- দে । শ
- এপ্রিল ১৭, ২০২৩
শক্তির যোগানে পুননর্বীকরণেই আস্থা । দেশের শেষ তিন পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দৃষ্টান্ত জার্মানির
জার্মানির তিন-তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্র সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইসার ২, এমসল্যান্ড এবং নেকারওয়েস্টেইম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
জার্মান সরকারের এই পদক্ষেপকে ঘিরে জার্মানিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুতের বিরুদ্ধে গত ৬০ বছর ধরে জার্মানির পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা ধারাবাহিকভাবে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, জার্মানির পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলি বন্ধ করতে হবে। সেই দাবি পূরণ হওয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুতের বিরোধিতায় আন্দোলনরত নাগরিকরা যারপরনাই খুশি।
তবে বিরোধী শিবিরও রয়েছে, যাঁরা পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিবাদে সামিল। কনসারভেটিভ শিবিরের রাজনীতিকদের বক্তব্য, দেশের পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কার্যত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়বে, যা কোনওভাবেই কাম্য নয়।
তবে এর বিপরীত মত পোষণ করেছে ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের বক্তব্য, পারমাণবিক শক্তিকে আঁকড়ে ধরে থাকাটাই অযৌক্তিক। কারণ সৌরবিদ্যুৎ কিংবা বায়ুবিদ্যুতের চেয়ে পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের দাম অনেকটাই বেশি।
এদিকে জার্মানির সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রগুলি চালু রাখাটা অত্যধিক ব্যয়সাপেক্ষ। এই খাতে যে খরচ হচ্ছিল, পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তি উৎপন্ন করতে সেই টাকা খরচ করা যেতে পারে।
জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিসের দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে জার্মানির মোট বিদ্যুতের অর্ধেক অথবা ৪৪ শতাংশ মিলেছে পুনর্নবীকরণ শক্তি থেকে। মোটে ৬ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মিলেছে পারমাণবিক বিদ্যুতের মাধ্যমে।
জার্মানির গ্রিন ইকোনমি দফতরের মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক জানিয়েছেন, আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০৩০ সালের ভিতর জার্মানির ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে পুননর্বীকরণ যোগ্য শক্তি। এজন্য আইন সহজ করা হবে, যাতে সৌরচালিত ও বায়ুচালিত বিদ্যুতের পরিকাঠামো তৈরি করা যায়। এব্যাপারে গ্রিন পার্টির পরিবেশ মন্ত্রী স্টেফি লেমকে বলেছেন, জার্মানির পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলি বন্ধ হওয়ার ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও এড়ানো গেল।
এদিকে পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে জার্মানির নাগরিকরা দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জমে উঠেছে সরকার পক্ষ বনাম বিরোধীদের রাজনীতিও। আর জার্মানির সংবাদপত্রগুলিতেও চলেছে জোর বিতর্ক। জাপানের ফুকুশিমাতে পারমাণবিক বিদ্যুতের কেন্দ্রে ২০১১ সালেই জার্মানির সরকার সেদেশে পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ উদ্যোগী হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত ১২ বছর পরে বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
❤ Support Us