Advertisement
  • ধা | রা | বা | হি | ক
  • ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২

অন্য ভাষা ভিন্ন স্বর

পর্ব-৪

অংশুমান কর
অন্য ভাষা ভিন্ন স্বর

annya-bhasa-bhinnya-swr

 


গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক থেকে, বিদেশি ভাষার বহু স্বর, বহু সুর, নানা রকম ভাষাভঙ্গি আর বহুমাত্রিক বিষয়ের সংযোজনে ঋদ্ধ হয়েছে আমাদের কবিতা পাঠের মগ্ন চেতনা। কিন্তু এই উপমহাদেশের উত্তর আর দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিমের কবিতা, কবিতা ভাবনা দূরে পড়ে রইল এখনও । কেন ? ভারতীয় ভাষাচর্চায় বাঙালির অনীহা, না এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আরেক প্রতিবেশীর, আরোপিত প্রকান্তরে অনুশাসিত দূরত্বই তৈরি করেছে অপরিচিতির চৌহদ্দি ? যুক্তিপ্রসূত জিজ্ঞাসা নিয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার কবিতার ধারাবাহিক তরজমায় প্রতিস্পর্ধী, সমান্তরাল চিন্তার বিশিষ্ট সহযোগী অংশুমান কর


 

 

পূ ভি য়া রা সু

জন্ম ১৯৩০ সালে । কোয়েম্বাটোরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মানো এই কবি পেশায় ছিলেন শিক্ষক । মার্ক্সবাদে দীক্ষিত পূভিয়ারাসু ছিলেন তামিলনাড়ুতে বনমবাদী সাহিত্য আন্দোলনের একজন প্রতিষ্ঠাতা । পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার । শেক্সপীয়ার, খলিল জিব্রান, ওমর খৈয়াম, দস্তয়েভস্কি এবং রবীন্দ্রনাথকে অনুবাদ করেছেন তামিল ভাষায় । অনুবাদ কর্মের জন্যও পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি অনুবাদ পুরস্কার । তাঁর আসল নাম এস জগন্নাথন । সংস্কৃত ‘জগন্নাথন’-এর তামিল প্রতিশব্দ ‘পূভিয়ারাসু’। কবিতা রচনার পাশাপাশি পূভিয়ারাসু নাটক লিখেছেন ।

 

পুজো

ফুলেরা
যখন প্রথম ঋতুমতী হয়
মৌমাছিরা জানতে পারে ।

কিন্তু
ফুলেদের ভেতরে বাস করেন ঈশ্বর,
বলেছিলেন সন্ত থায়ুমানাবার ।
মৌমাছিরা কি এই কথা জানে ?

মনে হয়
ওরা জানে ।
ওরা
ফুলেদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ওড়ে,
অঞ্জলি দেয়
আর তারপরে চলে যায়

ওরা কক্ষনো
ফুল তোলে না ।

 

দরজা

সভ্যতার
লজ্জা হল
দরজা ।

দরজা নিরাপত্তার কোনও চিহ্ন নয়
বরং নিরাপত্তাহীনতার প্রতীক।

তুমি দাঁড়িয়ে আছ
তোমার দরজার বাইরে ।
একটা দরজা বন্ধ হয়,
তোমার গালে একটা ত্থাপ্পড় পড়ে
অপমান করে, তোমাকে ।

নিষ্পাপ একটা চাউনি নিয়ে
তারাদের মতো মিটমিট করতে পারে,
কিন্তু একটা বন্ধ দরজা
আসলে পুরোদস্তুর ধূর্ত ।

‘দরজা বন্ধ করুন’
এগুলো স্বৈরাচারী
নোংরা শব্দ!

‘দরজা খুলুন’
নপুংসকের
ক্ষীণ শব্দ!

দরজাহীন একটা পৃথিবী?

খোঁজো
বন্ধ দরজার পেছনে…

চিত্র: দেব সরকার

সেই দৃষ্টিটা

জীবনে নিশ্চয়ই
অগণন দৃষ্টির
মুখোমুখি হয়েছ…

একটা পুঁচকে শিশুর
দৃষ্টিহীন দৃষ্টি
ভিখারির ক্ষুধার্ত দৃষ্টি
পাগলের অস্থির দৃষ্টি
দুর্বৃত্তের ধূর্ত দৃষ্টি
কামার্ত মহিলার সম্মোহনী দৃষ্টি
মায়ের স্নেহময়ী দৃষ্টি
বাবার স্নেহান্ধ দৃষ্টি
শিক্ষকের ভর্ৎসনার দৃষ্টি
বসের উদ্ধত দৃষ্টি
পুলিশের ঈগলের দৃষ্টি
প্রেমিকের অবিশ্বাসী দৃষ্টি
তালিকা অনিঃশেষ!

কিন্তু…কিন্তু…

তোমার পায়ের কাছে
সামনের দু’পায়ের মধ্যে
মুখ লুকিয়ে
কান খাড়া করে
মাথা একেবারে না-নাড়িয়ে
কেবল
বড়ো বড়ো চোখের
কালো মণিগুলোকে তুলে
তোমার মুখের দিকে স্থির তাকিয়ে আছে­­­—
তোমার কুকুর

ওই মন্থর চোখদুটোর
তরল গভীরতা আসলে
কত বাঁও
তা কেউ কোনওভাবেই মেপে উঠতে পারবে কি ?

 

জেগে থাকো

মোমবাতিটাকে রেডি রেখো!

এমনকি
এই একবিংশ শতাব্দীতেও
আলো নিভে যায় ।

♦—♦

 


❤ Support Us
error: Content is protected !!