Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • নভেম্বর ২৩, ২০২৩

লোকসভা নির্বাচনের মুখে সংগঠনের হাল ধরলেন মমতা, বাড়তি দায়িত্ব দিলেন সুব্রত বক্সীকে, পাশে টানলেন বঞ্চিতদের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
লোকসভা নির্বাচনের মুখে সংগঠনের হাল ধরলেন মমতা, বাড়তি দায়িত্ব দিলেন সুব্রত বক্সীকে, পাশে টানলেন বঞ্চিতদের

দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনে লোকসভা নির্বাচনের মুখে নিজেই ফের ময়দানে মমতা। বঞ্চিতদের পাশে টেনে বাড়তি দায়িত্ব দিলেন সুব্রত বক্সীকে। বঞ্চিতদের পাশে টানলেন। খুলে দিলেন দলের দরজা। বললেন, চোখের সমস্যায় এখন বিশ্রামে থাকবেন অভিষেক। মমতার এই কাজকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা।

অন্য দলের যাঁরা ভালো, তৃণমূলে যাঁরা যোগ দিতে চাইবেন তাঁদের দলে নিয়ে নেওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের মেগা বৈঠকে এই বার্তা দিলেন বঙ্গরাজনীতি তথা জাতীয় রাজনীতির অন্যতম নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি বললেন, “অন্য দলের যাঁরা ভালো, যাঁরা তৃণমূল দলে আসতে চাইবেন তাঁদের তৃণমূলে আসার ক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর অনুমতি নিতে হবে।” একই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ন্ত্রণের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দলে সবার কিছু না কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের আরও জাগ্রত হতে হবে। দিদি বলল, অভিষেক বলল বা ববি বলল, তবেই কোনও কিছু করতে হবে এমনটা একেবারেই নয়। আপনাদের নিজেদের দায়িত্ব আছে।” এর পরই তিনি বলেন, “অনেকে নতুন দায়িত্ব পেলেন। বাকিরা কি হারিয়ে গেলেন? না, তাঁদেরও দায়িত্ব আছে।” তৃণমূল নেত্রী এদিন ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন  নিজেকে কেউ যেন বঞ্চিত বলে মনে না করেন। দলে সকলেরই গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ তিনি একদিকে অন্যদলের থেকে যাঁরা ভালো তাঁরা তৃণমূলে যোগদান করার ক্ষেত্রে যেমন আহ্বান জানালেন তেমন দলের গোষ্ঠী কোন্দল নিরসনে নতুন ও পুরোনোদের মধ্যে ভারসাম্যের বার্তা দিলেন। বাস্তবে তিনি দলীয় সংগঠনকে লোকসভা নির্বাচনের আগে একদিকে ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি দলকে কলেবরে আরও বাড়িয়ে নেওয়ার প্রয়াস শুরু করলেন। আর এই কাজে সুব্রত বক্সীর উপর আবার দলের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি বললেন, “অভিষেকের চোখ থেকে রক্ত বেরিয়েছে। সে অসুস্থ। তাই তিনি আপাতত বিশ্রামে থাকবেন।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে মজবুত করাই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য সেটাই তিনি বুঝিয়ে দিলেন। পাশাপাশি সুব্রত বক্সীর উপর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আবারও দলের দায়িত্ব তুলে দিলেন। প্রসঙ্গত সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের ব্লকস্তরে পুরোনোদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তৃণমূলের অভ্যন্তরে কোন্দল প্রকট হয়েছে, সেটা বাইরেও বেরিয়ে আসছে। এদিকে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ ও লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি মমতা দি ছাড়া কারও সার্টিফিকেট চাই না। তৃণমূল যখন ক্ষমতায় আসেনি, তখন থেকে শ্রম দিয়ে, পকেটের অর্থ দিয়ে আমি দলটা করে আসছি। দল ক্ষমতায় আসার দু’বছর পর আমি দলে আসিনি। আমার বিরুদ্ধে দলের মধ্যেও বিরোধিতা করা হয়। কেউ যদি চায় সে দলের সবটা করবে করুক। তাই মমতাদি আমায় দলটা দেখার জন্য দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন, আমি বলেছি থাক, যে করছে করুক।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য সমর্থন করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই কুণাল ঘোষই ২০২১ সালে “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতা হিসেবে মানি না”, এই কথা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলার পর কুণাল ঘোষ তাঁর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথাটা সন্ধ্যার আগে বলেছেন না সন্ধ্যার পরে বলেছেন সেটা দেখতে হবে।” তখন কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যের পাল্টা কল্যাণ বলেছিলেন, “কুণাল ঘোষের মতো লোকের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।” আশ্চর্যের বিষয় হলেও সেই কুণাল ঘোষ এবার একই ইস্যুতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যযায়কে সমর্থন কর দিলেন। আবার ২৩ নভেম্বর তাঁর জেলযাত্রার ১০ বছর পূর্তিতে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে কুণাল লিখেছেন, “ঠিক দশ বছর আগে আজকের তারিখে বিনা দোষে চক্রান্তমূলকভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অনেকে ভেবেছিল আমি ধ্বংস হয়ে যাব। ঈশ্বরের আশীর্বাদে এখনও আছি। মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত থেকেও আইনে লড়ছি। জীবনযুদ্ধে লড়ছি। সাংবাদিকতা, লেখালিখি, রাজনীতিতে আছি, লড়াই করছি। রাজ্য, কেন্দ্র দুই সরকারের এজেন্সির বিরুদ্ধেই লড়াই চলছে।” তৃণমূলের এই কোন্দল নিয়ন্ত্রণ করতে যে অভিষেক পারবেন না, সেটা বুঝেই মমতা এবার লোকসভা নির্বাচনের তিন মাস আগে দলের রাশ হাতে নিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।
এই সব দেখে বোঝা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ভাবেই লোকসভা নির্বাচনের মুখে দলের ঐক্য নষ্ট হয় এমন কোনও কাজকে বরদাস্ত করবেন না,সেটা যেই করুন ।কারণ দলটা তিনি নিজে হাতে করে তৈরি করেছেন। তাই তিনি আবার দলকে একসূত্রে গেঁথে দিলেন, এটাই রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য। তাঁরা মনে করেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের শীর্ষ নেতা হতে পারেন। কিন্তু অভিজ্ঞতায় তিনি নবীন। এটা মমতা জানেন ও বোঝেন। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্লকস্তরে নেতৃত্ত্ব বদল করে অভিয়াসেক যে দলের মধ্যে কলহ বৃদ্ধির একটা রাস্তা খুলে দিয়েছেন সেটা বুঝেই মমতা দলের মধ্যে পদ থেকে বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ব্লকস্তরের দায়িত্ব না থাকলেও তাদের দলেরই অন্য পদে বসিয়ে দেবেন। লোকসভা নির্বাচনের তিন মাস আগে নিজের ঘর গোছাতে মমতার এটা একটা পরিণত এবং অভিজ্ঞ সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।
এদিন মমতা আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা করেছেন। সেটা হচ্ছে অভিষেকের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে এদিন মমতা বুঝিয়ে দেন, আপাতত বিশ্রামে থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দ্বিতীয়ত মমতা বলেন, “ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে দলের সমস্ত সাংসদদের নিয়ে তিনি ১০০ দিনের বকেয়া আদায়ের দাবি জানাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাইবেন। প্রধানমন্ত্রী সময় না দিলে তিনি তৃণমূল সাংসদদের নিয়ে রাস্তায় বসে পড়বেন। পুলিশ মারলে মারবে, তাতে তৃণমূলের শক্তি আরও বাড়বে।” প্রসঙ্গত ১০০ দিনের কাজের বকেয়া আদায়ের জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ ও বঞ্চিতদের নিয়ে দিল্লিতে ধর্ণা ও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সময় পাননি, এমনটি এই মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেননি। উল্টে পুলিশ তাদের সকলকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। কাজেই অভিষেকের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে তৃণমূলের ঘরে ফসল ওঠেনি। এবার ১০০ দিনের টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায়ের জন্য খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে আন্দোলন শুরুর হুঁশিয়ারি দিলেন ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে, সংসদ চলাকালীন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন সবেতেই তাঁর উপস্থিতি দলের গুরুত্বটাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়, যেটা তৃণমূলের আর করোও পক্ষে করে ওঠা সম্ভব নয়।

