- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মে ২১, ২০২৪
জগন্নাথকে ‘মোদি-ভক্ত’ বলেই জিভ কাটলেন সম্বিৎ। ক্ষমা চাইলেন প্রকাশ্যে। ক্ষুব্ধ নবীনের প্রতিক্রিয়া, জগন্নাথপ্রভুর লক্ষ লক্ষ ভক্তের আবেগে ঘা। অতিরিক্ত আত্মপ্রচারের নমুনা, বললেন রাহুল

‘গতকাল আমার একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। পুরীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রোড শোয়ের পর ,বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমি বাইট দিয়েছি। সব জায়গায় একটাই কথা বলেছি যে, প্রধানমন্ত্রী মহাপ্রভু জগন্নাথের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। কিছুক্ষণ পর, আরও একটি চ্যানেল আমার বাইট নিতে আসে। তখন প্রচণ্ড গরম, ভিড় ও চিৎকার চেঁচামেচিতে আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে যে, মহাপ্রভু জগন্নাথ প্রধানমন্ত্রীর একজন ভক্ত। এটা কখনই সত্যি হতে পারেনা। বিশেষ করে ঈশ্বর কখনও কোনো মানুষের ভক্ত হতে পারেননা। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য মহাপ্রভু জগন্নাথ এবং একাংশ মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি ।’
आज महाप्रभु श्री जगन्नाथ जी को लेकर मुझसे जो भूल हुई है, उस विषय को लेकर मेरा अंतर्मन अत्यंत पीड़ित है।
मैं महाप्रभु श्री जगन्नाथ जी के चरणों में शीश झुकाकर क्षमा याचना करता हूँ। अपने इस भूल सुधार और पश्चाताप के लिए अगले 3 दिन मैं उपवास पर रहूँगा।
जय जगन्नाथ। 🙏
ଆଜି ଶ୍ରୀ… pic.twitter.com/rKavOxMjIq
— Sambit Patra (Modi Ka Parivar) (@sambitswaraj) May 20, 2024
একথা বলেছেন বিজেপি মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র। সকালে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত ভিডিও তিনি পোস্ট করেছেন। পাশাপাশি লিখেছেন। গতকাল পুরীতে ছিল প্রধানমন্ত্রীর রোড শো। সেখানে সম্বিৎ পাত্র হঠাৎ বলে বসেন, মহাপ্রভু জগন্নাথ একজন ‘মোদি-ভক্ত’। তাঁর এই মন্তব্য দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরে সর্বত্র । তাঁর আলটপকা মন্তব্যের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন সম্বিৎ। প্রচণ্ড গরম, ভিড় ,চিৎকার এইসব কোনো অজুহাতকেই আমল দিচ্ছেন না ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। উগড়ে দিয়েছেন তাঁর ক্ষোভ , ‘মহাপ্রভু জগন্নাথ সমগ্র বিশ্বের প্রভু’ শিরোনাম দিয়ে শুরু করে বিজু জনতা দলের নেতা জানিয়েছেন, বিজেপির মুখপাত্রের মন্তব্য সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ জগন্নাথ ভক্তের আবেগকে আঘাত করেছে। রাজনীতি থেকে উপাস্যকে দূরে রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
Mahaprabhu Shree Jagannatha is the Lord of Universe.
Calling Mahaprabhu a bhakt of another human being is an insult to the Lord. This has hurt the sentiments and demeaned the faith of crores of Jagannatha bhaktas and Odias across the world.
