- গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
- মে ২২, ২০২২
করলা সমস্যা
সংসার মানে সঙের পর্যাপ্ত ব্যবহার ,যে না পারে তার তো পগারপার ।মনে মনে যাই বলি না কেন সাম্রাজ্য রক্ষা করাটা পুরুষের পক্ষে ভীষণ জরুরি ।

অলঙ্করণ: দেব সরকার
উঠোনের এককোণে একটা সয়ম্ভূ করলা গাছ ‘টুকি’ বলে যেই উঁকি মারল অমনি মহারানি হুকুম হাঁকালেন, গাছটাকে ওপরে তুলে দেবার ব্যবস্থা কর । সংসার মানে সঙের পর্যাপ্ত ব্যবহার যে, না পারে তার তো পগারপার ।মনে মনে যাই বলি না কেন সাম্রাজ্য রক্ষা করাটা পুরুষের পক্ষে ভীষণ জরুরি । গা থেকে আঁতুড়ের গন্ধ যায়নি এমন একটি শিশুর জন্য এত আদিখ্যেতা আমার সহ্য হয় না । অবশ্য এবিষয়ে ওনাদের একচেটিয়া কারবারে, আমরা যে হুকুম মহারানি !
একদিন নেহাত বিদ্রোহ প্রশমন করতে কোমর বেঁধে লেগে গেলাম । একটা দড়ি কার্নিশ থেকে ঝুলিয়ে দিলাম করলা শিশুর উদ্দ্যেশ্যে । দেখ বাপু গোল কর না সংসারে । হিম্মত থাকে লাফিয়ে ওঠো । এদিকে আবার তিন শো পঁয়ষট্টি দিনের তিনশো চৌষট্টি দিনই রবিবাবু একবার উঁকি মেরেও দেখেন না – কী ভাই পো কেমন আছ ?
আমার বাসা বাড়িটির উত্তর মুখো বারান্দা । তারই উত্তর দিকে একটুখানি মাটির গন্ধভরা বারো ফুট রাস্তার ওপাশে জমজমাট বাড়ি শক্তিবাবুর । পাড়ায় বেশ নাম ডাক আছে , স্বাস্থ্য দফতরের কর্মচারি তিনি । আমার সঙ্গে একটুখানি দশআনা ছ-আনা বন্ধুত্বের সম্পর্ক । মানে মাঝে মাঝেই আদা আর কাঁচকলা নিয়ে বসে যাই । জানেন, তখন আমাদের মধ্যে কত তত্ত্বের মনিহারী কারবার যে যতপারি উগরে তবে ছাড়ি । কেউ কাউকে ছাড়ি না । ওদের দরজা দক্ষিণ মুখে ,সুতরাং কমসে কম না চাইতেও দেখা হয়ে যায় । সেই শুরু হয় লড়াই । এই যেমন উনি বললেন,গুড মর্নিং । আমি পাল্টা দিলাম ,ভেরি ভেরি গুড মর্নিং । সঙ্গে সঙ্গে উনি বলবেন ,এত ভারি ভারি দেওয়ার কী আছে ! হালকা দিলেই হত ।
বললাম, ভারি ? আমরা হলাম আদার কারবারি । ওজনে কখনও কমবেশি হয়েই যায় । উনি রেগে বললেন , রাখুন তো ,ওসব কাঁচকলা ,সকাল বেলা। বলেই চলে যান ।
এই যেমন আজ বেশ কষ্ট করে যখন প্রাচীরে উঠেছি , শ্রী গৌরাঙ্গের মতো লহ গৌরাঙ্গ ভজ গৌরাঙ্গ বলে দুহাত তুলে দড়ি বাঁধবার চেষ্টা করছি শক্তিবাবু অমনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে বলে উঠলেন, একী একী ,প্রাচীরে উঠে কৃষ্ণকেত্তন করতে লেগে গেলেন সকালবেলা । কেন আর কী দেশে-গাঁয়ে মাঠঘাট ,পুকুর -জলাশয় নেই যে —
আমি বলতে গেলাম, প্রাচীরে —
শুনতেই চায় না । অমনি ঝোঁকের সঙ্গে বলে গেলেন ,নতুন নাচ শিখেছেন ,সবাই কে না দেখিয়ে ছাড়বেন না । আরে মশাই আমরা নাচি না কিন্তু নাচ জানি । সেটা হয়তো আপনার থেকে এত উন্নত নয় । তাই বলে আপনি এবয়সে এরকমে —
