Advertisement
  • গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
  • জুন ৫, ২০২২

কাঁথা

লাইন বাঁকা হতো না কখনও। কাঁথার মতো জীবনটাও সেলাই করে চলেছে সে!

খালিদা খানুম
কাঁথা

অলঙ্করণ: দেব সরকার

বৃষ্টির বিরাম নেই। মিহি আটার মতো বৃষ্টির দানা সকাল থেকে ঝরছে তো ঝরছেই। আটা চালার চালুনি থেকে আটা চালার সময় যেমন মিহিনভাবে ঝরে, তেমনি ভাবে। আকাশটা যেন কেউ অজস্র ফুটো করে চালুনি বানিয়ে দিয়েছে। কাল থেকে শুরু হয়েছে। গাছপালাগুলো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ডাল পাতার চলন নেই । তারাও যেন ভিজতে ভিজতে হাঁফিয়ে উঠেছে। সালেহা ভেবেছিল আজ মনে হয় সূর্য্য না উঠলেও কিছুটা আটা চালুনি বন্ধ করবে আল্লা, কিন্তু আকাশের অবস্থা যেমন তেমনই।
সালেহাদের একটেরে একটা বারান্দা সহ তিনটা ঘর। একটা ঘর সালেহার, বাকি দুটো দুই ছেলের ভাগে একটি করে ঘর। বিয়ে দেবার পরই ভিনভাতে করে দিয়েছে তাদের। ঘরের সামনের বারান্দাটুকু নিজেরা নিজেদের জিনিসপত্র রেখে অধিকার বজায় রেখেছে।জুতোর র‍্যাক, মাজা বাসনের ঝুড়ি, বালতি বদনা, শুকনো জ্বালানি, কতকিছু যে রাখা তা বলে শেষ করা যাবে না। রান্না করার জায়গা একটু দূরে। রান্নাঘর বলতে বাঁশকঞ্চি দিয়ে বেড়া করে, টালির চাল। তিনজনের তিনখান চাল। গতকাল পর্যন্ত সেই টালির চালের নীচে রান্না করা সম্ভব হয়েছে। আজ আর হবে না। বৃষ্টির ছাঁট না থাকলেও ভিজে বাতাসে যে কটা পাটকাঠি আর জ্বালানি কাঠ বাঁশ ছিল, তা জ্বলার অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। চুলার মাটি ভিজে গেছে। আগুন জ্বালালে কেবল ধোঁয়া ছাড়বে। কীভাবে ভাত ফোটাবে, তাই চিন্তা।

খাটের উপর বসে স্টিলের জামবাটিতে বসে চানাচুর দিয়ে মুড়ি খাচ্ছিল তাহমিনা। খাটের উপরে কাঁথা বালিশ ডাঁই করা, খাটের বাতায় কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রাখা। খাটের উপরের দেওয়ালে চোখ রাখলে মনে হবে কোন সূচীকর্মের এক্সজিবিশনে চলে এসেছি। বাঁধাই করা ফ্রেমে জোড়া টিয়াপাখি, পদ্মফুল গোলাপ ফুল, প্রথম কালেমা, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে’, ফুলের খাঁচায় প্রজাপতি। খাটের নীচে সংসারের গল্প। পায়ার নীচে দুটো করে থান ইট দিয়ে খাটের নীচের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। সেই পরিসরে সালেহার সংসার। কী নেই সেই পরিসরে। চাল ডাল আটার আরও নানারকম প্রয়োজনীয় জিনিসের ডিব্বা থেকে, লেপবালিশের বাক্স। দিনে তিনচার বার সালেহাকে খাটের নীচে গুঁড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়।

তাহমিনা মুড়ি চিবাতে চিবাতে জানলা দিয়ে বাইরের ঝিম ধরে থাকা আকাশটাকে দেখছিল। জানলার সামনে রাস্তা। রাস্তায় কোন জনমানুষ নেই। সোহেল রুবেল নাসিমা কী করছে, এটা চিন্তা করতে গিয়ে তার সালেহার দিকে নজর পড়লো। সালেহা তখন বিশাল একটা পুরনো কাপড়ের পোঁটলা নিয়ে বসেছে।

