Advertisement
  • এই মুহূর্তে ন | গ | র | কা | হ | ন
  • সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩

“তিনি নিজেই বিচারক, নিজেই ফাঁসুড়ে।” রাজ্যপালকে আক্রমণ শিক্ষামন্ত্রীর

“তিনি নিজেই বিচারক, নিজেই ফাঁসুড়ে।” রাজ্যপালকে আক্রমণ শিক্ষামন্ত্রীর

রোজই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের মাত্রা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোসের বাংলায় একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে পাল্টা আক্রমণ করলেন গত দিনের তুলনায় আক্রমণের মাত্রা আর একটু বাড়িয়ে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সংবিধান বহির্ভূত বক্তৃতা করেছেন। রাজ্যপাল কি আদৌ রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে পারেন?’’ রাজ্যপাল ‘পুতুলখেলা খেলছেন’ বলেও আক্রমণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি, সরকার মনোনীত উপাচার্যদের নিয়োগ না-করা নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হেনস্থার যে অভিযোগ করেছিলেন আচার্য, তারও বিরুদ্ধেও সরব হলেন ব্রাত্য। বললেন, ‘‘জঘন্য অভিযোগ করে উপাচার্যদের সম্মানহানি করা হচ্ছে।’’ তাঁর নিয়োগ করা পাঁচ উপাচার্য হুমকি পেয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেছিলেন রাজ্যপাল বোস। সেই অভিযোগ নিয়েও মুখ খুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বললেন, ‘‘ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন।’’ ব্রাত্য জানিয়েছেন, ওই পাঁচ উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। আর এর ফলে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত আর একটি  নতুন মাত্রা পেল।

শুক্রবার বিকাশ ভবনে ৩১জন রেজিস্ট্রারকে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডাকলেও এসেছিলেন মাত্র ১২ জন রেজিস্ট্রার। ব্রাত্যর অভিযোগ, ‘‘রাজভবনের হুমকির ভয়েই বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন রেজিস্ট্রাররা। ব্রাত্য বলেন, ‘‘শিক্ষাবিদদের মধ্যে হাড়হিম করা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন কে? কে ভয় দেখাচ্ছে? রাজার বাড়ি না বিকাশ ভবন?’’ বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, যে সব রেজিস্ট্রার বৈঠকে যোগ দেননি, তাঁদের শোকজ করা হতে পারে।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। যা ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত তুঙ্গে। রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওঁর (রাজ্যপাল) কথা শুনে চলবেন, তাঁদের জন্য আমি অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করব। আমি দেখি, কী করে আপনি মাইনে দেন!’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা এমনও বলেছেন যে, দরকারে তিনি নিজে রাজভবনের সামনে ধর্না দেবেন! এর পরই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় রাজ্যপালের একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করা হয়। পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিয়ো বার্তায় উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক নিয়ে সরাসরি কিছু কথা বলেছেন আচার্য। রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য চাই উপাচার্য। বাংলার শিক্ষা মন্ত্রক উপাচার্য নিয়োগ করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাদের নির্দেশের সমালোচনা করে সেই সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যা দেয়। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বলে, ‘‘আপনারা ভুল পদক্ষেপ করেছেন। আপনাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু বেআইনিই নয়, পুঁজিবাদী মানসিকতার পরিচায়ক।’’ সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরই সমস্ত উপাচার্যকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এক জন আচার্য হিসাবে আমি অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করি। যা নিয়ে সমস্যার শুরু। ওই নিয়োগকে শিক্ষা মন্ত্রক বলেছিল ভুল। কিন্তু হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, আমিই ঠিক।’’ ওই ভিডিয়োবার্তায় রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কেন আমি সরকার মনোনীত উপাচার্যকে নিয়োগ করিনি। তার কারণ, সেই উপাচার্যদের কেউ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ ছাত্রীকে হেনস্থা করেছেন, কেউ রাজনৈতিক খেলা খেলছেন। তা হলে বলুন, এমন উপাচার্য কি নিয়োগ করা উচিত হত? পাঁচ জন উপাচার্য পদত্যাগের পর আমাকে নিজে থেকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের জীবনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রকের মদতে সরকারি অফিসার এবং মুখ্যমন্ত্রীর আইএএস কর্তারা তাঁদের উপর চাপসৃষ্টি করছেন। তাঁদের আমি পদত্যাগ করতে বলিনি। তাঁরাই ভয় পেয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।’’

