Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

দাঙ্গায় মদত, মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সজ্জন কুমার

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দাঙ্গায় মদত, মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সজ্জন কুমার

১৯৮৪ সালে নিজের দেহরক্ষীদের গুলিতে খুন হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিভিন্ন শহরে শুরু হয় শিখ-বিরোধী দাঙ্গা। কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে শিখদের হত্যার অভিযোগ ওঠে। দিল্লির সরস্বতী বিহারে শিখ সম্প্রদায়ের যশবন্দ সিং ও তাঁর ছেলে তরুণদীপ সিং-য়ের হত্যা মামলায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সজ্জন কুমারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালত। বুধবার বিশেষ বিচারক কাবেরী বাওয়েজা, প্রাক্তন কংগ্রসে সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সাজা ঘোষণা করা হবে।

‘অপারেশন ব্লু-স্টার’-এর ঘটনার জেরে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে খুন হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এর পরই দিল্লি রাজধানী এলাকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। নির্বিচারে খুন হন অন্তত ৩ হাজার লোক। যদিও বেসরকারি হিসেবে কেবল দিল্লিতেই হাজার তিনেক মানুষ দাঙ্গার বলি হয়েছিলেন। গোটা দেশ মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮ হাজার। সেইসময় দিল্লির রাজনগরেরই সাংসদ ছিলেন সজ্জন কুমার, তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা সংগঠিত করবার ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। প্রথমে পাঞ্জাবি বাগ থানা অভিযোগ দায়ের হয়, এরপর বিশেষ তদন্তদলের কাছে তদন্তের দায়বার হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আদালতে সজ্জনের বিরুদ্ধে খুনের চার্জ গঠন করা হয়। আদালতে সাজ্জন কুমারের পক্ষ থেকে আইনজীবী অনিল শর্মা দাবি করেন যে প্রাথমিকভাবে মামলায় প্রাক্তন সাংসদের নাম ছিল না। তিনি আরো জানান, বর্তমান মামলার উপর ভিত্তি করে সাজ্জন কুমারকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়, কারণ দিল্লি হাইকোর্টের একটি মামলার আপিল এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। উল্টো দিকে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের দাবি ছিল, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরই বিরাট সংখ্যক উন্মত্ত জনতা শিখদের উপরে হামলা করে। আর সেই সময়ই যশবন্তের বাড়িতে হামলা হয়। তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়। লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে। যশবন্তের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। দেখা যায়, সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে বহু তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।

সজ্জন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আদালত জানিয়েছে, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা শুধু শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় সরাসরি যুক্তই ছিলেন না, তিনি জনতাকে হিংসায় উস্কানি দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এই কারণেই সজ্জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হল। শিখ বিরোধী দাঙ্গায় অন্য একটি হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে তিহার জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন সজ্জন কুমার। এ দিন সরাসরি জেল থেকে তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়।

১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে গত চার দশকে অনেক রাজনৈতিক চাপানউতোর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বারবার উঠে এসেছে ইন্দিরা আমলের এমার্জেন্সি ও শিখ বিরোধী দাঙ্গার কথা। ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে চেয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু এতদিন মূল অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তেই ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, এবার কংগ্রেসের একজন বড়োমাপের নেতা সাজা পেতে চলেছেন। রায় ঘোষণার পর, দিল্লি শিখ গুরুদুয়ারা পরিচালন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীপ সিং খালন আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাজ্জন কুমার, যিনি ৪০ বছর আগে শিখ গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁকে অবশেষে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। আমি আদালতকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও ধন্যবাদ জানাই। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি সিট গঠন করেছিলেন, মামলাগুলোর পুনঃতদন্ত করিয়েছিলেন — তাতেই সুবিচার এলো। আমরা আশা করি, জগদীশ তিতলার ক্ষেত্রেও সঠিক বিচার হবে।’ উল্লেখ্য, জগদীশ তিলতাও প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ। শিখ দাঙ্গা মামলার প্রধান অভিযুক্ত। তবে বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!