কী সমস্যা বলুন তো ,কথাটাই শুনতে চান না । হাত জোড় করে বললাম ,আমি–
আরে নাচুন ,দৌড়ান ,কাঁদুন ,যা খুশি মন চায় করুন না । আমি কিন্তু অ্যম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে নিয়ে ছুটোছুটি করতে পারব না, আগে থেকে বলে রাখলাম ,হ্যাঁ ।
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা আমি বুঝে ফেলেছি । স্রেফ জেলাসি ! বাঙালি কিনা । বাঙালির উন্নতি দেখলে আর এক বাঙালি লেজ ধরে টানবেই । লেজ ছিঁড়ে পাটকলে গিয়ে শতশত থলি তৈরি হয়ে বাজার ছেয়ে যাবে । তবু ওরা ছাড়বে না । যদি অবাঙালি হত বাঁশ কাঠ নিয়ে এগিয়ে আসত । কোথায় সাহায্য করবেন তা না করে ভয় দেখাচ্ছেন । হাসপাতাল ,অ্যম্বুলেন্স ,কোরামিন -যেখানে যা আছে । এই সুযোগে আমাকে চমকে যাচ্ছেন । আমিও সে বান্দা নই, কানই দিলাম না । এরকমই একটা কান্ড উনি করতেই পারবেন না ,তাই । আমিও কী ডরাই নাকি হাসপাতালওয়ালাদের । আমি এমন একটি অঙ্গভঙ্গি করলাম তা দেখে উনি আমতা আমতা করে বললেন ,আসলে তিক্ত জীবন সংগ্ৰামে ও জিনিসকে আর প্রশ্রয় দিতে চাই না । জীবনে তো চিনির চও দেখলাম না, শুধু তেতো মুখেই কাটাতে হচ্ছে ।
বললাম ,না না ,তিক্ত জীবন কে মিষ্ট করবে । কথায় আছে ,বিষে বিষে বিষক্ষয় । অঙ্কের ফর্মুলা আপনি তো আবার অঙ্কের লোক ভালো বুঝবেন ।
বড্ড সেয়ানা লোক । বললেন ,ওই আশাটি করবেন না । বড় বাজারে লক্ষ্মীর বাস ,ওদিকে বরং যোগাযোগ করুন ।
– কী যে বলেন । ওখানে তো সব মেড়ো আর উড়ে । করলা দিয়ে কী ঠেকুয়া খায় নাকি !
– এমন কথা বলেন যেন সব জেনে বসে আছেন । আরে ওরা খাবে কেন ! ওরাই আপনার সব মাল হোল সেল করে দেবে ।
নেহাত উনি আমার প্রতিবেশী, তাই বেশি কিছু বলতে সাহস করলাম না । বড় বাজার দেখাচ্ছেন , ইচ্ছে করলে আমি দিল্লি-মুম্বাই -চেন্নাইতেও পাঠাতে পারি । যদি একটু ঘোরাঘুরি করি ,তবে আরব ,আমেরিকা ,মিশর ,ইউরোপ তো লুফে নেবে । আমার জ্যেঠতুতো দাদার খুড়তুতো শালার ভগ্নিপোতের বোনঝি থাকে খোদ আফ্রিকায় । তারপর আমার আপন পিসিমার ভাসুরের বড় ছেলের দূর সম্পর্কের বন্ধুর মামাতো ভাই থাকে হংকং এ। আমাকে উনি কী শেখাবেন। একেবারে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ,বেশি বললে ,মুখ হাঁড়ি হয়ে যাবে ।
