- মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
- নভেম্বর ৩, ২০২৩
বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আফগানদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ‘ক্যাপ্টেন’ শাহিদী
বিশ্বক্রিকেটে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ক্রমশ যেখানে পিছিয়ে পড়ছে, সেখানে দারুণভাবেই এগিয়ে চলেছে এশিয়ার আর এক দেশ আফগানিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হয়েও কম সময়ের মধ্যে উন্নতির ব্যাপারে যে কোনও দেশের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে আফগানরা। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত নিজেদের দেশে যেখানে খেলার সুযোগ পেতেন না রশিদ খান, রহমত শাহ, রহমানুল্লাহ গুরবাজরা, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানের এই উত্থান সত্যিই চমকপ্রদ।
চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছে হল্যান্ড। আফগানিস্তানও চমক দেখিয়েছে। হারিয়েছে তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে। আর এই তিন দেশকে হারিয়ে দারুণভাবেই রয়েছে সেমিফাইনালে দৌড়ে। আফগানিস্তানের এই শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে জয়কে এখন আর কেউ অঘটন হিসেবে দেখছেন না। তিন দেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে দৌড়ে দারুণ ভাবেই রয়েছে আফগানরা। আজ হল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতলেই সেমিফাইনালের লড়াই আরও জমিয়ে দিতে পারবে আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে রহমানুল্লাহ গুরবাজ, রশিদ খান, মুজিব–উর–রহমান, রহমত শাহদের অনেক অবদান। কিন্তু দলটাকে এক সূত্রে গেথে রাখার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদী। অথচ একসময় ক্রিকেটার হওয়ার কোনও কথাই ছিল না এই আফগান অধিনায়কের।
আফগানিস্তানের লোগার প্রদেশে জন্ম শাহিদীর। রাজধানী কাবুল থেকে লোগারে দূরত্ব ৮৭ কিলোমিটার। শাহিদীর বাবা মহম্মদ হাশিম শাহিদী ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। পদার্থ বিজ্ঞানের ওপর ৪৪ টি বই লিখেছেন হাশিম শাহিদী। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে হাসমতুল্লাহ শাহিদী বড় মাপের বিজ্ঞানী হোক। তাই ছোটবেলা থেকেই ছেলের পড়াশোনার ওপর বেশি জোর দিতেন হাশিম শাহিদী। কিন্তু বইয়ের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল না হাসমতুল্লাহ শাহিদীর। সারাদিন বলিউড সিনেমা আর কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাটিং নিয়েই পড়ে থাকতেন।
বাবার ভয়ে অবশ্য পড়াশোনা করতে বাধ্য হতেন হাসমতুল্লাহ। কিন্তু সেভাবে মনোযোগ বসাতে পারতেন না। খেলার প্রতি তাঁর বেশি টান ছিল বেশি। তবে বাবাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষাও দিয়েছিলেন হাসমতুল্লাহ। তাঁর কথায়, ‘বাবা চেয়েছিলেন আমি শুধু পড়াশোনাতেই মনোযোগ দিই। বাবাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাতেও বসেছিলাম। কিন্তু আমার মন প্রাণ জুড়ে ছিল ক্রিকেট। স্কুল জীবন শেষ করার পরপরই অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা করে নিয়েছিলাম। অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না।’
যদিও ছেলের ক্রিকেটে উত্থান দেখে যেতে পারেননি হাসমতুল্লাহর বাবা হাশিম শাহিদী। ২০১৬ সালে একদিন একটা ম্যাচে দিনের শেষে ১২০ রানে অপরাজিত ছিলেন হাসমতুল্লাহ। দিনের শেষে বাবাকে ফোন করেছিলেন। হাশিম ছেলে হাসমাতুল্লাহকে বলেছিলেন, দ্বিশতরানের জন্য দোয়া করতে। হাসমাতুল্লাহদের বাড়িতে সেদিন কয়েকজন অতিথি এসেছিলেন। হাশিম ফোন ধরে ছেলেকে বলেছিলেন, ‘তুমি দ্বিশতরান পূরণ কর, তারপর কথা হবে।’ এরপর ফোন কেটে দিয়েছিলেন হাশিম শাহিদী। ওটাই ছিল তাঁর ছেলের সঙ্গে শেষ কথা। তার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান হাসমাতুল্লাহর বাবা।
মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসমাতুল্লাহ বাড়িতে ছুটে আসেন। সেই ম্যাচে আর খেলা হয়নি হাসমাতুল্লাহ শাহিদীর। সেই ঘটনার তিন বছর পর ২০২১ সালে মার্চে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টেস্টে দ্বিশতরান করেন হাসমতুল্লাহ শাহিদী। আর সেই ইনিংস তিনি উৎসর্গ করেন বাবাকে। ওই দ্বিশতরানের ইনিংসের দুমাস পর আফগানিস্তানের টেস্ট ও একদিনের দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান হাসমতুল্লাহ। আর ঠিক তার তিন মাস পরেই মায়ের মৃত্যু হয়।
বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ৬ ইনিংসে ২২৬ রান করেছেন হাসমতুল্লাহ। প্রতিযোগিতায় আফগানদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। শেষ আটটি একদিনের ম্যাচে চারটিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তাঁর কাঁধেই দলকে সেমিফাইনালে তোলার দায়িত্ব। শাহিদীও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়ার।
❤ Support Us