Advertisement
  • ধা | রা | বা | হি | ক
  • জানুয়ারি ২৩, ২০২২

ধা|রা|বা|হি|ক: কয়েকটি প্রেমের গল্প |পর্ব ৩৩|

জীবনের রোজনামচায় আকস্মিক তার আগমন। স্থায়িত্বে কোথাও সে পূর্ণাঙ্গ, আবার কোথাও অসম্পূর্ণ। রূপক এ নয়, নানান জীবনচর্যায়, সেই পূর্ণ অপূর্ণের রূপ নিয়ে দেবপ্রিয় চক্রবর্তীর ধারাবাহিক কথামালা...

দেবপ্রিয় চক্রবর্তী
ধা|রা|বা|হি|ক: কয়েকটি প্রেমের গল্প |পর্ব ৩৩|

অলঙ্করণ: দেব সরকার ।

যাচাই ও সম্মতি

পরদিন খুব ভোরে উঠে চান করে বাইরে এসে দোতলার বারান্দা থেকে জয়িতা দেখল প্রতিমাও উঠে পড়েছেন। জয়িতা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলে পর তিনি বললেন, -‘ঠান্ডা জলে চান করলে কেন?’
উঠোনের একপাশে বড় উনোনে বিরাট হাঁড়িতে জল গরম হচ্ছিল। জয়িতা বুঝলো সবার চানের জলের বন্দোবস্ত হচ্ছে। বলল –‘ঠিক আছে আন্টি। কাল থেকে গরম জল নিয়ে নেব।’
মাথা নাড়লেন প্রতিমা। বললেন, -‘তুমি একটু দাঁড়াও, আমি দেখছি মা কি করছেন।’
বলে দালানে উঠে একতলার অনেকগুলো সারি সারি দরজার একটা দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। একটু পরে বেরিয়ে এসে বললেন, -‘যাও মার সঙ্গে দেখা করে এসো। তোমার কথা বলেছি আমি। মা ঘরেই আছেন।’
-‘একা?’ ইতস্তত করে বলল জয়িতা।
-‘কেন? ভয়ের কি? যাও না।’
সত্যি ভয়- ডর আর করছে না জয়িতার দালানে উঠে ঠাকুরমার ঘরের সামনে গিয়ে বলল, – ‘আসবো ঠাকুমা?’

বিছানায় বসে পানের বাটা সাজিয়ে সুপুড়ি কাটছিলেন মল্লিকা সেন।
ঘরে ঢুকে জয়িতার মনে হল ঊনবিংশ শতাব্দীর সিনেমার সেটে পৌঁছে গেছে। বিশাল ঘরটার চারধারে সাজান আছে একগাদা সাবেকি আমলের আসবাবপত্র। বড় বড় কাঠের খড়খড়ি লাগানো জানালা দিয়ে তাকালে অবশ্য বাইরের আধুনিক পৃথিবীর বাড়িঘর চোখে পড়ে। ঘরটার একদিকে দেয়ালজোড়া ছাদ থেকে মেঝে অব্দি এক বিরাট বইয়ের আলমারি। তাতে বোধ করি বাংলা সাহিত্যের সব লেখকদের বই ভরা। আরেকটা জিনিস দেখে একটু অবাক হল জয়িতা – একটা দেয়ালে পুরনো তলোয়ার, ছুড়ি আর একটা দোনলা বন্দুক ঝোলান।
বাইফোকাল চশমার ওপর দিয়ে জয়িতার আপাদমস্তক জরিপ করে ভুরু কুঁচকে বললেন মল্লিকা, -‘কি নাম রে মেয়ে তোর?’
-‘জয়িতা।’
-‘মানে কি?’
-‘যে জয়ী হয়।’
-‘তবে চোখে এত দুঃখ কেন? জয়ের খুশি কোথায়?’
এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে প্রণাম করতে গিয়ে মল্লিকার মন্তব্য শুনে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল জয়িতা। ওর মনটা কি এতো সহজে পড়া যায়? সামলে চলতে হবে।
-‘দীর্ঘজীবী হ’। অনেক কিছু জয় কর।’ বলে আশীর্বাদ করলেন মল্লিকা দেবী।
-‘পান সাজতে পারিস?’ পরের প্রশ্ন তাঁর।
-‘পারি।’ বললো জয়িতা।
-‘পান খাস্‌?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন ঠাকুমা।
-‘নাঃ। খুব কম।’ বলল জয়িতা।
-‘তবে শিখলি কোথায়?’ পানের বাটাটা ওর দিকে ঠেলে দিতে দিতে বললেন ঠাকুমা, – ‘সাজ দেখি কেমন জানিস।’
যাঁতি তুলে সুপাড়ি গুলোকে কাটতে কাটতে উত্তর দিলো জয়িতা, -‘ছোটবেলা দিদার কাছে বসে গল্প শুনতাম। তখন শিখেছি।’
-‘দিদা কোথায় এখন?’
-‘তিনি আর নেই এখন।’

