- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মে ২২, ২০২৩
বজবজে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত ৪, গ্রেফতার ৩৪, উদ্ধার প্রচুর বাজি ও বাজি তৈরির মশলা

রবিবার ভর সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। এই ঘটনায় মৃত ৪, গ্রেফতার ৩৪, উদ্ধার প্রচুর বাজি ও বাজি তৈরির মশলা। রাজ্যে পর পর বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ও মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে বিরোধীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ভানু বাগের বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর রবিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে বাজির কারখানায় বিস্ফোরণ। এই নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে দুটি গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে। একটি গোষ্ঠী বেআইনি বাজি তৈরির বিরোধিতা করছে আর একটি গোষ্ঠী এই কাজকে সমর্থন করে ঘটনাস্থলে প্রবেশের পথে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি।
রবিবার বজবজের চিংড়িপোতা গ্রামে এই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে ওই দিনই ৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সন্ধ্যায় সেখানকার একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে এই তিন জনের। এক জন গুরুতর আহত অবস্থায় বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জানা গিয়েছে তাঁরও মৃত্যু হয়েছে সোমবার সকালে। এর ফলে এই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
এই বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর স্থানীয় মানুষ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুলিশ সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণের ঘটনা ও তার পরের পরিস্থিতি এগরার বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এই বিস্ফোরণের ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে পুলিসে তৎপরতা শুরু চিংড়িপোতা গ্রামজুড়ে। পুলিস বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কেজি বাজি, বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে এ পর্যন্ত ৩৪ জনকে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর পুরুষরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। ওই গ্রামে কমবেশি অধিকাংশ বাড়িতেই বাজি তৈরি করা হয় বলে জানা স্থানীয় কিছু মানুষের অভিযোগ। অধিকাংশ বাজি প্রস্তুতকারকের কোনও লাইসেন্স নেই বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২১ মার্চ দৌলতপুর মেইন রোড লাগোয়া পুটখালি এলাকায় একটি বাড়িতে ঠিক একইভাবে বাজি বিস্ফোরণ হয়েছিল। সেবারও তিন জনের মৃত্য হয়। এসেছিলেন দমদল মন্ত্রী সুজিত বসু। কিভাবে সব ব্যাবসায়ী ও নির্মাতাদের এক ছাতার তলায় এনে নিরাপত্তা ও অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থায় জোর দেওয়া যায়, তা থানা ও পৌরসভাকে খতিয়ে দেখার পরামর্শ সেই সময় দিয়েছিলেন সুজিত বসু। তবে সেই নির্দেশ স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর করেনি।
বজবজের এই ঘটনায় বিস্ফোরণের পর গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বাড়ছে। তারা বলছেন, একেকটা ঘটনা ঘটে, মানুষ মারা যায় , তারপর পুলিশের সক্রিয়তা বাড়ে। এদিকে গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ অভিযোগ করছে, সংবাদ মাধ্যম ঘটনা সঠিক ভাবে তুলে ধরেনি, তাই পুলিস এই গ্রামে অতিসক্রিয় হয়ে অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনাটি সঠিক ভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপিত হয়নি বলে এলাকার একটা বড় অংশের মানুষের অভিযোগ। আর তার জেরেই সোমবার সকাল থেকেই গ্রামে ঢোকার রাস্তা অবরোধ করেছেন গ্রামবাসীরা। সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের গাড়িও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে গ্রামবাসীদের এই প্রতিরোধের মধ্যেই ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিসের অ্যাডিশনাল এসপি অর্ক বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাজি বাজেয়াপ্ত করার কাজ চলছে। তুবড়ি, চকলেট, চরকা, রকেট, সেল, তারাবাতি, রংমশাল সহ প্রচুর বাজি ও বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বার বার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এতো স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে পুলিশ ও প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছে বিরোধীরা।
❤ Support Us