গাছটা কিন্তু যমের মুখে ছাই দিয়ে লকলক করে লতিয়ে লঙ্কেশ্বর হয়ে উঠল।সময় পেলে করুন চোখে মুগ্ধ বালকের মতো চেয়ে থাকি। উনি এখন দেখতে পেলেই খেজুরি আলাপ করতে আসেন। ওনার মিসেস শ্রীমতি বেলুন দেবী নগদ একটাকা চারনা অগ্ৰিম দিতে চান, ওনার কর্তার হাইসুগার,ওনার সবে ফুল ফুটেছে । নিয়মিত দুপাঁচখানা করে যদি ডেলিভারি করি তবে ভালই হয়। সৌভাগ্যের আতিশয্যে আমার উনি ওনার মিসেসের সঙ্গে চা-কফি সহযোগে ঘন্টার পর ঘন্টা জমিয়ে গল্প করেন । আর উনি তক্কে তক্কে থাকেন, সুযোগ পেলেই সঙের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণ করবেন । আমি মোটের উপর ভাল মানুষ বলে এসব উটকো ঝামেলা ঝেড়ে ফেলে সামলে চলি। এখন আমার দুয়ারে লক্ষ্মী, চাই না কোনও সঙ্গিটঙ্গি । খুব সামলে চলছি। সেদিন হঠাৎই ধরা পড়ে গেলাম।
– কী দাদা ,এর মধ্যে ভি ,আই,পি, হয়ে গেলেন দেখছি । আজকাল আপনার টিকিও দেখতে পাই না যে ।
কী রকম রাগ হয় বলুন । আমিও ছাড়বার পাত্র নই । বেলডাঙার লঙ্কার মতো ঝালিয়ে দিলুম একেবারে ,আমাকে কী শ্রী চৈতন্য ভেবেছেন যে সারা পশ্চিমবঙ্গ হাতড়ে ডিস অ্যানটেনা-এক গোছা চুল পাবেন না । ভুলেও ওরকম ফন্দিফিকির করবেন না । প্রতিমাসে ইটালিয়ান সেলুনে নগদে পঞ্চাশ টাকা গুণতে হয় ।
দেশে আর সেলুন পেলেন না । করিতকর্মা মানুষ আপনি দাদা । তবু ইটালিয়ান, বার্মিজ ,মোগলাই কত কিছু করছেন ।
– আরে করছি কোথায় !
– কেন কেন ,আপনি তাও সময় পাচ্ছেন না ?
– কেন নয় শুনি !
– নিয়মিত নয়াদিল্লি ,রাওয়ালপিন্ডি ,খালিস্তান ,গুলিস্তান ছুটোছুটি করছেন !বাহ্ বাহ্ !এর সঙ্গে প্রধান মন্ত্রী , স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ,বিদেশ —
– আহা ,পারলাম কই । লকডাউন করে সব উড়ান বন্ধ করে ম্যাচাকার করে দিয়েছেন আপনারা মশাই ।
– কেন ,কলকাতার বড় বাজার, শেয়ালদা, হাওড়ার হাট–
– ওতো হেঁটে যাওয়া যায় । বুঝলেন না ,এখন ইলিশের মরশুম তো । আমি কী অতই বোকা ,মেন লাইন ,কড লাইন ,অলিডলি ,নয়াদিল্লি সবই জানা আছে হে !
– কী রকম হচ্ছে দাদা ?
দাদায় প্রমোশন দিল । বললাম ,হ্যাঁ হচ্ছে মানে কী বলব । এক কথায় দারুণ ! এই তো গেল হপ্তায় দু লরি শ্যাম্পেল পাঠিয়ে দিলাম–রাজা কাটরা, চিৎপুর, কোলে মার্কেট, দমদম –কিস্তিমাৎ !ওরা তো আমার বাগানটা দেখার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
– ও ! সেজন্য এত বড় একটা ওড়না না পর্দা টাঙিয়ে দাম বাড়াবার চেষ্টা করছেন ? বা !বা!
– বারে,বাসে ট্রামে তো লেখাই থাকে ‘রাস্তা বেহাল সামলে রাখুন নিজের মাল । ‘কথায় বলে গুড়ের সন্ধান পিঁপড়ে জানবেই । পকেটের পাশেই পকেটমার । ভাল মাল আমদানি হচ্ছে কিনা ,বিপদ তো বাড়বেই । জেনে শুনে কী আমি ক্যাশবাক্সের চাবি আপনাকে দিয়ে । দেব !
শক্তিবাবু শুঁকশুঁক করে বললেন ,বেশ উর্বর উর্বর গন্ধ একটা পাচ্ছি যেন !