অলঙ্করণ: দেব সরকার ।

-‘কেউ তো আর থাকে না রে চিরকাল… সেই তো নিয়ম।’ গলার স্বরে কাঠখোট্টা ভাবটা কেটে গিয়ে কি নরম হয়েছে বৃদ্ধার।
চুপচাপ পানটা সাজিয়ে ভালো করে মুড়ে ঠাকুমার দিকে বাড়িয়ে দিল জয়িতা। বুঝতে পারছিল মন দিয়ে তাকে দেখছেন বৃদ্ধা। বললেন –‘জর্দা এত কম দিলি কেন রে?’
-‘ওটা যত কম হয় ততই ভালো।’
-‘এখন তুই আমাকে পান খাওয়া শেখাবি?’ ভুরু কুঁচকে গেছে মল্লিকার।
-‘শেখাবো কেন ঠাকুমা। আমি আমার কথা বলছি। আমার হাতে জর্দা কমই হয়। আরো দিতে পারি কিন্তু সাজা পান খুলে আবার জর্দা ভরলে কি আর খাবার মজাটা থাকবে?’
-‘হুম।’ বলে পানটা নিয়ে মুখে গুঁজলেন মল্লিকা। চিবোতে চিবোতে বললেন, -‘তুই তো আমার অরোর বন্ধু। তাকি কেবল বন্ধুই না ভাব ভালবাসা এগিয়েছে?
-‘শুধু বন্ধুত্ব নয়। ও আমাকে বিয়ে করতে চায় বলেছে।’
-‘কি মেয়েরে তুই? লাজ শরম নেই? নিজের কথা এভাবে বলবি?’ কথাটা বকুনি হলেও জয়িতা বুঝতে পারছিল ওতে বিরক্তি নেই। বলল –‘মিথ্যে বলার চেয়ে লজ্জা পাওয়া ভালো। পরে জানলে আপনিই আমাকে ধরতেন কেন লুকিয়েছি বলে।’
-‘তা তুই কি বললি?’ বলে আশে পাশে চাইলেন ঠাকুমা। প্রয়োজনটা বুঝতে পেরে উঠে গিয়ে পাশের কারুকাজ করা ছোট টেবিলের ওপর থেকে ভারী পেতলের পিকদানি তুলে এনে ঠাকুরমার সামনে ধরল জয়িতা। এক পলকের জন্য জয়িতার দিকে তাকালেন তিনি। চাউনি নরম হয়ে এসেছে তাঁর। বললেন, -‘কি হলো? এবারও সত্যি কথা বল।’
-‘আমি অরুণকে ভালোবাসি।’ স্থির স্বরে বলল জয়িতা।
-‘আর এখানে কি আমাদের পরিবারকে বাজিয়ে দেখতে এসেছিস?’ কাঠখোট্টা ভাবটা ফিরে এসেছে আবার।
-‘একেবারেই না ঠাকুমা। আমাকে প্রতিমা আন্টি আসতে বলেছেন। আর পরিবার যাচাই করার আস্পর্ধা দেখানোর বয়েস বা মানসিকতা কোনটাই নয় আমার। আমি শুধু পরিচয় করতে এসেছি।’
-‘হ্যাঁ বেয়াদবি করবিনা একদম। ওই তোরঙ্গটার ভেতরে একটা কাঠের ছোট বাক্স আছে। ওটা এখানে নিয়ে আয়।’ আঁচল থেকে চাবির গোছা খুলে একটা চাবি আলাদা করে ধরে জয়িতার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন ঠাকুমা।
ঠাকুরমার কথা মতো বাক্সটা এনে বিছানায় দেবার পর সেটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা কয়েন বের করলেন তিনি। জয়িতার দিকে বাড়িয়ে বললেন –‘এই নে, এত মিহি সুপুড়ি কেটেছিস… এটা তোর বকশিস।’
কয়েনটা হাতে নিয়ে জয়িতা দেখল ওটা প্রায় এক শতাব্দী পুরোন ব্রিটিশ আমলের একটার রুপোর মোহর। অ্যান্টিকের দোকানে এখন অন্তত হাজার পাঁচেক দাম হবে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না এমন সময় লাঠিতে ভর দিয়ে অরুণ এসে ঢুকলো।
তাকে দেখতে পেয়ে মল্লিকা বললেন, -‘বন্ধুনীটির টানে আজ কেমন সকাল সকাল উঠে বুড়ির ঘরে হাজির আমার নাতি।’
লজ্জা পেয়ে বলল অরুণ, -‘কি যে বল ঠাম্মা। আমি তোমার ঘরে আসি না নাকি?’
-‘এত ভোরে তো তোর দেখা পেয়েছি বলে কখনো মনে পড়ে না।’ ঠাকুরমার ঠোটের কোনায় হাসিটা দেখে অরুণ বলল, -‘তুমি বলতে না? কবে বড় হব? এবার আমি বড় হয়ে গেছি।’
-‘ওমা! মুখে খই ফুটেছে যে? কি যাদু করেছিস মেয়ে?’
জয়িতার লজ্জা পাওয়া দেখে আবার বললেন -‘বয়সটাই ওরকম, তোদের আর দোষ কি? তবে সাবধান বেশি বাড়াবাড়ি যেন না দেখি বিয়ের আগে। একটু আধটু প্রেম পিরিতি চলতে পারে। কিন্তু বাকি সব বিয়ের পর। কি বলিস মেয়ে?’
জয়িতা কি বলবে বুঝতে পারলো না। বৃদ্ধাকে তার ভালো লেগেছে, কিন্তু কতটুকু এগুলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন না, বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকাই ঠিক করলো।
-‘যা নিয়ে যা। বাড়িটা দেখিয়ে দে ভালো করে। তোর ছেলে বেলার গল্প আমি পরে শোনাবো ওকে।’ বলে মুচকি হাসলেন ঠাকুমা।
দুজনে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। বাইরে এসে অরুণ বলল,-‘ঠাম্মাকে দারুন ইমপ্রেস করেছো মনে হচ্ছে।’
-‘কেন বলছ?’ প্রশ্ন করল জয়িতা।


