Advertisement
  • স | হ | জ | পা | ঠ
  • জুন ২৩, ২০২৩

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান, তাঁর তীক্ষ্ণ মেধায় কিস্তিমাত হিটলারও

সাগ্নিক দাস
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান, তাঁর তীক্ষ্ণ মেধায় কিস্তিমাত হিটলারও

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আজকের বিজ্ঞানচর্চার জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। শিক্ষা থেকে শিল্প, বানিজ্যের যে কোনো সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর কাজ খুব সহজে সম্পন্ন করতে পারে আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিকতম আবিষ্কারটি। অনেকেই হয়তো চেনেন না এই অসাধ্য সাধনের পিছনে আসল কারিগরটি কে ? তিনি হলেন অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং। কম্পিউটার বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, গাণিতিক জীববিদ্যায় অবিস্মরণীয় তাঁর অবদান। আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান অনেকসময়ে কাজের ন্যায্য সম্মান পাননি। আজকের দিনেই সেই মানুষটির জন্ম। কিন্তু কজনই বা তাঁকে মনে রেখেছে?

অ্যালানের জন্ম ১৯১২ সালের ২৩ জুন ইংল্যান্ডের লন্ডনে । খুব ছোটো থেকেই তাঁর বিজ্ঞান পড়তে খুব ভালো লাগত। আর বিশেষ রকম ভাবে তাঁকে টানত গণিত। কেমব্রিজের পড়াশোনা সম্পর্কে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না তাই সেখান থেকে পরে তিনি কিংস কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।

নিঃসঙ্গ শৈশবকে সঙ্গে নিয়ে চলা অ্যালানের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত হল ক্রিস্টোফার মরকমের সঙ্গে তার পরিচয়। তিনিই তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যা, সংখ্যাতত্ত্বসহ অনেকে জ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষার সঙ্গে সংযোগ ঘটান। যাই হোক, পরে ১৯৩৭ সালে টুরিং চলে আসেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার ওপর গবেষণা করেন আলোনজো চার্চের অধীনে। ১৯৩৮ সালে সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি সরকারি কোড ও সাইফার স্কুলে যোগ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যাণ্ড যখন নাৎসি আক্রমণ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সেই সময় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন টুরিং। সেসময় জার্মানদের পরিকল্পনা কোনোমতেই বুঝতে পারছিল না চার্চিলের সরকার। কারণ তাঁরা তাঁদের যাবতীয় তথ্যের আদান-প্রদান অ্যানিগমা নামের একটা মেশিনের মাধ্যমে কোডিং-এর মাধ্যমে করত। টুরিং বলেন, এই যন্ত্রের ভাষা মানুষ বুঝতে পারবে না তাই প্রয়োজন বিকল্প যন্ত্র। তাই তিনি ও তাঁর গবেষক দল পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী মারিয়ান রেজোস্কির আবিষ্কৃত ‘বোম্বা’ মেশিন নিয়ে কাজ করে বোম্বে নামে একটি নতুন যন্ত্র তৈরি করেন । তীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে, ব্রিটিশ সরকার এ অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৪৬ সালে তাকে ‘অর্ডার অফ দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ উপাধি দান করে।

আলান মনে করতেন, যে কোনো গণনাযোগ্য গাণিতিক সমস্যাই কোনো যন্ত্র দ্বারা সমাধানযোগ্য, যদি তা অ্যালগরিদমে দেয়া হয়। তিনি নিজে যে ইউনিভার্সাল টুরিং মেশিন’ নামে তার তৈরি একটি যন্ত্র তৈরি করেন । তার আধুনিক রূপই হল কম্পিউটার। এছাড়াও বিজ্ঞান চর্চায় তাঁর এক অন্যতম অবদান হল টুরিং টেস্ট। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত ‘কম্পিউটার মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স’-এ প্রথম এ পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে তার গবেষণাপত্রই হয়ে ওঠে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল ভিত্তি।

অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষটির প্রতি রাষ্ট্র সুবিচার করেনি। সমকামিতার অভিযোগে তাঁকে এস্ট্রোজেন হরমোন সেবন করতে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার। অবসাদ কাটাতে যিনি একসময় দৌড়ানোর ওপর খুব গুরুত্ব দিতেন তিনিই এখন শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতায় ভুগতে শুরু করেন। গণিত সাধনার কাজ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন। রাষ্ট্রও তার সব গবেষণাপত্র, স্বীকৃতি গোপন করতে শুরু করে। এ বিষয়টি মানতে না পেরে ১৯৫৪ সালের ৮ জুন সায়ানাইড খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। তাঁর মৃত্যুর মৃত্যুর ৬০ বছর পর পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০১৩ সালে টুরিংয়ের রাজকীয় ক্ষমার দলিলে স্বাক্ষর করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটিও তার সম্মানার্থে ‘টুরিং অ্যাওয়ার্ড’ নামে নামকরণ করা হয়। তাঁর জীবনী নিয়ে ছবিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবদ্দশায়  বেশিরভাগ সময়ে অবহেলা আর উপেক্ষাই  পেয়েছেন এই বিরল প্রতিভাধর।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!