- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুলাই ১৬, ২০২৪
বৃষ্টি মাথায় গ্রামে গ্রামে চক্কর, মূক-বধির স্কুলের মানোন্নয়নে স্মার্ট ক্লাস তৈরির নির্দেশ, সরজমিনে সেতু নির্মাণের তদারকি।কর্মমুখর জেলাশাসকের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত কালনার বাসিন্দারা

একদিন চড়া রোদ, তো পরদিন কখনও ঝিরঝির কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। প্রকৃতির এহেন খামখেয়ালকে উপেক্ষা করেই গ্রামে গ্রামে চরকি পাক দিচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার। কখনও মাথায় ছাতা, কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও গাড়িতে কাটোয়া-কালনার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের সরকারি প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে দেখছেন জেলাশাসক। কাটোয়ার মহকুমাশাসক অর্চনা ওয়াংখেড়ে, কাটোয়া ২নং ব্লকের বিডিও আসিফ আনসারিদের নিয়ে হাজির হলেন দেয়াসিন গ্রামে । সেখানে এলাকার গোটা দশেক গ্রামের মানুষের দাবি মেনে ব্রহ্মাণি নদীর উপর দেয়াসিন ও মালঞ্চ গ্রামের মাঝে একটি ব্রিজ তৈরি করেছে এগ্রো ইনডাস্ট্রিজ করপোরেশন লিমিটেড। ব্রিজটি পরিদর্শনের পাশাপাশি অসহায় মহিলাদের আবাসন ‘পিত্রালয়’ ঘুরে দেখেন। মহিলাদের সুবিধা, অসুবিধা জেনে নেন। এছাড়া করুই পঞ্চায়েতের নতুনগ্রাম প্রাইমারি স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে গল্পে মাতেন। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এলাকার বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক পীযূষকান্তি সাহা, সমাজকর্মী গৌরনাথ চক্রবর্তীরা অভিভূত, ‘এই হচ্ছে প্রকৃত জেলাশাসকের কাজ। নিজেই ঘুরে ঘুরে সরকারি প্রকল্পের কাজ দেখছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। নোট নিচ্ছেন।’
এর আগে কালনার বিভিন্ন গ্রাম সফর করেন জেলাশাসক। মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল, কালনা ১নং ব্লকের বিডিও সুপ্রতীক সাহা, ২নং ব্লকের বিডিও মোজাহিদ আলি-সহ এক ঝাঁক অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে দেখেন সমস্যা। বাতলান সমাধানের পথ। কালনা ২নং ব্লকের বেহুলা নদীর উপর থাকা তালা ও টোলা গ্রামের সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে পড়েছে। যেকোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল এই সেতুটি নতুন করে তৈরির দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।
ভগ্নপ্রায় সেতুটি পরিদর্শন করে দাবির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন জেলাশাসক। সেতুটি যত শীঘ্র সম্ভব নতুন করে তৈরির জন্য সেতুর পাশে দাঁড়িয়েই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা সারেন। বর্ষায় নদীতে জল বেশি থাকায় এইসময় জরাজীর্ণ সেতুটিকে ভেঙে নতুন করে তৈরির কাজ এখন সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, অক্টোবর মাস থেকে সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।
এছাড়া জেলাশাসক সিঙ্গারকোণ-ন’পাড়া এলাকার একটি আইসিডিএস সেন্টারে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে পানীয় জল ও পুষ্টিকর খাবার কী কী দেওয়া হচ্ছে, সেইদিকগুলি খতিয়ে দেখেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। জেলাশাসক কালনার বৈদ্যপুর রথতলা এলাকার একটি মূক-বধিরদের স্কুলে যান। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পড়ুয়াদের তৈরি নানান হস্তশিল্পসামগ্রী জনবহুল এলাকায় স্টলের মাধ্যমে বিক্রির পরামর্শ দেন। এছাড়াও পড়ুয়াদের আঁকা একটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি উপহার পেয়ে খুশি জেলাশাসক। কালনার এইরকম ৩টি স্কুলে পড়াশোনার মানোন্নয়নে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরির নির্দেশও দেন তিনি। চা-গ্রামে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে জেলাশাসক চিকিৎসা পরিষেবা, ওপিডি সার্ভিস, টেলিমেডিসিন পরিষেবা, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, ওষুধের স্টক, পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেন। নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসা পরিষেবা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কালনা ১নং ব্লকের নিভুজি বাজার এলাকায় পথশ্রী প্রকল্পে তৈরি হওয়া একটি ঢালাই রাস্তাও পরিদর্শন করেন। জেলাশাসককে এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখে বেজায় খুশি কালনার বাসিন্দারাও। সেতু তৈরির সিদ্ধান্তের খবর জেনে কালনার তালা, টোলা-সহ গোটা দশেক গ্রামের বাসিন্দারা জেলাশাসকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল জানান , ‘কালনা ২নং ব্লকে তালা গ্রামের একটি সেতু নতুন করে তৈরি হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যাতে কাজ শুরু করা যায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
❤ Support Us