সাবধান বেশি বাড়াবাড়ি যেন না দেখি বিয়ের আগে। একটু আধটু প্রেম পিরিতি চলতে পারে। কিন্তু বাকি সব বিয়ের পর। কি বলিস মেয়ে?’


-‘ঠাম্মার কালেকশনে কিছু অ্যান্টিক্ আছে। ওই যে রুপোর মোহরগুলো – সেগুলো ঠাম্মার আশীর্বাদ করার স্টাইল। সবাইকে দেয় না।’
হাতের মুঠোয় মোহরটা বিঁধল জয়িতার। ঠিক করলো যাবার আগে এটা অরুণ কে ফিরিয়ে দিতে হবে। মুখে বলল, – ‘আমার একটা হেল্প চাই।’
-‘কি?’
-‘আজ একটু গাড়িটা নিয়ে আমার সঙ্গে যেতে হবে তোমাকে।’
-‘কোথায়?’
– ‘বাজারে। তার আগে একটা লিস্ট বানাবে সব বাচ্চাদের। ওদের জন্য পুজোর গিফ্ট আনব।’
-‘ সেকি। এতজনকে গিফট দেবে?
-‘হ্যাঁ আমার ইচ্ছে হচ্ছে।’
প্রথম দিন জয়িতার দেওয়া নিজের শার্টটার কথা মনে পড়ল অরুণের। বলল, -‘ওটা তোমার স্টাইল মনে হচ্ছে।’
কিছু না বলে হাসলো জয়িতা বলল –‘লিস্টটা বানাও। কেউ মিস্‌না হয় যেন।’
বাচ্চাদের জন্য জামা কাপড় কেনার সময় মনে করে বাড়ির সব কাজের লোকদের জন্য জামা আর শাড়ি কিনে নিলো জয়িতা। অরুণ অবাক হলেও বাধা দিল না। শুধু বলল – ‘আমার গিফট্‌টা এখনো পেলাম না কিন্তু।’
-‘কোন গিফ্‌ট্‌?’
-‘তোমার সম্মতি।’
ব্যথা ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল জয়িতা, – ‘আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে তোমাকে কোন কিছু দিতে আমি দেরি করবো না অরুণ।’
অরুণ কিছু বলার আগেই পিউ বললো -‘জিত্তাদি- ক্যাডবেরি!’
সোনু আর পিউ সঙ্গে এসেছে ওদের। জয়িতার আপত্তি করার প্রশ্ন ছিল না। অরুণের সঙ্গে একা হওয়ার মুহূর্তটা যত পিছিয়ে দেয়া যায় চেষ্টা করছিল সে। যা মনে প্রানে চাইছে সেটাকেই অস্বীকার করার ওই যন্ত্রণা কতক্ষণে তাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে শেষ করে দেবে আর তা থেকে নিজেকে কি করে বাঁচাবে সেটা এখনো জানেনা জয়িতা।

