Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা বি। দে । শ
  • আগস্ট ৬, ২০২৪

বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে উদ্বিগ্ন নতুন দিল্লি।সংসদে বললেন জয়শঙ্কর

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নতুন দিল্লি। হাসিনার গন্তব্য অনিশ্চিত। ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নয়, অভিভাসন আইন দেখিয়ে জানিয়ে দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। হিংসা অব্যাহত, পুড়ছে বঙ্গজননীর দেহ আর আত্মা। ২দিনে নিহত প্রায় ২০০। বিমানবন্দরে গ্রেফতার সদ্যপ্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। আটক প্রযুক্তি মন্ত্রী

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে উদ্বিগ্ন নতুন দিল্লি।সংসদে বললেন জয়শঙ্কর

রাজ্যসভায় ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার বলেছেন, শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। তিনি সাহায্য চেয়েছিলেন, ভারত পাশে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার উপর সবসময় নজর রাখছে নতুন দিল্লি । গোড়া থেকেই ভারত আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান দাবি করে আসছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ আর দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে আটকে পড়া ৯০০০ ছাত্রছাত্রীসহ ১৯০০০ ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য নয়াদিল্লি বাংলাদেশের বর্তমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা সরকারের পাশে আছেন, পাশে থাকবেন । প্রতিবেশী নিকটাত্মীয় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। নতুন দিল্লি শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে কিনা, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি জয়শঙ্কর। দীর্ঘদিনের কূটনীতিক এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সবসময় খুবই কৌশলপ্রিয়। নন্দিত মন্ত্রী। এপর্যন্ত, কখনো আগবাড়িয়ে কিছু বলেননি। নিজের সীমারেখা সম্পর্কে খুবই সচেতন । সর্বদা সংযত, তীক্ষ্ণবুদ্ধির ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয় আশয় তাঁর নখদর্পনে।

ভারত অন্যদেশের ঘরোয়া মামলায় হস্তক্ষেপ করতে অভ্যস্ত নয়। নেহরুর আমল থেকে নরেন্দ্রমোদি পর্যন্ত সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিনপূর্ব এশিয়া হোক কোথাও ভারত তার ঘোষিত অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়নি।ইসরাইলে হামাসের আঘাতের পর নতুন দিল্লির সর্বোচ্চ স্তরের আলটপকা মন্তব্য নিয়ে আবছা ঝড় উঠল, তখন জয়শঙ্কর হঠাৎ হাওয়ার উষ্ণতায় জল ঢেলে দিয়ে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় অধিকার অর্জনের দাবিকে ভারত অস্বীকার করে না।তাঁর মতো পরমত সহিষ্ণু, সংযতভাষী, গুণী বিদেশমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ তখনো বিদেশমন্ত্রীর কূটনৈতিক ধর্মেকে হৃদয় দিয়ে, অঙ্গীকার দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, বিবেক দিয়ে আবৃত করে রাখছেন। তাঁর আচরণ আর হৃদমহিমা জনতা আমলের বিদেশমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ির স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশের বিএনপি জামাতের যৌথ ও জন্মগত ভারত বিরোধিতার উস্কানিতে ভারত আক্রোশী, পক্ষপাত দুষ্ট হতেই পারত। জয়শঙ্কর এরকম কোনো সুযোগকেই প্রশ্রয় দেননি।

শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, তা বলেছেন জয়শঙ্কর । এও বলেছেন, ভারত সরকার তাঁকে সময় দিয়েছে, তাঁর ভবিষ্যত কর্মসূচি কী হবে, তা জানাতেই। প্রসঙ্গত বলা জুরুরি, শেখ হাসিনা পালিয়ে আসেননি। তাঁকে পদত্যাগ করতে, দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। মুজিব কন্যা যখন পদত্যাগ পত্রে সই করেছিলেন, তখন তাঁর একপাশে গম্ভীরমুখ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকরুজ্জামান, অন্যপাশে আরেকজন ফৌজিকর্তা। দুজনকেই অধিবেষ্টিত পদে বসিয়েছিলেন মুজিবকন্যা। রাজনৈতিক আর পারিবারিক সঙ্কটের মুহূর্তে সদ্যপ্রাক্তন প্রাধানমন্ত্রীকে কী অসামান্য আচরণ উপহার দিলেন দুই সেনা নায়ক।

শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোন দিকে, তার কোনো ইঙ্গিত নেই। গুজব বিনোদনে মত্ত হয়ে যে যা পারে রটিয়ে দিচ্ছে। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ সরাসরি বলেছেন, তাঁর মা রাজনীতি থেকে সরে যাবেন । লন্ডনে যাচ্ছেন কিনা, সেটা অনিশ্চিত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছেন, ব্রিটেনের অভিবাসন আইন এর নির্দেশ, কোনো ব্যক্তিবিশেষকে ব্রিটেনে প্রবেশ করার আগে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, যদি অন্য কোনো দেশ সফর করেও ওই ব্যক্তি ব্রিটেনে আসেন, তাহলেও তাঁর আশ্রয়এর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। তার মানে, কী দাঁড়াচ্ছে, শেখ হাসিনাকে প্রচলিত আইনের  নিয়মে আশ্রয় দেবেনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দলছুট সদস্য ইউকে। ঝুলছে মুজিব-কন্যার ভবিষ্যত অবস্থান। তাঁর ব্যাপারে আগ্রহী নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ। পশ্চিম এশিয়া অথবা উপসাগরীয় কোনো মুলুকেই সহজে তাঁর পাশে দাঁড়াবেন না। তাদের এজেন্ডা আলাদা। ‘অ্যাসাইলাম রুলস’ ভিন্নমুখী। শেখ হাসিনার পরবর্তী দিনযাপনের স্রোত কোনদিকে গড়াবে, তা অদুর ভবিষ্যতের হাতে ন্যস্ত। মানবপ্রকৃতি রক্তস্নাত দেশের পরীক্ষিত এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম সেরা রাজনীতিককে কোথায় আশ্রয় দেবে, তা অনিশ্চিত। ইতিহাস সাক্ষী, ক্ষমতার আসন থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিত্বকে, নিজের ভুল বুঝে ফিরিয়ে নেয় হতাশ গণসত্তা। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব নয়। বাংলাদেশকে যে হৃদয়দানে সমৃদ্ধ করেছে তাঁর ব্যক্তিস্বরূপ, তা দীর্ঘদিন ভুলে থাকা মানব মনের সাধ্যের বাইরে ।

১৯৭৫ সালে, শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর, তাঁর আদর্শকে, তাঁর জাতি তৈরির মহিমাকে নির্মূল করে দিতে চেয়েছিল, বিভ্রান্তের নির্বোধ রাজনীতি। পারল না, দেশে-বিদেশএ চর্চিত গৌরব নিয়ে মৃত্যুর ২১ বছর পর ফিরে এলেন বাঙালি জাতিসত্তার প্রথম রাষ্ট্রীয় জনক এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্রের চিরজাগ্রত শিষ্য। এই মুহূর্তে, টুঙ্গিপাড়ার কবরে শায়িত শেখ মুজিব পাশ ফেরাচ্ছেন, জাতির ভুল দেখে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তাঁর বিদেহী আত্মা। তাঁকে দেখতে হচ্ছে, তার স্বদেশ অশান্তির চূড়াস্পর্শ করছে।প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যু বাড়ছে, প্রিয় কন্যার দেশ ত্যাগের পর প্রায় দুই শতাধিক লাশ তাঁকে ডাকছে, ভস্মিভূত তাঁর স্মৃতি জড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডী, দুষ্কৃতীদের অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই, তাঁর স্মৃতিস্তম্ভের একাধিক ভাস্কর্য হাতুড়ি আর শাবলের আঘাতে ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন হয়ে উঠছে; নৈরাজ্য আর নৈরাজ্য চারদিকে, ঝোলা থেকে বেরিয়ে আসছে কালো বেড়ালরা, তাদের দর্পিত নথে আক্রোশ, মুখ ভঙ্গিতে ৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক দালালদের কবন্ধ। আক্রান্ত বাংলাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমের সর্বত্র আওয়ামি নেতাদের ঘরবাড়ি, স্থাবর সম্পত্তি। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রীরা। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে সেনারা, একইভাবে আটক করা হয়েছে শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীকে। যশএারে আওয়ামি লিগের সাংসদের হোটেল হঠাৎ জতুগৃহ, জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হল দেশিবিদেশি পর্যটকদের। প্রতিটি অঞ্চলেই বাড়ছএ হিংসা, খুন-খারাবি আর লুঠতরাজ। সেনা প্রধান উত্তাল ছাত্র-আন্দোলনের সুরাহা খোঁজার সুযোগ নিয়ে একবার হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করতে, দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন শেখ হাসিনাকে। অন্তবর্তী সরকার গঠনের আশ্বাস দিয়ে ৫ আগস্ট বলেছেন, সুন্দর আলোচনা হয়েছে, সুন্দরভাবে আমরা দেশ চালাব, একটিও গুল্ চলবে না, হিংসা আর দেশের সম্পত্তি নাশ বন্ধ হয়ে যাবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার সৌন্দর্যায়ন আর শান্তি বিন্যাসের কী অদ্ভূত নমুনা দেখছে উপদ্রুত বাংলাদেশ। সীমান্ত সিল, বহির্বাণিজ্য, ঘরোয়া বাণিজ্য বন্ধ। দ্রব্যমূল্যে আগুন। ঘরে আগুন। বাইরেও অপ্রতিরোধ্য আগুনের লেলিহান। কখন কী ঘটে, কে জানে? ৭৫ সালে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এবং ৭৯ সাল পর্যন্ত যেসব সামরিক অভ্যুত্থানের, যেসব হিংসার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে, তারই প্রত্যাবর্তন কি আবার ঘনিয়ে আসছে রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলায়– জীবনানন্দের রূপসী বাংলার মূল ভূমিতে, ভূমির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমিনে, মানব জমিনে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!