- মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
- ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
পরিবর্তিত মানসিকতাই এগিয়ে দিয়েছে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলিকে

২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ অনেক কারণেই ধাক্কা খেয়েছে। প্রথমত, এটি ছিল ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার ‘হোস্টিং রাইটস’ এবং ঘুষের অভিযোগ। কাতারে বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম তৈরি করা শ্রমিকদের মানবাধিকার শোষণের খবরও একাধিকবার শিরোনামে উঠে আসে। কিন্তু ফুটবল নিজের নিজের সঙ্গে করে যে উন্মাদনা নিয়ে এসেছে, তা সবাই সহ্য করতে পারেনি ।
বিশ্বকাপে শুরু হওয়ার তৃতীয় দিনের মাথায় বড় অঘটন। সৌদি আরবের কাছে হার ফুটবল জায়ান্ট আর্জেন্টিনার। শুধু এই একটা অঘটন নয়, তারপর থেকে ঘটে চলেছে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে বিপর্যয়ের বিশ্বকাপে পরিণত করেছে। সৌদির কাছে আর্জেন্টিনার হার দিয়ে শুরু। তারপর আছে আরও অঘটন। ফ্রান্সকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে তিউনিসিয়া। তিউনিসিয়ার কোচ জলেল কাদরি ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর দল বিশ্বকাপে নকআউটে উঠতে না পারলে তিনি কোচের পদ ছেড়ে দেবেন। যদিও কার্থেজ ঈগলরা শেষ ষোলোয় পৌঁছাতে পারেনি। ডেনমার্কের মতো দলের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০–১ ব্যবধানে হারলেও ফ্রান্সকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে তিউনিশিয়া। যদিও সেই জয়েও তাদের নক আউটের টিকিট মেলেনি। কারণ অস্ট্রেলিয়া ডেনমার্ককে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট পেয়ে এগিয়ে যায়।
তিউনিশিয়ার থেকেও এবারের বিশ্বকাপে সবথেকে বড় চমক দিয়েছে ‘ব্লু সামুরাই’রা। জার্মানি এবং স্পেনকে বড় ধাক্কা দেয় এশিয়ার উদিত সূর্যের দেশ জাপান। এই বিশ্বকাপে এশিয়ান দলের জন্য এটা সেরা সাফল্য। জাপান সামনে থেকে এশিয়াকে নেতৃত্ব দেয়। ‘ব্লু সামুরাই’রা জার্মানির বিরুদ্ধে ০–১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে দুটি গোল করে ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। কোস্টারিকার কাছে জাপানের নাটকীয় ০–১ ব্যবধানে পরাজয়ে এবং স্পেনের বিপক্ষে জার্মানির ড্রয়ের পর, গ্রুপ অফ ডেথের খেলা জমে ওঠে। স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকে শেষ ষোলোর টিকিট জোগাড় করে জাপান। যদিও শেষ ষোলোর লড়াইয়ে গতবারের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার সাথে সমানে সমানে লড়াই করে টাইব্রেকারে হেরে যায়।
জাপানের পাশাপাশি এশিয়ার আর একটা দেশের কথা বলতে হবে। সেটা হল দক্ষিণ কোরিয়া। সন হিউং-মিনের নেতৃত্বে দক্ষিণ কোরিয়া উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রথম খেলা ড্র করে। লাতিন আমেরিকার পাওয়ার হাউসকে একটা গোলও করতে দেয়নি। ঘানার কাছে ৩–২ ব্যবধানে হারলেও কোরিয়ানরা আশা হারায়নি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে খেলায় তারকাখচিত পর্তুগালকে হারিয়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে জায়গা করে নিয়েছিল কোরিয়া।
গোটা প্রতিযোগিতায় ক্যামেরুন ছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দল। প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ডের কাছে হারলেও সার্বিয়ার সাথে ৩–৩ ড্র করে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভিনসেন্ট আবুবাকেরের দুর্দান্ত গোলের সৌজন্যে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলকে পরাজিত করে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়।
জাপানের মতো এবারের বিশ্বকাপে বড় চমক দিয়েছে মরক্কো। সব বিশেষজ্ঞ, বুকি, অনুরাগীদের হিসেব উল্টে দিয়েছে এই আফ্রিকান দেশ। শুধু বেলজিয়ামকে ২–০ ব্যবধানে হারানো কিংবা ক্রোয়েশিয়ার সাথে গোলশূন্য ড্র করাই নয়, শেষ ষোলোর ম্যাচে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারায়। তারপরে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে চমক দিয়ে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে এসেছে।
একসময় বিশ্ব ফুটবলে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলির দাপট ছিল সবথেকে বেশি। এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলি বড় শক্তির বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই হেরে বসত। তাদের মানসিকতা ছিল, বিশ্বকাপে অংশগ্রহনই তাদের কাছে প্রাধান্য পেত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। ভয় পাওয়ার দিন এখন শেষ। সমানে সমানে সমানে লড়াই করছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানির মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের চোখে চোখে ফুটবল খেলছে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলি। আসলে মানসিকতার পরিবর্তন আর অদম্য সাহস এগিয়ে দিয়েছে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলিকে।
মানসিকতা পরিবর্তনের কারণ আছে। আগে এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলির ফুটবলাররা খুব বেশি ইউরোপের ক্লাবে খেলার সুযোগ পেতেন না। এখন সেই সুযোগ অনেকটাই বেড়ে গেছে। জাপান, কোরিয়ার ফুটবলাররা কিংবা আফ্রিকান দেশগুলির ফুটবলাররা ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে নিজেদের দক্ষতার যেমন উন্নতি করেছেন, তেমনই অনেক বেশি সাহসী হয়ে উঠেছেন। জাপানের কোচ হাজিমে মোরিয়াসুকেও অবাক করেছে নিজের দলের ফুটবলারদের পারফরমেন্স। তিনি বলেন, ‘সময় বদলে গেছে। জাপান, কোরিয়ার ফুটবলাররা নতুন ধরনের ফুটবল খেলছে। ফুটবলাররা আর আমাদের মতো নার্ভাস নয়।’ মরক্কোর প্রধান কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই একটা ‘পরিবর্তিত মানসিকতার’ কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘কেবল যোগ্যতা অর্জনের জন্য নয়, আরও ভাল কিছু করার জন্যই আমরা বিশ্বকাপ খেলতে এসছি। সমস্ত ইউরোপীয় কিংবা লাতিন আমেরিকান দলের মতো ফলাফল পেতে এবং তাদের অনুকরণ করতে চেয়েছিল ফুটবলাররা। তারই সুফল এটা।’
❤ Support Us