- এই মুহূর্তে দে । শ
- মে ২৯, ২০২৪
শুধু বিকাশ বিজ্ঞাপনেই ! দেশ জুড়ে বেহাল অবস্থা কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘আরোগ্য মন্দির’ এর

দেশের সরকারি স্বাস্থ্য উদ্যোগ নিয়ে প্রচারে কমতি নেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের। কিন্তু আসলে তা প্রদীপের নীচে অন্ধকার। ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘আরোগ্য মন্দির’ প্রতিষ্ঠার পরেও জনদেবতার পরিষেবা দিতে ব্যর্থতা ফুটে ওঠে পদে পদে। গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে ‘আরোগ্য মন্দির’ নামে গড়ে তোলার পরও বেহাল দশা কাটছে না ।
স্থান মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার অন্তর্গত কারজাত গ্রাম। গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে না আছে ওষুধ, না আছে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক কর্মী জানালেন, অন্তসত্বা মহিলাদের প্রসুতির জন্য এখানে কোনও সুযোগ সুবিধা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের পাঠাতে হয় দুরের কোনও চিকিৎসাকেন্দ্রে।
এর আগে মহারাষ্ট্র সরকার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের আধিকারিক, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, স্থানীয় মানুষ সবাইকে আহ্বান জানায়।কারজাত গ্রামের বহু মানুষ সেই আলোচনা সভাতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চালু করেন ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প। যার অধীনে এই সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ১২ ধরণের বিশেষ স্বাস্থ্য -সুবিধা প্রদান করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সেই স্কিমের অধীনে থাকা এই অজ গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে শুধু রঙের পোঁচ পড়েছে মাত্র, যার জন্য সরকার থেকে মঞ্জুর হল মাত্র ৩০০০ টাকা । পরিষেবা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রইল।
স্থানীয় এক এনজিও কর্মী সংবাদ পোর্টাল স্ক্রোল ডট ইনকে জানিয়েছেন কেন্দ্রের অধীনে থাকা রায়গড় জেলার কারজাতের সমস্ত আরোগ্য মন্দির ধুঁকছে। সেসব কেন্দ্রে শুধু সাধারণ জ্বর আর সর্দিকাশির ওষুধ ছাড়া কিছু মিলে না। ওই কর্মী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকরা থাকেন না।
এপ্রিল ২০১৮, ছত্তিসগড়ের বস্তার জেলায় নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের অধীনে ২০২২ সালে সারা দেশে ১.৫ লক্ষ ‘আরোগ্য মন্দির’ গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রগুলি শুধুমাত্র চিকিৎসা করবে না, রোগ প্রতিরোধের শিক্ষাও প্রদান করবে। তিনি এও বলেন, এখানে ক্যান্সার, হার্টের রোগেরও চিকিৎসা হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি হয়ে উঠবে আপনাদের ‘পারিবারিক চিকিৎসক।’
কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। যদিও তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রায়গড় জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ‘আরোগ্য মন্দির’ নামে নামাঙ্কিত হয়ে যায়।
একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের করা আরটিআই-এর উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায় দেশে এই মুহূর্তে আরোগ্য মন্দিরের সংখ্যা ১.৭০ লক্ষ। যার মধ্যে ২৩,৭৪৪ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে পুনরনবীকরণ করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে সাব সেন্টার রয়েছে ১.৩৭ লক্ষ, এবং শহরাঞ্চলে এর সংখ্যা ৯৮৩৩।
শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের অজ পাড়া গাঁ নয়, ওই রাজ্যে রয়েছে বেশ কিছু ‘ভূতুড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রও’। জেলা আধিকারিক সুত্রে জানা গেছে, বলিভারি গ্রামে একটি সাব সেন্টার আছে। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীদের মতে আদৌ তা নেই। রায়গড় স্বাস্থ্য দফতরে তার লিখিত প্রমাণ থাকলেও বাস্তবে তার কোনও অস্ত্বিত্ব নেই।
ঠিকানা খুঁজলে মেলে, একটি পরিত্যক্ত অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রের হদিশ। সেখানেও আবর্জনার স্তূপ জমে পরিবেশ রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর।মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার বলে কেউ নেই। যারা আছেন তাঁদের ডাক্তারি ডিগ্রি নেই। আছে সামান্য প্রাথমিক প্রতিবিধানের প্রশিক্ষণ মাত্র। বেশ কিছু কেন্দ্রে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরাই রোগীদের দেখাভাল করেন। তাঁদের নাআছে রোগীকে মানসিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ , না আছে মারণ রোগ থেকে প্যালিয়েলেটিভ চিকিৎসা দেওয়ার ডিগ্রি। একই চেহারা বিহারে, কর্ণাটকেও। না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, না আছেন উপযুক্ত নার্স , না আছে পরিমাণমতো ওষুধের যোগান।
ওই সংবাদমাধ্যমের করা তথ্যের অধিকার আইনে করা মামলার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে ৪২, ৫১৭ আরোগ্য মন্দিরে না আছে কোনও চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা, না আছে নাক , কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অথচ তারা আছে বহাল তবিয়তে্ অথবা খাতায় কলমে। প্রতি বছর বাজেটের অংশ হয় তারা। কিন্তু কোথায় যায় সেই প্রতিশ্রুতি, তা জানেন একমাত্র যারা বরাদ্দ করেন তাঁরাই।
❤ Support Us