- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ১৮, ২০২৩
বেহাল রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের না, খাটিয়ায় চেপে হাসপাতাল যাত্রা, পথেই মৃত্যু তরুণীর
প্রতিশ্রুতি থাকলেও সমস্যা সমাধানে সুরাহা এখনো দূরস্ত । সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা থেকে মুক্তি মেলেনি এখনো রাজ্যে । পথের হতশ্রীতেই প্রাণ গেল এক তরুণীর ।
মালদার বামনগোলা থানায় মালডাঙা গ্রামের রাস্তা বেহাল। অ্যাম্বুল্যান্স বা টোটো কেউই এরাস্তায় চলতে চায়না, তাই বাধ্য হয়েই মুমূর্ষু রোগীকে খাটিয়ায় বেধে, কাঁধে করে ১০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে রওনা দিয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। তবে শেষরক্ষা হল না। পথেই মৃত্যু হল ওই অসুস্থ ২৪ বছরের গৃহবধূর। ঘটনায় মালদার নালাগোলা সড়ক অবরোধ করে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখায়। অবশেষে রাস্তা সরানো হবে, লিখিত প্রতিশ্রুতি বিডিও দেওয়ার পর অবরোধ ওঠে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এই ঘটনায় শাসক দলকে নিশানা করে বলেন, “এই লজ্জা ঢাকার জায়গা নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ২০০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। এটাই তার ন্যমুনা।”
এদিকে এই ঘটনায় রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রাজ্যে এমন কোনও রাস্তা নেই। দেখতে হবে রাস্তাটা কাদের পুরসভার না পূর্ত দফতরের।” রাজ্যের আর এক মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এই ঘটনায় বলেছেন, “রাস্তার জন্য নয় ওই রোগিণীর ভাগ্যে মৃত্যু ছিল, তাই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”
এই ঘটনায় শাসক-বিরোধী বাকযুদ্ধ হলেও কিছু আসছে যাচ্ছে না গত শুক্রবার মালদহের বামনগোলা থানার মালডাঙা গ্রামের ওই ২৪ বছরের মৃত গৃহবধূর পরিবারের। শুক্রবার খাটিয়ায় করে ওই অসুস্থ গৃহবধূকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক এবং চেনা পারস্পতিক বাক্যবিনময়।
স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের তরফে জানা গিয়েছে, মালডাঙা গ্রামের বাসিন্দা, বছর ২৪ বছরের তরুণী গৃহবধূ মামণি রায় গত দু’তিন দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন। শুক্রবার দুপুরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য ওই গৃহবধূকে তাঁর পরিজনেরা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে পাঠান। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স তো দূরের কথা, গ্রামে কোনও যানবাহনই ঢোকে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই অবস্থায় কোনও উপায় না দেখে মুমূর্ষু ওই গৃবধূকে খাটিয়ায় তুলে গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। গন্তব্য ছিল বামনগোলার গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু খারাপ রাস্তা পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ওই ২৪ বছরের গৃহবধূকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার সকাল থেকেই মালদহের নালাগোলা রাজ্য সড়কের কলোনি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে অবরোধ কর্মসূচি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং যুগ্ম বিডিও এসে গ্রামবাসীদের রাস্তা সারাবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ উঠে যায়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বেহাল রাস্তা নিয়ে রাজ্য এবং স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যত তুলোধনা করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেত্রী বীণা সরকার কীর্তনিয়া। রাজ্য সরকার “পথশ্রী”র মতো প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরেও কেন গ্রামীণ রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারবে না, সেই প্রশ্নই তুলেছে বিজেপি। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম মালডাঙা হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জুয়েল মুর্মু এই প্রসঙ্গে বলেন, “আজকে ওই গ্রামের রাস্তা ভাল থাকলে অ্যাম্বুল্যান্স যেতে পারত। তা হলে ওই তরুণীকে হয়তো বাঁচানো যেত। আমরা রাস্তা সংস্কারের দাবি বার বার প্রশাসনকে জানিয়ে এসেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
সমালোচনার জবাবে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানান, এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপি বিধায়ক রয়েছেন। সাংসদও বিজেপির। তারপরও রাস্তা হল না কেন? সব দোষ তৃণমূলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে তো হয় না।” জেলা প্রশাসনের তরফে বামনগোলা ব্লকের যুগ্ম বিডিও উত্তম বিশ্বাস বলেন, “এই রাস্তা তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই একটি বাজেট জেলা স্তরে পাঠানো হয়েছে। রাস্তা তৈরির কাজটির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে।”
তবে এখন অনেক লিখিত ও মৌখিক প্রতিশ্রুতি প্রশাসন দিচ্ছে, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিতে ২৪ বছরের গৃহবধুর প্রাণ ফিরবে না।
❤ Support Us