***

পুজোর তিনটে দিন হুশ করে কেটে গেল। সবাই মিলে একসঙ্গে পুজো দেখে, ফুর্তি করে খেয়ে দেয়ে পরিবারটার সাথে মিশে গিয়ে নিজের ভয় দুঃখ ভুলে গিয়ে কদিন অন্য একটা জীবনে ডুবে রইল জয়িতা।
বিসর্জনের দিন সবাই মিলে একসঙ্গে ট্রাকে করে বিসর্জনে যাবার কথা। বেরোবার আগে এক পাশে প্রতিমা জয়িতাকে পেয়ে বললেন, -‘আজ বিসর্জন -এর সঙ্গে নিজের সব ভয় চিন্তা ধুয়ে আসবে। দেখবে মা তোমাকে সব দুঃখ ভুলিয়ে দেবেন।’
প্রতিমার কথার উত্তরে কিছু খুঁজে না পেয়ে মাথা নেড়েছিল জয়িতা। মনে মনে জানতো তার কাছে এটা অত সহজ নয়।
বিজয়া দশমীর আগে সকাল বেলা প্রতিমা ডেকেছিলেন তাঁকে নিজের ঘরে। এ কদিন জিন্স টি- শার্ট আর দু একবার সালোয়ার কুর্তা পরেই কাটিয়েছে জয়িতা। ইচ্ছে করেই শাড়ি আনেনি। ব্যাগে ঢুকিয়েও বের করে রেখে এসেছে। একটা লাল পাড় গরদের নতুন শাড়ি বিছানার ওপর থেকে নিয়ে জয়িতার দিকে বাড়িয়ে বলেছিলেন, -‘এটা তোমার জন্য। তুমি সিঁদুর খেলায় এটা পড়বে।’ জয়িতা আপত্তি করতে যাচ্ছিল বুঝতে পেরে বললেন, – ‘অবাধ্যতা একদম করবি না। চুপচাপ গিয়ে পড়ে নে।’ তার স্বরে কিছু একটা ছিল যাতে আপত্তি করা আর হলো না জয়িতার।
চান করে শাড়িটা পড়ে সিন্দুরের থালা হাতে দালানে নাবতে নাবতে তার চোখে পড়ল উঠোনের একপাশে অরুণ দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ দৃষ্টি পুরুষের চোখে দেখে অভ্যস্ত সে। কিন্তু আজ হঠাৎ অরুণের চোখে নিজের প্রতি যে চাঊনি দেখলো সেটা তার ভেতরে এক অনাস্বাদিত অনুভূতি এনে দিল যেটার জন্য তৈরি ছিল না জয়িতা। একটু হেসে অরুণকে মাথা নেড়ে দুর্গা প্রতিমার সামনে দাড়িয়ে মনে মনে বলল, -‘অনেকদিন তোমার উপর রাগে কিছু চাইনি মা। আজ বলছি স্বপ্ন দেখিয়েছো তুমি আমায়। যদি পূর্ণ না হয় তবে জীবনে আর কখনো চাইব না কিছু।’
সিঁদুর খেলা শেষ হলে অরুণকে চোখের ইশারায় ডেকে নিয়ে ধীরে ধীরে দালানে উঠে দোতলার সিঁড়ির চাতালে সবার চোখের আড়ালে এসে দাঁড়ালো জয়িতা। একটু পরেই অরুণ উঠে গেলে থালাটা ওর দিকে বাড়িয়ে বলল -‘বিয়ে আমাদের হবে না হয়তো। কিন্তু তোমার উত্তরটা দিয়ে দিই। সিঁদুরটা পরিয়ে দাও।’
হতভম্ব অরুণ যন্ত্রের মতো হাত বাড়িয়ে থালা থেকে দু’আঙুলে সিঁদুর তুলে তার সিঁথিতে পরিয়ে দিল। নিচু হয়ে তাকে প্রণাম করে চলে আসতে গিয়ে বাধা পেল জয়িতা। হাত ধরে আটকেছে অরুণ।
-‘কেন হবে না বিয়ে?’ মৃদু স্বরে প্রশ্ন করল।
-‘সেটা তুমি জানো।’ ধরা গলায় উত্তর দিল জয়িতা।
-‘না জানি না। মানিও না। তুমি হ্যাঁ বললে আর কোন কিছু আটকাবে না।’ জেদি স্বরে বলল অরুণ।
-‘আমার সম্মতির আর বাকি কি থাকল। তবু সবই আটকাবে অরুণ।’
– ‘আমি মানবো না।’ অসহিষ্ণু স্বরে বলল অরুণ।
-‘আমাদের হাতে নয়।’ বলে হাত ছাড়িয়ে নেমে এলো জয়িতা। সিঁথির সিঁদুর দেখে কে কী ভাবছে সেটা চিন্তা করার মত মনের অবস্থা এখন আর নেই তার।

