- এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
অশ্লীলতার দায়ে, হোসেনের বিতর্কিত চিত্রকর্ম বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিল্লি আদালতের। রায়ের বিরু্দ্ধে চলবে আইনি লড়াই, জানালো গ্যালারি

মকবুল ফিদা হোসেনের চিত্রশিল্পের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা বা ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানবার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ‘ভারতের পিকাসো’ বলা হয় যে চিত্রশিল্পীকে তাঁকে ২০০৬ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ চিত্রকর্মের জন্য তাঁকে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ওই চিত্রকর্মে এক নগ্ন নারীকে ভারতের মানচিত্রের রূপে উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রবল বিতর্কের মুখে হুসেন দেশ ছেড়ে লন্ডনে আমৃত্যু নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। ২০০৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হুসেনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। আদালত বলেন, হুসেনের চিত্রকর্ম ভারতীয় প্রতীক ও ইতিহাসে প্রচলিত নগ্নতার ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবার তাঁর ছবি বাজেয়াপ্ত করবার নির্দেশ দিল কোর্ট।
সোমবার পাতিয়ালা হাউস কোর্টে একটি মামলা ওঠে, যাতে অভিযোগ করা হয় দিল্লি আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত ওই চিত্রকর্ম দুটি হিন্দু দেব-দেবীকে নগ্ন রূপে চিত্রিত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। দিল্লি আর্ট গ্যালারিতে ২৬ অক্টোবর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শিল্পীর ১০০টিরও বেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছিল। এক বিবৃতিতে গ্যালারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁরা এই রায়ের পক্ষে নন এবং বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। আইনজীবি অমিতা সচদেবা ৪ ডিসেম্বর প্রদর্শনী পরিদর্শন করে চিত্রকর্মগুলোর ছবি তোলেন। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর দিল্লি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ১০ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে গ্যালারিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, বিতর্কিত চিত্রকর্ম দুটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে গ্যালারি কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা কখনোই ওই চিত্রকর্ম প্রদর্শন করেননি। সচদেবা আদালতে সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের আবেদন জানান। তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, প্রদর্শনীটি ব্যক্তিগত পরিসরে আয়োজন করা হয়েছিল এবং এতে কেবল শিল্পীর মৌলিক কাজ তুলে ধরা হয়েছিল।
ভারতবর্ষে শিল্পীদের স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তায় আঘাত নামানো হচ্ছে, এই অভিযোগ লেখক, শিল্পী, কবিদের দীর্ঘদিনের। সালমান রুশদিকে দেশ ছাড়তে চয়েছিল ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখবার ‘অপরাধে’। এমনকি ভক্তিকবি কবিরের উপরেও ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত হানার অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। অক্টোবরে বোম্বে হাইকোর্ট এফএন সাউজা ও আকবর পাদামসির শিল্পকর্ম ‘অশ্লীল’ বলে কাস্টমস বিভাগের জব্দের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। আদালত রায় দেয়, ‘প্রতিটি নগ্ন চিত্রকর্ম অশ্লীল নয়।’ কিন্তু বম্বে কোর্টের পর্যবেক্ষণের কথা মাথায় না রেখেই এম এফ হোসেনের ছবি বাজেয়াপ্ত করবার রায় কেন দিল আদালত, তার উত্তর মেলেনি।
মকবুল ফিদা হুসেনের কাজকে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারার মাঝে আটকানো কঠিন, সংজ্ঞায়িত করা আরো কঠিন। পিকাসোর মত বিরাট ক্যানভাসে ভারসম্য রক্ষা করবার কথা বা কিউবিজমের কথা ওঠে। কিন্তু সমসাময়িক শিল্পকলায় ফিদা হুসেনের শৈলী অনবদ্য ও অনন্য। দেখলেই বোঝা যায় এটা তাঁর আঁকা। অনেকটা কোলাজের খেলায়, উজ্জ্বল ও সাহসী রঙের ব্যবহারে তাঁর কাজ সর্বদা তারুণ্যের প্রতীক। ছবির বিষয়বস্তু চয়নে ফিদা বেছে নিয়েছিলেন নিজস্ব সাংস্কৃতির ও জীবনধারার ইতিহাস; পুরাণ, মহাভারত বা রামায়নের কাহিনী । গভীর মমতায় মায়ের মুখ খুঁজতে গিয়ে এঁকেছেন মাদার তেরেসেরার উপরে আঁকা সিরিজ গুলো । দর্শনবোধের নিবিড় পাঠে এঁকেছেন মহাত্মা গান্ধীর জীবনী । সমকালীন বিষয়ের সাথে পুরনোর মিশেলে মকবুল তাঁর ছবিকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রাকৃতিক সহজাত ভঙ্গিমাময় শিল্পকর্ম এবং স্বতঃস্ফুর্ত ভাবের প্রকাশ যেনো ভারতের আধুনিক শিল্পকলার ‘মহাভারত’। পৃথিবীর নামীদামী অকশন হাউসগুলোতে শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের শিল্পকর্ম বিক্রি হয় আকাশ ছোঁয়া দামে। অথচ ভারতবর্ষে তাঁর ছবি নিষিদ্ধ করতে চায় একদম মানুষ।
❤ Support Us