌধুরীরা জানিয়ে দিয়েছেন বুধবারের বৈঠকে। অধীর রঞ্জন চৌধুরী রাহুল গান্ধি,মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সাফ জানিয়েছেন, “বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চায় না, এর কোনও প্রয়োজন নেই।” তবে কংগ্রেস দলটা যেহেতু হাই কমান্ডের নির্দেশে চলে তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে নিজেদের বিরোধীতা জারি রেখেই পুরো বিষয়টি হাই কমান্ডের উপর ছেড়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।

বুধবার বৈঠকে একান্তই জোট না হলে বিজেপিকে হারানোর উপায় কি? তা বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে জানতে চান রাহুল গান্ধি। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ক্ষেত্রে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্বের মতও জানতে চান রাহুল গান্ধি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে তাঁরা যে সম্মত নয় সেটাও বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব রাহুল গান্ধিকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।  মঙ্গলবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে একাধিকবার সোনিয়া গান্ধি ও রাহুলের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই বুধবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহল। যদিও বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ প্রদেশ কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে ব্যর্থ হন অধীর রঞ্জন চৌধুরীরা। প্রদেশ সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা গরহাজির ছিলেন বৈঠকে। বর্ষীয়ান প্রদীপ ভট্টাচার্য, আবদুল মান্নান, সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী, অমিতাভ চক্রবর্তী বা সন্তোষ পান্ডেরা এই বৈঠক এড়িয়ে যান।

জোট নিয়ে বাংলা কংগ্রেসের মনোভাব জানতে বুধবার প্রদেশ নেতৃত্বকে ডেকে পাঠান মল্লিকার্জুন খাড়গে। সূত্রের খবর, বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই জানিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোটে তাঁদের আপত্তি আছে। কিন্তু একান্তই যদি জোট হয়, তাহলে সেই জোট যেন সম্মানজনক শর্তে হয়। রাজ্য স্তরে জোট বা আসন সমঝোতার ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসের কথা কখনই চলে না। হাইকম্যান্ড যা বলে তাই মেনে নিতে হয় প্রদেশ কংগ্রেসকে। এবারও সেই একই অবস্থানে এআইসিসি আছে। প্রদেশ নেতারাও বুঝতে পারছিলেন জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের জন্য লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাইছে হাইকমান্ড। তাই আগাম আলোচনা করেই বৈঠকে যোগ দেন অধীর রঞ্জন  চৌধুরী, দীপা দাসমুন্সিরা। কিন্তু পাছে তাল কেটে যায় তাই অবস্থানের বিরোধিতা করতে পারেন এমন কাউকে প্রতিনিধি দলে রাখা হয়নি। ফলে একাধিক শীর্ষনেতা বৈঠকে গরহাজির ছিলেন এই বৈঠকে। তবে মান্নান ও প্রদীপ ভট্টাচার্যকে বৈঠকে যোগ দিতে বললেও তাঁরা বৈঠকে ছিলেন না।

এই বৈঠকের ফল কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাবে বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকের যা গতিপ্রকৃতি ছিল তাতে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে জোট করতে কংগ্রেস হাই কমান্ড বলবে বলে মনে করছেন না প্রদেশ নেতৃত্বের একাংশ। কারণ বৈঠকে রাহুল গান্ধিকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে তাঁদের তীব্র আপত্তি আছে।
এই আপত্তির কারণ যে রাজনৈতিক সেটাও রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বুঝিয়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।

এই মুহূর্তে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তৃণমূলের যে সংখ্যক মন্ত্রী, বিধায়ক দুর্নীতির দায়ে জেলে আছেন তাতে স্বাভাবিক ভাবেই বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল যথেষ্ট বিপাকে আছে। এই জায়গাটাকে কাজে লাগাতে চাইছেন বঙ্গ কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে ২টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে বাকি আসনে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বাংলায় নিজেদের ক্ষমতা জারি রাখতে। কিন্তু কংগ্রেস হাই কমান্ড এই জিনিসটা না বুঝলে সেটা হবে বাংলা কংগ্রেসের পক্ষে সবচেয়ে বড় ক্ষতি, যে ক্ষতি আগামী দিনে আর পূরণ করা সম্ভবপর হবে না । কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই কংগ্রেসকে নির্বাচনের সময় কাজে লাগিয়ে পরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। ২০১১ -র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের সরকারের অবসান ঘটিয়ে সেই কংগ্রেসকে ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল খানখান করেছে। সাম্প্রতিক অতীতেও সাগরদিঘির বাম সমর্থিক কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক বায়রন বিশ্বাসকে ভাঙিয়ে তৃণমূলে নিয়ে আসার কাজ তৃণমূল সুচারুভাবে করেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়েছেন বায়রন বিশ্বাস। তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, বাংলায় কংগ্রেসকে তিনি ২টো আসন ছাড়তে প্রস্তুত। তার একটা কংগ্রেস বামেদের দিলে তাঁর আপত্তি নেই। মমতা চাইছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নিবাচনের আগে বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে হাওয়া বইছে তাকে প্রতিহত করতে কংগ্রেসকে কাজে লাগাতে। তাহলেই কংগ্রেসকে নামমাত্র ২টো আসন দিয়ে বাকি ৪০টি আসনে একক ভাবে তৃণমূল লড়তে পারবে, জয়ের রাস্তাও অনেকটা সোজা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কৌশল বুঝেই অধীর রঞ্জন চৌধুরীরা রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খাড়গেকে জানিয়েছেন, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে তাঁদের সম্মতি নেই, এবার যা করার করুক হাই কমান্ড। এখন দেখা যাক রাহুল-খাড়গেরা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে কোন রাস্তায় চলার নির্দেশ দেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!