– কী করাবা নানি? তাহমিনা এতগুলো পুরনো কাপড় দেখে উৎসুক হয়ে উঠে।
– কাজ নাই বুবু, দেখি একটা কাঁথার কাপড় জোগাড় করতে পারি কী না। সারাদিন বৃষ্টি তো আর থামবে বলে ইশারা দেখি না।
– আমিও কাঁথা পাতবো। তাহমিনা খাটের থেকে নীচে নামার চেষ্টা করে।
সালেহা বকা দেয়।
তাহমিনা আপত্তি করে, বলে – তুমি একা পারবা না,আমি আসি।
সালেহা হেসে ফেলে। পাকা বুড়ির মতো কথা তাহমিনার। বলে – তুই মুড়ি খাওয়া শেষ কর, তারপর।

কাপড়ের পোঁটলা থেকে কতকিছু বের হতে থাকে। পুরাতন শাড়ি, শায়া, চুড়িদার, ওড়না। পুরানো কাপড়ের অন্যরকমের গন্ধ। ন্যাপথলিন মেশানো স্মৃতির গন্ধ। এক-একটা কাপড় দেখলেই মনে পড়ে যায় কত কিছু। নীল রঙের ছাপা শাড়িটা বড়ছেলের প্রথম দিকের রোজগারের টাকায় কেনা। তার নীচের সবুজ তাঁতের শাড়িটা, রুবিনা ভাবির দেওয়া। তারপাশের ঘিয়ে রঙের শাড়িটা ফেরদৌসীর বিয়ের সময় কেনা। সালেহা শাড়ি কাপড়গুলোর উপর হাত বুলাচ্ছিল, এই পোঁটলার ভেতর কেবল যেন পুরানো কাপড় নেই, তারা সারা জীবনখানি যেন এই পোঁটলার মধ্যে। কতবার কতকিছু কাঁথাতে লাগিয়ে দেবে ভেবেও রেখে দিয়েছে। স্মৃতি বড় আপন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সালেহা। ঘিয়ে রঙের কাপড়টা কাঁথার উপরে দিলে ভালো মানাবে সুতোর রঙ। নীল আর লাল সুতোতে সেলাই দিলে দেখতে ভালো লাগবে। সবুজ তাঁতের শাড়ির পাড়ে বর্ডার করবে কাঁথার। ঘিয়ে রঙের কাপড়ের নীচে লুঙ্গি ভাঁজ করা। কাপড়টা তুলে নিয়ে আসতেই সেটি বেরিয়ে পড়ে।
তাহমিনা উপর থেকে বলে – নানি এটা নানার লুঙ্গি?
সালেহা লুঙ্গি গায়ে হাত বুলায়, বলে – হ্যাঁ বুবু।

ছোট ছোট চেকের আকাশি নীল রঙের লুঙ্গি। লুঙ্গির আকাশি নীল রঙ হারিয়ে কালচে নীল। এই লুঙ্গিটা পরেই সকালে কাজে গিয়েছিল জাভেদের আব্বা, এই লুঙ্গিটা পরেই ফিরে এসেছিল বিকালে, অনড়, মৃত। হাই ভোল্টেজ কারেন্টে শক। হাসপাতালে মৃত ঘোষণা হয়েছিল। তখন জাভেদের বয়স বারো। তারপরে মাজেদ সাত। তাহমিনার মা ফেরদৌসী ষোল। মাধ্যমিক দেবে।

লেদ কারখানার কালি ময়লার দাগ এখনও লেগে আছে। এই একখানি স্মৃতি আছে লোকটার বাকি জামাকাপড় লুঙ্গি গেঞ্জি জাভেদ মাজেদের বড় হতে কাজে লেগে গেছে। লুকিয়ে রাতের বেলায় রহিমার কাছে যেত সালেহা। সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা আর সত্তর কিলো ওজনের মানুষের জামা সেলাই করে বারো বছরের জাভেদের মাপমতো করার চেষ্টা করত রহিমা।
– ভাবি, কাউকে বলেন না যেন। আল্লার কিরা। মুখ দেখাতে পারব না কুনখানে।
রহিমার হাত ধরে বলতো সালেহা।