রাজ্যপালের ওই ভিডিয়ো বার্তার প্রতিবাদে শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেন ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘ওঁর একই অঙ্গে দুই রূপ। এত নৈতিকতা, এত আইনের শাসন মেনে চলার কথা বলেন, তিনি কি জানাবেন কোন আইন মেনে রাজ্য সরকারের বিরোধী বক্তব্য রাখতে পারেন? আচার্য নিজের ইচ্ছেমতো লোকজনকে বসাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরা কি সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে? পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত নন, এমন লোককেও উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। ইউজিসির নির্দেশিকায় তেমনটা নেই। ইউজিসিকে অমান্য করছেন, আদালতকে অমান্য করছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করছেনই রাজ্যপাল। আইন দিয়ে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুতুলখেলা খেলছেন। সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ সরকার মনোনীত উপাচার্যদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল বোস, সেই প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘জঘন্য অভিযোগ করে উপাচার্যদের সম্মানহানি করা হয়েছে। ছাত্রী হেনস্থার মতো গুরুতর কথা বলেছেন। আইন অনুযায়ী কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন কি? উনি বিচারক, উনিই ফাঁসুড়ে। উপাচার্যদের গৌরবের সম্মানহানি করলেন। কী লাভ হল ওঁর জানি না। যাঁদের উনি নিয়োগ করছেন, তাঁরা ধোয়া তুলসিপাতা, বাকিরা সব খারাপ? অপমান করার প্রক্রিয়া শুরু হল।’’
পাঁচ উপাচার্যের পদত্যাগ নিয়ে রাজ্যপাল যে অভিযোগ করেছেন, সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার বলেন, ‘‘পাঁচ উপাচার্যকে নাকি হুমকি দিয়ে  পদত্যাগ করানো হয়েছে। ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন। এমন কোনও কাজ হয়নি। আমাদের দফতরের কেউ এমন করার কথা ভাবেনি। পাঁচ উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি, কেউ কি হুমকি দিয়েছেন, তা প্রমাণ দিয়ে জানা। আর যদি না পারেন তা হলে বুঝব মিথ্যার স্রোত অব্যাহত রয়েছে।’’

ব্রাত্য বসু এর আগেও রাজ্যপালকে এই বিষয় নিয়ে আক্রমণ করে রাজ্যপালের সঙ্গে জেমস বন্ডের তুলনা টেনেছেন, আবার কখনও আচার্যকে ‘মত্ত হাতি’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। গত ৩১ অগস্ট রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনে তিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলে নেবেন। সেই বক্তব্যকে কটাক্ষ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এ তো মুড়ি আর চালভাজা এক হয়ে গেল।’’ রাজ্যপালকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিদূষকের প্রসঙ্গও টেনেছিলেন ব্রাত্য। শুক্রবার মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, এটা হয়তো সাময়িক খামখেয়ালিপনা। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা যে তুঘলকীয়। ভেবেছিলাম আলাউদ্দিন খিলজির মতো হবে। তিনি যেমন মাঝে মাঝে মৃগয়ায় যেতেন। ভেবেছিলাম সেরকম হবে। এর পুরোটাই যে মহম্মদ বিন তুঘলকের মতো, বুঝতে পারিনি।’’
এখন দেখার, ব্রাত্য বসুর এই মন্তব্যের কী জবাব দেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।


  • Tags:

Read by:

❤ Support Us
Advertisement
homepage block publication
Advertisement
homepage vertical advertisement mainul hassan publication
Advertisement
Advertisement
শিবভোলার দেশ শিবখোলা স | ফ | র | না | মা

শিবভোলার দেশ শিবখোলা

শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া স | ফ | র | না | মা

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া

সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।

মিরিক,পাইনের লিরিকাল সুমেন্দু সফরনামা
error: Content is protected !!