- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ৮, ২০২৩
মহিলাদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য। ক্ষমা চাইলেন নীতীশ কুমার
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও নারী শিক্ষা নিয়ে বিধানসভায় “বিতর্কিত ও অপমানজনক” মন্তব্যের জেরে অবশেষে ক্ষমা চাইলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মঙ্গলবার তাঁর এই বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়ে। নীতীশের পদত্যাগের দাবিতে আওয়াজ তোলে বিজেপি। অবশেষে চাপের মুখে পরে নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেন নীতীশ কুমার। তিনি বললেন, “কাউকে আঘাত করার জন্য আমি এই মন্তব্য করিনি। আমার বক্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি সব সময় নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে আছি।”
বিধানসভায় বিহারের জনসংখ্যা সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন নীতীশ কুমার। অভিযোগ, তখনই মহিলাদের সম্পর্কে “অপমানজনক” মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি নীতিশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করে। অন্যদিকে এই ইস্যুতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। নীতীশের মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি। রেখা শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, “বিধানসভায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তা দেশের নারী সমাজের পক্ষে অবমাননাকর। অবিলম্বে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
গতকাল নীতীশের ওই মন্তব্যের পরই বিধানসভার সভাকক্ষের বাইরে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এক মহিলা বিধায়ক কান্নায় ভেঙে পড়েন বিধানসভা কক্ষের বাইরে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নেতারা নীতীশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন। এমন কি নীতীশকে মানসিক অসুস্থ বলেও বিজেপি নেতারা দাবি করেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় সবসময় বি গ্রেডের সিনেমার দৃশ্য ঘোরে বলেও কটাক্ষ করেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলিতে বিহারের মহিলাদের সন্তান ধারনের ক্ষমতা কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আগে এই রাজ্যের মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতার হার ছিল ৪.২ শতাংশ। বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ২.৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
তবে এই বিতর্কিত ইস্যুতে অবশ্য নীতীশ কুমারের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা নীতীশের জোট শরিক আরজেডির নেতা তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, ‘খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও কথা তিনি বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছেন মহিলাদের যৌন শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।” তবে চাপে পড়ে এই বিতর্কিত মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইলেন নীতীশ কুমার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই, যিনি বিহারের উজিয়ারপুরের লোকসভা সাংসদ , তিনি বলেছেন নীতীশ কুমার তাঁর “মানসিক স্থিতিশীলতা” হারিয়েছেন, পাশাপাশি নীতীশ কুমারকে সমর্থন করার জন্য উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকেও সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
নিত্যানন্দ রাই বলেছেন, “নীতীশ কুমার যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেটা মহিলাদের পক্ষে আপত্তিকর। তেজস্বী যাদবের বক্তব্যও আপত্তিকর। এর পরে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাঁর এখন রাজনীতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত।”
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও সমালোচনা করে বলেছেন, “বিধানসভা একটি পবিত্র স্থান, এটা মুখ্যমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত।”
ওয়াইসি বলেছেন, “তিনি বলতে পারতেন, মহিলারা যথেষ্ট শিক্ষিত হলে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কখন সন্তান প্রয়োজন। পরিবর্তে, তিনি একটি অনুপযুক্ত শব্দ এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।”
মঙ্গলবার বিহার বিধানসভায় হট্টগোল চলছিল, কারণ নীতীশ কুমারের সরকার জাত ভিত্তিক সমীক্ষার রিপোর্ট এদিন বিধানসভায় পেশ করেছে এবং তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী এবং অত্যন্ত অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ বাড়ানোর প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে বিদ্যমান সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে বিহারের সমস্ত পরিবারগুলির এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ, প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকার কম টাকা আয় বেঁচে থাকে এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের ৪২ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।.
❤ Support Us