- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ৬, ২০২৩
কামদুনিকাণ্ডের রায় : ফাঁসির আসামির মুক্তি ! খালাস আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত , রায় শুনে ক্ষুব্ধ মৃতার পরিবার ও বান্ধবীরা

সময়টা ২০১৩ সালের ৭ জুন। উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ওই দিন ঘটেছিল নৃশংস এক ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা। এই ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল সারা রাজ্য। সেই কামদুনি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় শুক্রবার ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের রায়ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, নিম্ন আদালতে আমৃত্যু জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে বেকসুর খালাস পেলেন। এদিকে আদালতের এই রায় জানার পর আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কামদুনি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল।
২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছাত্রীকে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। এই ঘটনার আগে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ড ঘটেছিল। নির্ভয়াকাণ্ডের প্রতিবাদের ঢেউকে সম্বল করে কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদের ঢেউ উঠে। উত্তাল হয় সারা রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কামদুনি পৌঁছে দ্রুত এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সাজা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার আগে থেকেই দোষীদের চরম সাজার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামদুনি সফরের সময় তাঁর সামনে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল। শুক্রবার রায় ঘোষণার পরে মৌসুমী বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব। নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেব।’’
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এর পরে ঘটনার তদন্তের ভার যায় সিআইডি-র ওপর। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয় ন’জনের বিরুদ্ধে। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বা ব্যাঙ্কশাল কোর্ট-এর বিচারক সঞ্চিতা সরকার দোষী ছ’জনের শাস্তি ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। বাকি তিন অপরাধী শেখ ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করের হয় আমৃত্যু জেলের সাজা। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি এবং নুর আলিকে।
এই মামলা থেকে ১৪ জন সরকারি উকিল সরে যান। এদিকে মৃতার বান্ধবী টুম্পা কয়াল বলেন, “রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা ছিল না এই মামলায় দোষীরা সাজা পাক। আমার বান্ধবীকে ধর্ষণ করে তাঁর দুটো পা টেনে ছেড়ে ফেলা হয়। এর পরেও দোষীরা মুক্তি পায় কী ভাবে? এই দোষীরা এবার সমাজে বেরিয়ে যে আবার এই নৃশংস ঘটনা ঘটাবে না তার গ্যারিন্টি কোথায়?” ধর্ষিতা ও মৃতার আয় এক বান্ধময় মৌসুমী কয়াল রায় ঘোষণার পর বলেন, “সরকারি আইনজীবী টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। না হলে দোষীরা মুক্তি পায়?” এদিকে মৃতার ভাই বলেন, “আমরা এই মামলা চালাবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ আমাদের বের করে দেয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভালোও আইনজীবীর মাধ্যমে এই মামলার আবার তদন্ত চাই।”
❤ Support Us