***

সন্ধ্যেবেলা শান্তি জল আর অপরাজিতার আচার অনুষ্ঠান পুরো হবার পর মণ্ডপের চাতালে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে। গান আবৃত্তি বাচ্চাদের ছড়া নাচ এগুলো হবার পর হঠাৎ অরুণ বলল –‘জয়িতা তুমি কিছু কর। কবিতা আবৃত্তি কর না।’
জয়িতা বলল, -‘আমি আবৃত্তি করি কে বলেছে তোমাকে?’
-‘অভি বলেছে। তুমি কবিতা লেখ তাও বলেছে।’
এবার সবাই যোগ দিল অরুণের সঙ্গে। নিজের লেখা কবিতা শোনাতে হবে জয়িতাকে। বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাইকটা হাতে নিয়ে বলল জয়িতা –‘আমি আবৃত্তি করতাম এটা সত্যি কিন্তু কবি আমি নই। নিজের অনুভূতির তাগিদে কখনো – সখনো কিছু লেখালেখি করি। কিন্তু সবার সামনে সেটা আবৃত্তি করার প্রস্তুতি নেই তবু আপনাদের সামনে বলছি। এটা কবিতা নয় – এ কেবল আমার নিজের সঙ্গে বলা নিজস্ব কিছু কথা।’
বলতে আরম্ভ করল।
আমি আঁধার দেশের রাজকন্যা
আমার অনেক স্বপ্ন ছিল।
রাক্ষসটা মাড়িয়ে দিল
স্বপ্নগুলো গুঁড়িয়ে দিল।
আলোর আশা নিভিয়ে দিল।
তবু আমার স্বপ্ন আছে।
স্বপ্ন আমি দেখবই
আমি আবার বাঁচবই
আমি আবার হাসবই।
আমি আঁধার দেশের রাজকন্যা আমার অনেক স্বপ্ন আছে।
ওরা বলে মেয়ে তোর সাহস কত?
কোথায় পাস স্বপ্ন এতো।
স্বপ্ন তো সব হারিয়ে গেছে।
আশা ভরসা গুঁড়িয়ে গেছে।
এবার হাসতে ভুলতে হবে
স্বপ্ন দেখা ছাড়তে হবে।
তুই আঁধার দেশের রাজকুমারী
অন্ধকারেই বাঁচতে হবে।
আমি বলি…
ওসব আমি শুনব না, তোদের নিয়ম মানব না।
আঁধার দেশের রয়া।কুমারী হয়ে আমি বাঁচব না।
স্বপ্ন আমি দেখবই।
আমি আবার হাসবই।
আলো আমি জ্বালবই।
অন্ধকারে হারিয়ে থেকে জীবন আমি বাঁচব না।

ক্রমশ

 


❤ Support Us
error: Content is protected !!