Advertisement
  • এই মুহূর্তে বি। দে । শ
  • জুন ১৮, ২০২৫

জি৭ সম্মেলনের ফাঁকে ১০ ঘণ্টায় ১২ বৈঠক ! কানাডায় মোদির নজরকারা কূটনৈতিক তৎপরতা। ভাষণে উঠে এল সন্ত্রাস, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের অগ্রাধিকারের কথা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
জি৭ সম্মেলনের ফাঁকে ১০ ঘণ্টায় ১২ বৈঠক ! কানাডায় মোদির নজরকারা কূটনৈতিক তৎপরতা। ভাষণে উঠে এল সন্ত্রাস, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের অগ্রাধিকারের কথা

জি৭ সম্মেলনে ভারত ছিল অতিথি দেশ। কিন্তু অতিথির ভূমিকায় সীমাবদ্ধ না থেকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়ে উঠলেন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে। মাত্র ১০ ঘণ্টার সফরে তিনি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সারলেন ১২টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। কার্নে সরকারের আমন্ত্রণেই কানাডা সফরে গিয়েছিলেন মোদি। এই সম্মেলনের ফাঁকে মোদী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। আলোচনা হয় ভারত-ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে। বৈঠক শেষে মোদী জানান, ‘একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা সবসময়েই আনন্দের।’ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারের সঙ্গে তাঁর প্রথম বৈঠকটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুই দেশের মধ্যে চলতি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা, শিক্ষাক্ষেত্রে আদানপ্রদান এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে মতবিনিময় হয়।

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, ও নবীকরণযোগ্য জ্বালানি নিয়ে সহযোগিতার সম্ভাবনা। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ়, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে আলোচনা হয় কৌশলগত বাণিজ্য, মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো বিষয়ে। জি৭-এর আউটরিচ সেশনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। সন্ত্রাস দমন, এআই প্রযুক্তিতে যৌথ গবেষণা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দুই নেতা ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণ করেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল টানাপড়েনের। জাস্টিন ট্রুডোর আমলে খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদতের অভিযোগে নয়াদিল্লি-অটোয়া সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। তবে মার্ক কার্নে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দু-দেশই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আগ্রহ দেখায়। এই সম্মেলনের মঞ্চে সেই কূটনৈতিক বরফ গলেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মোদি বলেন, ভারত ও কানাডার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে ভারত আন্তরিক। কার্নে জানান, দুই দেশ জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কৃষি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে এগোতে চায়। জানা গিয়েছে, উভয় দেশ রাজধানীগুলিতে পুনরায় হাইকমিশনার নিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘উভয় দেশের সরকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে রাজি হয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আইনকানুন এবং সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ না করাই হবে মূল ভিত্তি।’

জি৭ সম্মেলনের মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যপক সরব হন প্রধানমন্ত্রী মোদি। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, কোনো দেশ সন্ত্রাসে সমর্থন করলে, তার মাশুল তাকে দিতেই হবে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্বিচারিতার অভিযোগও তুলেছেন মোদী। কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি, অথচ সন্ত্রাসে মদত দেওয়া দেশকে প্রশ্রয় দিই—এটা চলতে পারে না।’ গ্লোবাল সাউথের স্বার্থ রক্ষার কথা তুলে ধরার জন্যও জি৭ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি। জি৭-এর বাইরের দেশ হয়েও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আউটরিচ আলোচনায় ভারতকে নিয়মিত আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। এ বারের আলোচনায় পশ্চিম এশিয়ার অশান্তি, ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু সঙ্কট-সহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা করবার জন্য জি৭ দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘সন্ত্রাস মানবতার শত্রু। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলির একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।’

জি৭ সম্মেলন শেষে মোদী জানান, এই সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ। বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব নিতে প্রস্তুত। তিনি কানাডার জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, এমন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কূটনীতির দিশা নির্ধারণে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত ও কানাডা, দুই দেশই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই ভিত্তিতে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’ কার্নিকে সম্মেলনের আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী জানান, ‘২০১৫-র পরে ফের কানাডা সফরে এসে আমি আনন্দিত।’ জি৭ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটিয়ে, ভারতীয় সময় বুধবার ভোরে কানাডা ছেড়ে ক্রোয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন মোদি। তাঁর তিন-দেশীয় সফরের শেষ ধাপে ক্রোয়েশিয়ায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!