– বাড়াবাড়ি করলে গন্ধ কেলেঙ্কারির মামলা ঠুকে দেব কিন্তু । লোক টাকে সামলানো দরকার ।
– তা করুন ,দুজনে একসঙ্গেই কোর্টে যাব । একবার আমারও বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে । কোনো দিন এমন কান্ড দেখিনি তো –তার ওপর আবার আপনার নধরকান্তি গর্দান শুঁটকি মাছের মতো বেড়ে যাচ্ছে কিনা—এ রহস্য–
– হেঁ হেঁ হেঁ ! এটা বুঝলেন না ,নিরানব্বইর ধাক্কা । আর কটা দিন পার করতে পারলে -টাটা–বিড়লা –
ততক্ষণে শক্তিবাবু মাঠে নেমে পড়েছেন । একটু ব্যারিকেড সৃষ্টি না করলে সব লন্ডভন্ড করে দেবেন । এ হেণ আক্রমণ ঠেকাতে না পারলে সংসার সাম্রাজ্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে । হাত-পা নেড়ে সুবিধা মতো পজিশন নিচ্ছি –দেব বক্সিং চালিয়ে ,যা থাকে কপালে । চার্লি চ্যাপলিন দেখে দেখে বেশ শিখে গেছি । আবহাওয়া অনুকূল নয় ,ঈশান কোণে মেঘ -বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । একটু গরগরিয়ে উঠলেন ভাদ্রের মেঘের মতো ,বাঙালকে বড় বাজার দেখা চ্ছেন ! সারা কলকাতা চটকে চচ্চড়ি করে ফেললাম । আপনি কোন মেসোমশাই হে !
চ্যাপলিনের মতো বক্সিং এর মুদ্রা মুখের উপর লটকে পুলিশি ধ্বজা ফেলে কথায় কথায় ইংল্যান্ড ,হল্যান্ড ,পোল্যান্ড ঘুরিয়ে একেবারে নাৎসি দুর্গে ঢুকিয়ে দিলাম । বললাম ,রাশিয়া আক্রমণ করে নিজের পায়ে কুড়ুল চালিয়ে ছিল আর হিটলার তো ধ্বংস হয়ে গেল । হিটলার বুঝলেন না –ইনি যাকে বলে কাঠ বাঙাল ,না দেখে ছাড়বেই না ।বল প্রয়োগ ,হাতির সঙ্গে মশার সংবিধান বিরোধী কর্মকাণ্ড কে চায় বলুন । ওদিকে আবার রোজ রাজ্যপালের সঙ্গে পাশাখেলা চলছেই ।
কতক্ষণ পারা যায় বলুন – বেসরকারি লোক ,না আছে পুলিশ ,না আছে টাকা ,না আছে নেতা ,মন্ত্রী ,মস্তান ।দুর্বলের তো বুক টুকুই সম্বল তাতে আবার ইদানিং থানা গেড়েছে অম্বল । উনি যেই না গো়ঁত্তা মেরে ঢুকবেন অমনি মনে পড়ে গেল করোনা ।আমি চেঁচিয়ে উঠলাম ,যাবেন না, ছোঁবেন না, হাত দেবেন না – সব কিছুতেই মানা । না না উনি বড় বাজার থেকে মাইকে ফুঁকে বাইকে চড়ে এ শহরে বেড়াতে এসেছেন ।
কথাটা মুখ থেকে বেরোতে না বেরোতেই উনি একেবারেই কিস্কিন্ধ্যার উঠতি মহারাজের মতো একলাফে সিঁড়িতে উঠে বকবক করতে করতে অন্দরমহলে চালান হয়ে গেলেন ।বলে গেলেন ,দূর মশাই !আপনার করলার চাষ নয় করোনার চাষ ।দাঁড়ান ,আপনাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাবার ব্যবস্থা করছি ।
বুদ্ধিটা মন্ত্রের মতো কাজ দিল ।পুলকিত হয়ে বললাম, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ফ্রি তো ?
– পাক্কা ।
ঘুরে গেল ভাগ্যের চাকা । তাহলে আমার করলা ফার্মটা আপনাকে দান করে দিলাম ।
হাসতে হাসতে বললেন , কিচ্ছুটি নেই কিচ্ছুটি নেই ।
– কী করে জানলেন ?জ্যোতিষ চর্চা করেন নাকি ?