– কী যে বলেন ভাবি। আপনার কষ্ট দেখলে বুক ফেটে যায়। নাবালক বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কী করে চলছেন, তা বলার না। এমন নসিব শত্রুর যাতে না হয়।

সালেহা চুপ থাকে অল্প। হয়তো বা গলায় কান্না আটকে আসে। সামলে নিতে সময় লাগে। চোখের পানি আর কত ফেলবে!
রহিমা বলে – ভাবি একটা কথা চিন্তা করি খালি, নাদির চাচা জাভেদ মাজেদদের তো দাদা হয়। লোকটার জান কী মানুষের জান না? এইরকম কচি বাচ্চাগুলোকে দেখেও মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারে! শরিকানা ভাগ না হয় নাই দিবে। বাড়ির একটুখানি অংশ দিতে পারত চাচা। এতিমের থেকে কম না ওরা। এজিদের জান চাচার।

শ্বশুর নামক লোকটাকে সালেহার রাক্ষসের মতো লাগে। কিন্তু সে কথা সে ভাবতে পারে না। জোব্বা পরা মানুষটির গলা শুনেছিল সালেহা, যেন দৈববাণীর। ‘ তুমি এই বাড়ির কোনকিছুতে কোন ভাগ পাবে না। তুমি আমাদের কেউ নও এখন’। সালেহা কিছু ভাবার আগেই দৈববাণী শুনেছিল আবার, ‘ আমি কোন বেশরিয়তী কাজ করছি না।এটাই শরিয়তের নিয়ম, নবী করিমের আদেশ’!

সালেহা বলে – কী বলব ভাবি। আত্মীয় কুটুম অনেক বলতে তাও থাকতে দিয়েছে ক’বছর। বলেছে যত তাড়াতাড়ি বাড়ি করে বেরিয়ে যেতে। আমি না হয় পর, জাভেদের গায়ে ও উনার রক্ত বইছে। জাভেদের আব্বা মারা যাবার পর কষ্ট তো পেয়েছিলাম, কিন্তু শ্বশুরের কথায় মনে হয়ে ছিল ভাবি মরে যায়। এই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে ভাইদের বাড়ি যাব! তারা কী আমার ভার নেবে আর? স্বামী মরে গেলে, কেউ থাকে না মেয়েছেলের। শ্বশুরবাড়িও পর, ভাইরাও পর। ভাইদের বাড়ি না গেলে যাবো কোথায়! মনে হয়ে ছিল মরে যাই। মুখে বিষ দিয়ে মেরে দি সবাইকে। তারপর আবার মাথায় এলো, আত্মহত্যা করলে যাবো কোথায়! সেখানেও তো ঠাঁই হবে না কোনখানে। জানি না বুবু কবে এই কষ্টের শেষ হবে। আল্লা কী মুখ তুলে চাইবে কখনও! আমার তো জীবনে আর কিছু পাবার নাই, কিন্তু ব্যাটাগুলা কী যে করবে। ফেরদৌসীর বিয়ে দিতে হবে। একা সংসার। জাভেদ বলে বাইরে যাবে জরির কাজ শিখতে। সোভান ভাই গুজরাটে কাজ করে জরির কারখানায়, ওই নিয়ে যাবে বলেছে।

অলঙ্করণ: দেব সরকার

রহিমা সেলাই মেশিন চালায়, জাভেদের আব্বার জামা কাটছাঁট করে জাভেদের পরার উপযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। সেলাই মেশিনের শব্দে সালেহার অনেক কথায় কানে যায় না রহিমার। রহিমা সবটাই জানে। ঘরের পাশের প্রতিবেশী। সালেহা সৈয়দ বাড়ির বৌ, রহিমারা বিশ্বাস বাড়ি। দু’পরিবার বাড়ির উচ্চতা সমান, ঘরের দেওয়ালের মেটিরিয়াল এক হলেও কেবল সৈয়দ বাড়ির বৌ হবার জন্য সালেহা আর তার জা রা বাড়ির বাইরে আসে না বেশি। দেখাদেখি হলে সালাম দেওয়া ছাড়া আর কোন সুখ দুঃখ এর কথা হয় না। পাড়াতে একটি মাত্র বাড়ি সৈয়দদের হওয়ায় বাড়িখানি ছিল দ্বীপের মতো একা।
সেই বাড়ির ছেলে মারা গেল এক্সিডেন্টে। সবাই জানাজা পড়লো, মিলাদে গেলো,সদ্য বিধবা জাভেদের মাএর জন্য সহানুভূতি জানালো,তারপর সরে গেলো। সৈয়দ বাড়ির সুখ দুঃখ গুলো আর সব বাড়ির মতো হলেও তাদের সুখদুঃখগুলো মানুষ ভাগ করে নিতে ভয় পেতো। তারা যে নবীজির বংশধর!

