Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • মে ২৫, ২০২৪

দুর্যোগের মধ্যেও হাড়োয়ায় বিশাল জনসভা মমতার । কঠোর বার্তা দলের বিধায়ককে, বিজেপির সঙ্গে আঁতাত বরদাস্ত করব না

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দুর্যোগের মধ্যেও হাড়োয়ায় বিশাল জনসভা মমতার । কঠোর বার্তা দলের বিধায়ককে, বিজেপির সঙ্গে আঁতাত বরদাস্ত করব না

‘‌মোদি এখনই বিদায় হলে ভালো হয়। আরও ১০ দিন সময় আছে । ততদিন না থাকলে ভালো হয় । দেশ বেঁচে যায়।’‌ হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে হাড়োয়া সার্কাস মাঠে আজকের জনসভায় প্রথম থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমন শানান তীব্র ভাষায়। মমতা এদিন মোদির সমালোচনা করে বলেন, ’‌ওনাকে নাকি ঈশ্বর পাঠিয়েছে। উনি নাকি ২০৪৭ সাল পর্যন্ত থেকে দেশের কাজ করবেন। ‌ তিনি বলেন,‘ বিজেপি একটা মিথ্যাবাদী একটা ঝুটা দল, ধাপ্পাবাজ দল, একটা  জুমলা দল।  এই বিজেপিকে আমরা হারাবই, হারাব।’‌ মমতা বলেন, ‘‌সম্মানের সঙ্গে তৃণমূল বাংলায় বিজেপিকে হঠাবে এবং জিতে ইন্ডিয়া জোটকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।’‌

এদিন সভার মঞ্চ থেকে দলের বিধায়ক ঊষারানি মন্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। কার্যত তিনি সরাসরি মিনাখাঁর বিধায়ক ঊষারানি ও তাঁর স্বামী ব্লক নেতা  মৃত্যুঞ্জয় মন্ডলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কারণ, এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন না মিনাখাঁ বিধায়ক ঊষারানি মন্ডল ও তাঁর স্বামী। এতে মমতা ক্ষুব্ধ হন। ঊষারানির কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তুষ্ট মমতা প্রকাশ্য সভাতেই সাফ জানিয়ে দেন, ‘‌যারা আজকে মিটিংয়ে না এসে, তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ থাকবে, আর মিটিংয়ে আসবেন না। তার সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক  থাকবে না। আমি আজই বলে গেলাম আপনাকে নিয়ে দল চলবে না। ব্লকের নেতারা দলের কাজ দেখে নেবেন। যতক্ষন  ক্ষমা না চাইবে ততক্ষন ঊষারানি মন্ডলকে আমরা মানিনা। বিজেপির সঙ্গে যারা আঁতাত করে তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।’‌ তিনি বলেন,‘‌তৃণমূল নেতা তৈরি করে। একজন চলে যায়, কোটি লোক জন্মায়। আপনাদের মত লোক চাই না। আপনি আর আপনার স্বামী দলটাকে বেচে দেবেন?‌ আর কী মনে করেন আমরা সেটাকে  সমর্থন করব?‌ আমি যেমন অন্য দলের ব্যাপারে কথা বলি, নিজের দলের ব্যাপারেও বলি।’‌ এনিয়ে মুখ খোলেন বিধায়কের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল। তিনি বলেন, দিদিকে ভুল বোঝানো হয়েছে। হাড়োয়ার নেতা খালেক মোল্লা বিধায়ককে কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন। এদিন অপমানিত হতে হবে বলে সভায় যাইনি। আমরা কোন দল বিরোধী কাজ করি নি।’‌