আমরা জানি, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতাদের বলতে শোনা যায়, যাঁরা দল ছেড়ে গিয়েছেন তাঁদের আর ফেরানো হবে না। বা অন্য দল থেকে কেউ আসতে চাইলে দরজা বন্ধ রাখবে ঘাসফুল শিবির। যদিও তৃণমূলে এই কথা কেউ রাখেননি। আমরা দেখেছি এই ঘোষণার পরেও তৃণমূলের উন্নয়নের শরিক হতে বিভিন্ন দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অভিষেক একাধিকবার বলেছেন, তৃণমূল দরজা খুললেন বিরোধী দলগুলি উঠে যাবে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, বৃহস্পতিবার কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের দরজা এক কথায় খুলে দিলেন? এর ফলে আবারও কি বাংলার মানুষ তৃণমূল বিরোধী শিবিরে ভাঙন দেখতে চলেছেন? আবারও কি বড় রকমের দলবদলের সাক্ষী থাকতে চলেছে বঙ্গ রাজনীতি। আর এই বাংলায় একসময় দল ভাঙিয়ে তৃণমূলে বিভিন্ন দলের নেতানেত্রী, বিধায়কদের তৃণমূলে নিয়ে আসার কাজটা সুচারু ভাবে করতেন মুকুল রায়। এবার কী মুকুল রায়ের জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুব্রত বক্সীকে বসিয়ে দিলেন !

কেন মমতার এই কৌশল? তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্লক স্তরে তৃণমূলে একাধিক রদলবদল হয়েছে। অনেক পুরোনো কর্মীকে দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক নতুন কর্মীকে দায়িত্ব দিয়েছে দল। এই পরিবর্তন নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা প্রকাশ্যে চলেও এসেছে। এই গোষ্ঠীকোন্দল ঠেকাতে নিজেই এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে কী নিজেই এবার ময়দানে নামলেন তৃণমূল সু্প্রিমো? এই প্রশ্নও করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব ঘোষণা করবেন জেনেই  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের সভায় যোগ দেননি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বৃহস্পতিবারের নেতাজি ইনডোরের মেগা বৈঠকের প্রধান বক্তা। সেখানে তিনি ভার্চুয়ালি বৈঠকে তাঁর মুখটা মাত্র দেখালেন, নিয়ম রক্ষার জন্য, এমন কি কিছু বললেন না পর্যন্ত।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!