কাঁথার মতো জীবনটাও সেলাই করে চলেছে সে! ছেলেরা সাবালক হবার আগেই কাজে লেগেছিল। জাভেদ গুজরাটে। মাজেদ হাটের দিন শশা পেয়েরা নিয়ে বিক্রি করে। পিঁপড়ের মতো সঞ্চয় করে সালেহা তিন কামরার ঘর তোলে।

নবীজির বংশধর বলেই কেউ সালেহার পাশে দাঁড়াতে পারে নি। কেউ প্রকাশ্যে জাকাতের টাকা দিতে পারে নি। কেউ জাভেদের দাদাকে বলতে পারেনি, শরিয়তের দোহাই দিয়ে নাবালক ছেলেদের, অসহায় বিধবাকে সবরকম সাহায্য থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না আপনি। মানবিকতার প্রশ্ন আসে নি। কারন নাদির সাহেব শরিয়ত ছাড়া কাজ করেন না। তিনি বলেছেন, মৃত ছেলে বৌ তার সম্পত্তির অংশীদার নয়। অথচ সবাই জানে, সালেহাদের ভাত হলে তরকারি হয় না। ফেরদৌসীর স্কুল বন্ধ হয়ে যায় বই কেনার টাকার অভাবে। সালেহা পুরনো শাড়ি লোকের বাড়ি কোন বাহানায় চেয়ে এনে নিজে পরে। জাভেদ মাজেদরা কারু বাড়িতে গিয়ে বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা, হয়তো কোনদিন সেখানে তাকে খেতে দিয়েছিল। হয়তো বা বলে, চাচি সকাল থেকে খাইনি কিছু।

জোহরের আজান পড়ে বলে বোঝা যায়, দুপুর হয়েছে। সালেহা আর তার দুই বৌ কাঁথার কাপড় বিছাতে ব্যস্ত। পুরাতন কাপড় গুলো টানটান করে একটা একটা পরত তৈরি করছিল সালেহা আর তার বড়বৌ। পাঁচহাতি কাঁথা। মাজেদের বৌ নতুন এবাড়িতে বছরখানেক বিয়ে হয়েছে তার। সে বলে – এত বড় কাঁথা সেলাই করতে পারবেন মা?
সালেহা হাসে, বলে – তোরাও হাত লাগাবি, তাহলেই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

বড়বৌ বলে – তাহলেই হয়েছে মা। সেদিন সোহেল স্কুলে যাবে, দেখি জামার একটা বোতাম ছেঁড়া। আমি বললাম, ছোট আমার হাত জোড়া একটু সেলাই করে দাও। ওমা বুঝতেই পারে না কী ভাবে সেলাই করবে। আপনি ভিনভাতে করে দিয়েছেন বলে ভাতটুক রাঁধতে শিখেছে, না হলে তাও শিখতো না।
সালেহা হেসে উঠে বড়বৌ এর কথাতে। ছোট বৌ লজ্জা পায়।

সালেহা বলে – শিখে যাবে সব। বাপের বাড়িতে কেউ কিছু শেখে নাকি। নিজের সংসারে এলে সবাই সবকিছু শেখে।
বড় বৌ বলে – কী সেলাই দেবেন মা? নকশা করবেন নাকি?
তারপর ছোট বৌএর দিকে ঘুরে বলে – জানিস, মা কত রকম সেলাই জানে? পাড়ায় মা-এর সেলাইয়ের কাঁথা পাবার জন্য লাইন দেয় সবাই।