The Lord is the greatest Symbol of…
— Naveen Patnaik (@Naveen_Odisha) May 20, 2024
সম্বিতকে লক্ষ্য করে কটাক্ষ ছুঁড়তে বিলকুল দেরি করেননি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি ।।বলেছেন ‘অতিরিক্ত আত্মপ্রচার।’ আম আদমি পার্টির সর্বোচ্চ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন , ‘সম্বিৎ পাত্রের মাত্রাতিরিক্ত অহংবোধ’ ও ‘ঈশ্বরকে অপমান করার মতো অপকর্ম।’
সম্বিৎ পাত্র যতই নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করার চেষ্টা করুন, নির্বাচনের আবহে তাঁর মন্তব্যে ব্যাপক অস্বস্ত্বিতে পড়ল পদ্ম শিবির। ওড়িশার প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে সম্বিতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত আনার জন্য অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে । কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বিজু জনতা দল — এরকম প্রায় সব বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ।কেননা , তাঁর সামনেই তাঁর অনুরাগে গদ্গদ হয়ে আবেগাপ্লুত মন্তব্য করেছেন সম্বিৎ পাত্র।
সম্বিৎ উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি , আইন তাঁর নখদর্পণে । তবু কী করে আচমকা মোদিকে জগন্নাথের ঊর্দ্ধে তুলে ধরলেন, তা ভাববার বিষয়। এটা কি নিছক আলটপকা মন্তব্য না সম্প্রতি খানিকটা আড়ালে চলে যাওয়া নেতার সম্মুখে ফিরে আসার প্রচেষ্টা। কেবল সম্বিৎ নয়, নানা স্তরে বিজেপির নেতারা কোথাও মানুষের ধর্মকে হেয় করছেন , কোথাও ধর্মের নামে বিদ্বেষ উগড়ে দিচ্ছেন, আবার কখনো তাঁদের অতি ভক্তি দুঃসময়ের দুর্লক্ষণ হয়ে উঠছে। ভারতীয় গনতন্ত্রে এই ধরণের ধর্মের নামে অধর্মচর্চা আগে কখনো দেখা যায়নি। লোকসভার গত দুই নির্বাচনে বিজেপির ভোট কাণ্ডারি নরেন্দ্র মোদিকেও এরকম ঝুঁকি নিতে দেখা যায়নি। ২০১৪ সালে যখন দেশজুড়ে ভোট প্রচারে বেরোলেন , তখন আজমীঢ়ের জনসভায় বলেছিলেন, আমি এক হাতে কোরান আরেক হাতে কম্পিউটার দেখতে চাই। ভোট প্রচারেও যথাসম্ভব সাম্প্রদায়িক ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন। ‘বিকাশ পুরুষ’ বলে তাঁর এক ধরণের আত্মতুষ্টি দেখা যায়। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এটাই ভারতবর্ষ। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একদা প্রচারক নরেন্দ্র আবার পুরনো ঘরানায় ফিরে যাচ্ছেন। দেশের প্রধান শাসকের অবাঞ্ছিত ভূমিকায় বিস্মিত বিশ্ব। তাঁর অনুগামীরাও তাঁর পথে হাঁটছেন। হাঁটার দ্রুত ভঙ্গি দলীয় দুর্যোগ আর আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠবে না তো ? ভারত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র শুধু নয়, প্রাচ্য চিন্তার ধারাবাহিক রূপকারও বটে। ভারতের আত্মায় ঘা পড়লেই বালুচরেও তরঙ্গ আর ঝড় উঠতে থাকে, আর সে ঝড় নির্মূল করে দেয় সমস্ত অপ্রত্যাশিত আবর্জনাকে। আঠারোতম জাতীয় নির্বাচনের মুহূর্তে , তলে , অতলে গণতন্ত্রের সঙ্কট রুখতে মহা ভারত আজ ঐক্যবদ্ধ। স্বপ্নে তার যাবতীয় দুঃস্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার । এই অঙ্গীকারকে যারা রোধ করতে চাইছে , তারাই কি ভয়ে কিংবা অতিভক্তিতে কিংবা ব্যক্তিস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে ভুলভাল উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। সম্বিৎ পাত্র এই ঘরানার ট্যালেন্ট কিনা , তা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। আমরা নিছক মন্তব্যহীন নীরব দর্শক মাত্র।
❤ Support Us