এদিনের সভায় মমতা আগাগোড়াই ছিলেন আক্রমনাত্মক। বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিজেপি টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চায় বললেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‌এত টাকা !‌ লক্ষ লক্ষ টাকা ধরা পড়ছে। প্যাকেট করে নিয়ে যাচ্ছে। টাকা দিয়ে ভোট কিনবে। টাকা দিয়ে অনেককে কিনবে মনে করেছে ওরা।’‌ মমতা বলেন, ‘‌বিজেপি টাকা নিয়ে আসছে। টাকাটা নিয়ে নিন আর বলুন ১৫ লক্ষ টাকা  আগে দাও। তারপরে তোমাকে  ভোট দেব।’‌  এদিনের সভা উপচে পড়েছিল। নির্ধারিত সময়ের বেলা ২ টোয় সভা শুরু। উপস্থিত ছিলেন । মন্ত্রী সুজিত বসু, প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সরোজ ব্যানার্জি, বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, সপ্তর্ষি ব্যানার্জি , জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ, সাহানুর মন্ডল, কৃষক নেতা তরিকুল আলম বাপি, জেলা যুব সভাপতি  শমিক রায় অধিকারি, শ্রমিক নেতা কৌশিক দত্ত প্রমুখ। মমতা আসার আগে নেতারা বক্তব্য রাখেন। ওদিকে মমতা পৌঁছে যান ডুমুরজোলায় । শুরু হয় বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি। ডুমুরজোলা  থেকে হেলিকপ্টার ওড়ার মত পরিস্থিতি ছিল না। মমতা সেখানে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করেন। তাঁর হাড়োয়া আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তিনি সুজিত বসুর মোবাইলে বক্তব্য রাখেন। মাইক্রোফোনের সামনে মোবাইল রেখে জনতাকে মমতার ভাষণ শোনানো হয়। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন মমতা আর হাড়োয়ায় আসবেন না। অনেকেই সভা ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেন। পরক্ষনেই সুজিত বসু বলেন, দিদি আসার চেষ্টা করছেন। আবহাওয়া অনুকুল হলেই তিনি আসবেন। শেষ পর্যন্ত ঝুকি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি হোলিকপ্টার পৌঁছায় হাড়োয়ায়। এসেই তিনি বলেন, ‘‌আমি আগেই বক্তৃতা দিয়েছি। কারণ আকাশে প্রচন্ড মেঘ গর্জন চলছিল। তার মধ্যেও ঝুঁকি নুয়ে এসেছি ৫ মিনিটের জন্য।’‌  তিনি বলেন, ‘‌একটা বড় ঝড় আসছে । তাই আমাকে এক্ষুনি বেরিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমি হয়ত আর যেতে পারব না। আমি এখানে আসার জন্য ২ ঘন্টা টানা অপেক্ষা করেছি।’‌ মমতা বলেন, ‘‌দল আসল। ব্যক্তি আসন নেই। তাই দলকে জেতাবেন । আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি  জেতার পর হাড়োয়া মিনাখাঁ আসব। তিনি বলেন, ‘‌দু একটা কথা বলে যাই, এন আর সি করতে দেব না। ক্যা করতে দেব না। ইউনিফর্ম সিভিল কোর্ট করতে দেব না। তপশিলী, ওবিসিদের সংরক্ষণ কাড়তে দেব না। আদিবাসীদের সংরক্ষন কাড়তে দেব না।’‌ মমতা বলেন, ‘‌ভাই বোনেদের যাতে চাকরি হয় নজর দেব। কৃষকদের ভাতা দেব। সমুদ্রসাথীদের যারা ২ মাসের জন্য নদীতে যেতে পারে না তারা ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা পাবেন। কিষান ভাতা চলবে, সবুজ সাথী চলবে, স্মার্ট ফোন চলবে, স্বাস্থ্য সাথী চলবে, বিনা পয়সায় জল চলবে। লক্ষ্মীভান্ডার চলছিল চলবে, বিনা পয়সায় রেশন চলবে।’‌ তিনি বলেন, ‘‌আজকে আম্বেদকর সাহেবের  সংবিধানকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আদিবাসীদের সংখ্যা লঘুরা চিন্তা করবেন না। আমি ছিলাম, আছি, থাকব।’‌ মমতা বলেন,  ‘‌বিজেপি নেতাদের  এত সাহস সন্দেশখালিকে অপমান করে। ক্ষমতা থাকলে মানুষকে ভোট দিতে দাও। আজকে নন্দীগ্রামে আবার গুন্ডামি করেছে। খেজুরিতে আবার গুন্ডামি করেছে। কাল রাত্রি বেলা আমাদের একটা করমকে মহিষাদলে খুন করেছে। আমি এদের ছাড়ব না। রাজনৈতিক বদলা আমি নেবই নেব।’‌ তিনি বলেন,‘‌মোদি যা বলছে নো গ্যারান্টি ৪২০। বিনা পয়সায় গ্যাস বিদ্যুৎ ৪২০। চক্রান্ত করে, দাঙ্গা করে। এককেটা ধর্মের প্রতি আরেকটা ধর্মের  লাগিয়ে দেয়, আমরা চাই না। আমরা চাই বিজেপি দেশ থেকে বিদায় হোক। বিজেপি যাক, শান্তি থাক। দেশ ভাল থাক বিজেপি যাক। মানুষ থাক বিজেপি থাক। লুটেরা বিজেপি চোর। পাকা বাড়ি দিচ্ছে না। নো গ্যারান্টি । ১০০ দিনের টাকা দেয় না। আমরা আগামীদিনে ৫০ দিনের কর্মশ্রী তৈরি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ‘‌১১ লক্ষ বাড়ি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা দেব। আমরা মোদির ভিক্ষা চাই না। কারও কথায় কাউকে ভোট দেবেন না। কেউ কেউ টাকা নিয়ে ভোটের সময় রাজনীতি করে। আমরা করি না। যে করে দল তাকে মনেও রাখে না। এবং আমি পরিস্কার বলছি দল কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়। না দেবেও না। আগামীদিন ভোট ভাগাভাগি করবেন না। নিজেদের মধ্যে ভোট কাটাকাটি করবেন না। বিজেপিকে জিততে দেবেন না।’‌


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!