Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

জুনিয়র চিকিৎসকদের চারটি দাবি মানল রাজ্য , বিকেলের মধ্যেই নাম ঘোষণা নতুন নগরপালের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
জুনিয়র চিকিৎসকদের চারটি দাবি মানল রাজ্য , বিকেলের মধ্যেই নাম ঘোষণা নতুন নগরপালের

অবশেষে জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবির কাছে নতিস্বীকার রাজ্য সরকারের। তাঁদের দাবি মেনে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নগরপাল বিনীত গোয়েলকে। ডিসি নর্থসহ পুলিশের একাধিক শীর্ষকর্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। সরানো হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে। জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকের পর এমনই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ৪ দফা দাবি মেনে নিলেও স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণের দাবি মেনে নেয়নি রাজ্য সরকার।
লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি থেকে সরে এসে অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সোমবার সন্ধেয় বৈঠকে বসতে রাজি হন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্যের মুখ্যসচিব আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ইমেল পাঠিয়ে বিকেল ৪.‌৪৫ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কালীঘাটের বাড়িতে পৌঁছনোর কথা বলেন। ৫টা নাগাদ বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। জুনিয়র চিকিৎসকরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি ছেড়ে স্টেনোগ্রাফার নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ২জন স্টেনোগ্রাফারকে নিয়ে সন্ধে ৬টা ১৫ নাগাদ কালীঘাট পৌঁছন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সন্ধে ৬টা ৪০ মিনিট থেকে বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে বৈঠক চলে।

জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ডিজি রাজীব কুমার প্রমুখ। বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকরা নগরপাল, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার পদত্যাগের দাবি করেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৈঠক শেষে মোট ৪২ জন কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সই করেন। আজ মঙ্গলবার, বিকেল ৪টের মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে স্বাস্থ্যসচিবকে সরাড়োর দাবিতে এখনও অনড় তাঁরা।
জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনায় বসার জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিনন্দন। ওদের চারটি দাবির মধ্যে তিনটিই মেনে নিয়েছি। আলোচনায় উভয় পক্ষই খুশি। ওরা যা বলতে চেয়েছি, বলতে দিয়েছি। আমরাও আমাদের কথা আমরা বলেছি। ওঁরা যা বলতে চেয়েছেন, বলতে দিয়েছি। বড়দের সৌজন্য বেশি দেখাতে হয়। তাই ওদের বলতে দিয়েছি। সদর্থক বৈঠক হয়েছে। ওদের দাবি মতো সিপি, ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টের মধ্যে নতুন নগরপালের নাম ঘোষণা হবে। বিনীত গোয়েল নতুন নগরপালকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেবেন।’‌
বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ গোস্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অনড় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র চিকিৎসকদের বলেন, ‘‌সবাইকে সরিয়ে দিলে প্রশাসন চলবে কী করে?’‌ নগরপাল ও ডিসি নর্থকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়াও আরও রদবদল হতে পারে পুলিশে। সরিয়ে দেওয়া হতে পারে ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কেও। নগরপালকে সরানোর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌নগরপাল আগেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন, সেখানেই বদলি করা হচ্ছে। বিনীতকেও জানানো হয়েছে। পুলিশ সারাক্ষণ কাজ করে। তাঁদের দিকটাও দেখা উচিত। পুলিশেও বেশ কয়েকটি বদলি হবে। সব কথা মিনিটসে লেখা যায় না। বৈঠকের পর আমরা নিজেরাও আলোচনা করেছি।’‌

আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌তোমরা ফিরে গিয়ে জিবিতে আলোচনা করবে। সেটা ঠিকই আছে। মিনিটসেও তোমরা সই করেছ। এবার কাজে যোগ দাও। মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষ খুব অসুবিধায় আছেন। জল বেড়েছে। ডিসিসিকে বলার পরেও জল ছেড়েছে। বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। পুজো আসছে। এখন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বাড়বে। এই মুহূর্তে আপনাদের সাহায্য দরকার।’‌
বৈঠকে, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার নগরপাল ও জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। থাকবে গ্রিভান্স রিড্রেসাল মেকানিজম। হাসপাতালগুলিতে আলো, সিসিটিভি বসানো, রেস্ট রুম, ওয়াশ রুম তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতিও নতুন করে গঠন করা হবে। সকলের নিরাপত্তার জন্য কাজ করা হচ্ছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করছি। মানুষ মনে করে আপনারাই ভগবান।’‌
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে পৌঁছতে মাঝরাত পেরিয়ে গিয়েছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের। সেখানে উল্লাসে মেতে ওঠেন তাঁরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, ‘‌আমাদের দাবির কাছে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করল রাজ্য প্রশাসন। তবে আমরা এখনই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছি না। যতক্ষণ না সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। তবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে স্বাস্থ্যসচিবের ভূমিকা নিয়ে ও তাঁকে অপসারণ করার ব্যাপারে এখনও আলোচনার অবকাশ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, এই ব্যাপারে আলোচনা হবে।’‌


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!