রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারির পর কানাডা ৪১ কূটনীতিককে দিল্লি থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সরিয়ে নিয়েছে

প্রতিটি দেশে কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যার সমতা বজায় রাখার জন্য নয়াদিল্লি কানাডাকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে তাদের ৬২ জন  কূটনীতিকের মধ্যে ৪১ জনকে সরিয়ে নিতে বলেছিল, অটোয়া তার হাইকমিশন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের কর্মীদের সরিয়ে দিয়েছে বলে  জানা গেছে। ভারত রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার হুঁশিয়ারির পর কানাডা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে  বলে খবর।

সি টিভি-র একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কানাডা তার বেশিরভাগ কূটনৈতিক কর্মীদের ভারত থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং তাদের হয় কুয়ালালামপুর বা সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত করেছে। কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বার্তা দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার কানাডার পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী মেলানি জোলির বক্তব্যের মধ্যে এই খবরটি এসেছে যে কানাডা সরকার কূটনীতিক কর্মীদের সংখ্যা হ্রাসের ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে জড়িত ছিল।

মেলানি জোলি বলেছেন, “আমরা ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করছি। আমরা কানাডিয়ান কূটনীতিকদের নিরাপত্তাকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং আমরা এই বিষয়ে ব্যক্তিগত স্তরে আলোচনায় জড়িত থাকব, কারণ আমরা মনে করি যে কূটনৈতিক কথোপকথনগুলি যখন ব্যক্তিগত পর্যায় আলোচনায় থাকে তখনই সেই আলোচনা সর্বোত্তম হয়।”

এই পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে, ভারত-কানাডা সংঘাতে ইতি পড়ার কোনও লক্ষণ তো নেই-ই, বরং দিনে দিনে তিক্ততা বেড়ে চলেইছে। খালিস্তানপন্থী শিখ নেতার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত-কানাডা সংঘাত শুরু এবং তা এখনও জারি আছে। সেই আবহেই এবার কানাডাকে ভারত থেকে ৪১ জন কূটনীতিককে দেশে ফেরাতে বলা হল। এই মুহূর্তে ভারতে কানাডার ৬২ জন কূটনীতিক রয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তাঁদের মধ্যে থেকে ৪১ জনকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়ে দিল দিল্লি।

দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, ১০ অক্টোবরের মধ্যে ওই ৪১ জনকে সরিয়ে না নিলে, তাঁদের কূটনৈতিক রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া হবে। এই রক্ষাকবচের আওতায়, এক দেশের কূটনীতিকরা অন্য দেশে বিশেষ রক্ষাকবচ পেয়ে থাকেন, যার আওতায় তাঁদের গ্রেফতার করা যায় না। মামলা দায়ের করা যায় না তাঁদের বিরুদ্ধে। কানাডার কূটনীতিকদের সেই রক্ষাকবচই তুলে নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দিল্লি। তাই ১০ অক্টোবরের মধ্যে তাঁদের সকলকে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রক বলেছে যে কূটনৈতিক উপস্থিতিতে সমতা চাওয়া হয়েছে।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, “কূটনৈতিক সমতা বজায় রাখা নিয়ে আলোচনায় আমরা ভারতে কানাডার কূটনীতিকদের বা কূটনৈতিক উপস্থিতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপের কারণে আমরা আমাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক উপস্থিতিতে সমতা চেয়েছি।”

তিনি বলেন, “কানাডার কূটনৈতিক উপস্থিতি বেশি থাকায় আমরা অনুমান করব যে এই সংখ্যাটি হ্রাস পাবে।” গত মাসে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে অভিযোগ করেন, যে ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্টরা শিখ-পন্থী খালিস্তানি কট্টরপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জার  হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে, এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। ট্রুডোর অভিযোগের পর দুই দেশ একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কারও করেছে। ভারতও কানাডার অভিযোগকে “রাজনৈতিকভাবে চালিত” বলে অভিহিত করেছে।