- দে । শ
- নভেম্বর ২৯, ২০২৪
খেজুর রসের সন্ধানে গ্রাম বাংলা। এবার শুরু হবে রসের উৎসব
পাড়ার মিস্টির দোকানে বোর্ড ঝুলছে—‘ফুলকপির সিঙাড়া’ তার পাশে ‘নলেন গুড়ের সন্দেশ’। অফিস ফেরতা মানুষটি বাস থেকে নেমে খোঁজ করেন ‘নতুন গুড়ের রসগোল্লা’–র । এই সময়ট এই রকমই হয়। শীতের আমেজ এসেছে কিন্তু মিস্টির নলেন আইটেম আসব আসব করেও আসে নি। তবে কোথা কোথাও হাতছানি দিচ্ছে ‘জয়নগরের মোয়া’ আর মৃদু নলেনের গন্ধের লালচে রঙের মিস্টি। উৎসবের কাল চলে গেল । এবার আসছে রসের কাল। রসের কারবারিরা এখন আর ঘরে বসে নেই। খেজুর রসের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন শিউলির দল। যদিও বাজারে নলেন গুড়ের মিস্টি অনেক জায়গায় উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু সেগুলির নলেনত্ব কতখানি খাঁটি তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে গাঁ–গঞ্জে তোড়জোর থেমে নেই। উত্তর , দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামে এখন চলছে খেজুর গাছ সাফ সুতরো করার কাজ। অনেকটা পুজোর ছাঁটের মত খেজুর গাছের মাথা পরিস্কার করে ‘কাট’ দেওয়ার পালা শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। ‘এক কাট’, ‘দো কাট’ দেওয়ার পরে ‘তিন কাট’–এ গিয়ে নলি পড়ানো, ভাঁড় পাতা শুরু হবে। সেই প্রক্রিয়া সারতে অগ্রহায়ণে মাঝা মাঝি হয়ে যাওয়ার কথা। প্রথম ৭ দিনে জিরেন রসের তেমন স্বাদ বা গন্ধ আসে না। অগ্রহায়ণের শেষে গিয়ে মিলবে আসল রস।
বসিরহাটের ধলতিথা, নলকোঁড়া, বাগুন্ডি, বাঁশঝাড়ি, ইটিন্ডা, পানিতর, গাছা, আখারপুর, বাদুড়িয়ার পুঁড়া, কাটিয়াহাট, সায়েস্তা নগর, স্বরূপনগরের বাংলানি, কৈজুরি, গোকুলপুর, হাড়োয়ার জাফর পুর, খাসবালান্দা, গোপালপুর, গ্রামে শিউলিরা নেমে পড়েছেন খেজুর গাছের পরিচর্যায়। গাছের পাতা কেটে, গাছ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে লেগে গেছেন তারা। মদন সিংহ, পতিতপাবন বাছাড়, অনন্ত বিশ্বাস, জিয়াদ আলি, করিম গাজি এরা সকলেই শিউলি। গাছ কেটে রসে জোগান দেন এঁরা। তাঁদের কথায়, ‘বর্ষা বিদায় নিলেই আমাদের মন উচাটন হয়। উত্তরে হাওয়া দিলে আর স্থির থাকা যায় না। কোথায় খেজুর গাছ আছে তার জন্য তল্লাসি শুরু হয়। এখন শিউলির পেশায় কেউ আসে না। বড় কষ্টের কাজ যে। তার ওপর খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। চারিদিকে ইটভাটা, গাড়িঘোড়ার ধোঁয়ায় রসের ভাড়ারেও টান পড়েছে। আগের মত রস হয়না।’ তবুও বছরে বাঙালির মুখে নলেনের স্বাদ দিতে কোন কসুর নেই গ্রামের শিউলিদের।
❤ Support Us