অন্ধকার দিন গুলোতে কাঁথা সেলাই করে দিন চালিয়েছে সালেহা। পাঁচহাতি কাঁথা সেলাই করতে দুশ টাকা আর একটা পুরাতন শাড়ি। অল্প শীতে কাঁথা লাগে গায়ে দিতে। মেয়ে বিদায় -এ কাঁথা লাগে। ছোট বাচ্চার কাঁথা লাগে বেশি। হাগামুতাতে ভিজে যায়। ছোট বাচ্চার ছোট কাঁথা। ছোট বাচ্চার কাঁথা সেলাই করতে পঞ্চাশ টাকা। কেউ আবার আবদার করত ফুল সেলাই করে দিতে। পয়সা ধরে দিত। সালেহা বুঝতো, দাক্ষিণ্য।

ক্রশ, হেম, শিকল, কাশ্মীরি ফোঁড়, আরো কত রকম সেলাই। রাতজেগে করত সে। লাইন বাঁকা হতো না কখনও।
কাঁথার মতো জীবনটাও সেলাই করে চলেছে সে! ছেলেরা সাবালক হবার আগেই কাজে লেগেছিল। জাভেদ চলে গেল গুজরাটে। মাজেদ স্কুলের সামনে, হাটের দিন শশা পেয়েরা নিয়ে বিক্রি করে। পিঁপড়ের মতো সঞ্চয় করে সালেহা তিন কামরার ঘর তোলে। মেয়ে -ছেলেদের বিয়ে দিয়ে একটু একটু করে থিতু হতে হতে কষ্টটাই গা সহা হয়ে গিয়েছে যেন! কষ্ট আর অনুভুতিতে আসে না।

নীল ছাপা কাপড়টা বিছিয়ে দেয় সালেহা। সবুজ তাঁতের পাড় ছিঁড়ে রাখে কাঁথার পাড় করার জন্য। ঘিয়ে কাপড়টা টানটান করে পাতার আগে কালচে ময়লা পড়া লুঙ্গিটাও বিছিয়ে দেয়।

বড় বৌ অবাক হয়ে দেখে। সে জানে এই লুঙ্গিটা তার শ্বশুরের শেষ স্মৃতি। সে কিছু বলতে চায়।
সালেহা বলে – হাত চালা তাড়াতাড়ি। নামাজ ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। নামাজ পড়ে আসিস আবার। টান সেলাইটা না দিলে মেঝে থেকে তোলা যাবে না। এবার সবাই তোরা হাত লাগাবি সেলাইতে।

বাইরে বৃষ্টির কমতি নেই এখনও। একখানা গামছা মাথায় দিয়ে কল পাড়ের দিকে যায় সালেহা। তাহমিনা সোহেল বারান্দার সামনে অল্প জমা পানিতে নৌকা ভাসাতে ব্যস্ত। একটু একটু করে নৌকা এগোচ্ছে। হাততালি দিয়ে নাচছে তারা। সুর করে গাইছে – যা বৃষ্টি ঝরে যা লেবুর পাতায় গরম চা।

সালেহার মন যেন কাগজের নৌকায় চড়া দূর দেশের যাত্রী। জীবনের কাঁথা সেলাই করতে করতে সে ক্লান্ত।

♦–♦♦–♦♦–♦

লেখক পরিচিতি: জন্ম ১২মার্চ ১৯৮৭। বেড়ে উঠা মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম হরিহরপাড়ায়। পেশায় -পশুচিকিৎসক। নেশা – মানুষদেখা, কালো অক্ষরে মানুষের জীবন আঁকা।এই নেশার টানেই সাদা কাগজে হরেকরকম জীবনের গল্প ক্যানভাস বন্দী হয়। প্রকাশিত গ্রন্থ – জোৎস্না রাতের উপকথা, মন খারাপের বাতাস, যুগলবন্দি,  ছেঁড়াপাতা নীল কলম 

 


গল্পের সমস্ত চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই, কেউ যদি মিল খুঁজে পান তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ।



❤ Support Us
error: Content is protected !!