- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- মে ২৮, ২০২৪
ঘুর্ণি ঝড়ের পরেই বাড়বে তাপমাত্রা। বর্ষা কবে বঙ্গে ?
রেমালে রাজ্যে মৃত ৭। মিজোরোমে ধ্বসে প্রাণ হারালেন ১০

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুই বাংলায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে। প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে , গোসাবাতে প্রায় পাঁচশোর বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বাসন্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চারশোর বেশি বাড়ি। বহু মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টারে আস্তানা নিয়েছেন। ভাঙড় ২ ব্লক এলাকায় শতাধিক কাঁচা বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়। ভাঙড় ১ ব্লক এলাকায় প্রায় ১৬০টি কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। গাছ পড়ায় বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। পরে ভাঙড় ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে রাস্তা পরিষ্কার করা হলে আবার স্বাভাবিক হয় যাতায়াত। সন্দেশখালির বেশ কিছু জায়গায় রীতিমতো প্রভাব পড়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের। বেশ কিছু জায়গায় নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার সকালে সেচ দফতর বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করে।
ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। বহু জায়গা সোমবার পর্যন্ত অন্ধকারে ডুবে ছিল। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করা হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ দফতর সুত্রে জানানো হয়েছে। চাষবাসেরও ক্ষতি হয়েছে। এখন মাঠে ধান না থাকলেও গ্রীষ্মকালীন সব্জিচাষে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। নিচু এলাকাগুলি এখনও জলে ডুবে থাকায় চাষের ক্ষতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুর্যোগের জন্য রবিবার থেকেই বহু মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়। নদীবাঁধ লাগোয়া এলাকায় বাসিন্দাদের দ্রুত সরানো হয়। ডায়মন্ড হারবার মহকুমার ৯টি ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় স্কুলে খোলা হয়েছে ফ্লাড শেল্টার । সেখানে বাসিন্দাদের থাকার এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যানিং ২ ব্লক এলাকায় ১১৭টি ত্রাণ শিবিরে রাতের মধ্যেই প্রায় সাত হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
ঝড়ের দাপটে শহর কলকাতার অবস্থা ছিল যথেষ্ট ভয়াবহ। ঝড়ের দাপটে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। রবিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টির জন্য পথে যানবাহন ছিল যথেষ্ট কম। সকাল থেকে হাওড়া , শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। লাইনে জল থাকার জন্য এগোয়নি গাড়ি। রীতিমতো বিপর্যস্ত ছিল মেট্রো পরিষেবা । সোমবার সকালে পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের মাঝের ট্র্যাকে জল ঢোকার ফলে সাতসকালেই ব্যাহত হয় মেট্রো পরিষেবা।গিরিশ পার্ক থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল । পাশাপাশি চারচাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা বহু জায়গায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। বেশ কিছু জায়গায় বড় গাছ ভেঙে পড়ার দরুন তৈরি হয় তীব্র যানজট। নিত্যযাত্রীরা সমস্যায় পড়েন বহু ক্ষেত্রে। সরকারি বাস রাস্তায় চলেছে যথেষ্ট কম পরিমাণে। অ্যাপ ক্যাব ছিল সংখ্যায় অনেক কম। অটো টোটো প্রভৃতির অবস্থাও ছিল তথৈবচ। শহরের বহু এলাকা ছিল জলমগ্ন। কোথাও ভেঙে পড়েছে পুরনো বাড়ি, কোথাও ভেঙে পড়েছে গাছ। শহরে একাধিক ‘সেফ হাউস’ তৈরি করা হলেও মাত্র তিনটিতে দুর্গত বাসিন্দাদের রাখা হয়েছে। মোট ১৬৮ জন সেখানে ছিলেন। জল ঢুকেছে হাওড়ার রেল কোয়ার্টারে। সেখানে হাঁটু জলের মধ্যেই রান্নাবান্না ঘর গৃহস্থালি সামলাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কবে যে এই দুর্ভোগ মিটবে, সঠিক জানেননা বাসিন্দারা। ভোট আসে ভোট যায়। হাওড়ার জল যন্ত্রণা কমেনা।
জল যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলেনি হাসপাতালেরও । এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের সামনে হাঁটু জল জমে যায়। বাদ যায়নি রক্ত পরীক্ষা করার ঘরটিও। এস এস কে এমের কার্ডিওলজি বিভাগেও জমে যায় জল। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আবার দেখা গেল অদ্ভুত চিত্র। সেখানে এক রোগীকে পলিথিনে মুড়ে জরুরি বিভাগ থেকে এক্স রে করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে শীঘ্রই প্রবেশ করতে চলেছে বর্ষা। ফলে তারপর অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকার। ইতিমধ্যে আজকে শহরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ক্ষতিপূরণের দাবীকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতি আবার উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা দেখছে রাজনৈতিক মহল।
সারা দেশে ঝড়ের প্রভাবে তেলেঙ্গানায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। মিজোরামে পাথর খাদানে ধ্বসে মারা গেছেন ১০ জন।
রবিবার রাত থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলিতে শুরু হয়েছে তুমুল ঝড় বৃষ্টি। ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা , পটুয়াখালী ও ভোলায় মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনার বেশ কিছু স্থান সকাল থেকেই ছিল বিদ্যুৎহীন। বেশ কিছু জায়গায় রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার মানুষ।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বর্ষার খবর দিল দিল্লির হাওয়া অফিস। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কেরলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবেশে করতে পারে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ৮ জুনের মধ্যে কেরলে বর্ষা প্রবেশ করলে, স্বাভাবিক ছন্দেই প্রবেশ ঘটেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর।সাধারণত ১১ জুনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করে যায় । কেরলে প্রবেশের পরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু কতটা সক্রিয় থাকবে , তার উপরেই নির্ভর করবে যে বাংলায় কখন প্রবেশ করবে ।
তবে তাপপ্রবাহ নিয়েও সতর্ক করেছে হাওয়া অফিস । তারা জানিয়েছে জুন মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হতে পারে।ভারতের উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সংলগ্ন অংশে প্রায় ৪৫ ডিগ্রি চড়তে পারে তাপমাত্রার পারদ।
❤ Support Us