– ও আমি দেখে নিয়েছি হে মধুসূদন ! আমাদের ধোঁকা খাওয়াচ্ছিলেন ।হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব ।বৌদিকে বলে দেব ।
– দেখুন মশাই ,এভাবে রাস্তা ঘাটে হাঁড়ি ভাঙবেন না ।উড়াল পুলগুলো তাহলে কোথায় ভেঙে পড়বে ?আপনার ও ভাঙায় কোনো গৌরব নেই।
– ভাঙা তো ভাঙাই ,তার গৌরব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই ।
করলা চাষে বিরাট সমস্যা। বিরক্ত হয়ে বললাম ,যান তো ! সবইতো ভাঙলেন–দেশ ভাঙলেন ,দল ভাঙলেন , শান্তি ভাঙলেন ,সম্পর্ক ভাঙলেন ,এখন মনও ভাঙবেন ,ভাঙুন । যান ভাঙড়ে ,ভাঙাভাঙির খোয়াব দেখে আসুন ।
– আপনি যান না ভেতরে । করলার পিকনিক হবে । আপনার হবে আজ !
হে মধুসূদন, এমন ঠ্যাঁটা লোক থাকে জগতে !সামলানো দরকার ।
আসল ব্যাপারটা হল সেদিন একটু বেশি কাজ দেখাতে গিয়ে এমন একটা টান পড়ল যে আমূল আমার ঘাড়ে গর্দানে জড়িয়ে গেলেন করলা সুন্দরী । আত্মরক্ষাটা আগে সারতেই হয় ।মাটি ধুলো ঝেড়ে উঠে পড়লাম ।ভাগ্যিস কেউ ধারে কাছে ছিল না । মহারানি থাকলে তো এক হাত নিত ।বেশ ভাল করে এদিক ওদিক তাকিয়ে যেন কিছুই হয়নি ,আনন্দে ডিগবাজি খেলাম । দু’কদম হেঁটে একটা ভারিক্কি চাল চাললাম । যদিও মাজায় লেগেছে ,সেকথা বলি কোন মুখে । কায়দা করে নিজের হাতে টিপে ঘষে ম্যানেজ করছি । এমন সময় হঠাৎ চোখে পড়ল ব্যাপারটা । আর আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল ।হায় হায়, একী করলাম !কখন করলাম না ঘটল ? রাম রাম ,কী হবে আমার !
দুঃখ আমার মোটেই ছিল না ।শুধু ছিল ভয় । ফাটা হাঁড়ির মতো গলা আর রণং দেহি মূর্তি ! কে সামলাবে । আমার কোনো কথাই শুনবে না । কারণ আমি ওর জন্মজন্মান্তরের ,সারা সংসার জীবনের শত্রু ।আর সে কথা এখন প্রমাণিত হয়ে যাবে যে আমি ইচ্ছে করে এসব করেছি । সে তো দেখেনি যে আমি আসলে ইচ্ছে করে করিনি ।সুতরাং তার ইচ্ছেটাই ইচ্ছে ।সেই সঙ্গে খাঁটি বিশুদ্ধ উচ্চারণের লৌকিক-অলৌকিক শব্দ বহুল বাক্যবিন্যাসের অসুরঘটিত সুর সংযোগের অপ্রাকৃতিক কর্মকাণ্ড ।আমাকে কেউ তখন রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে না ।ঘরে মুচকি মুচকি হাসির সঙ্গে গুষ্টি সুখ উপভোগ করবেন ।এই শক্তিবাবুর কথাই ধরুন না ।কেবল বিনা বাক্যে আমাকে ঐশ্বরিক ঐশ্বর্য সকল হজম করে যেতে হবে ।কোন কুক্ষণে যে ওকে খুশি করতে গাছটার পরিচর্যায় গেলাম । এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি অতিরিক্ত প্রেম বদ হজমের কারণ । শেষ পর্যন্ত ভেবে ভেবে ঠিক করলাম ,এটাকে যে কোনো উপায়ে আড়াল করতে হবে । বাইরে একটা ঝাঁ চকচকে ঝাঁটা টাঙিয়ে দিলাম । বললাম,গাছটা এত সুন্দর হয়েছে যে কারও নজর লেগে যাবে। তোমারও দেখার দরকার নেই । কথা শুনে মহারানি ভীষণ খুশি । এত খুশি যে ভুলে ও তাকায় না । এসব মুন্সিয়ানার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি । এর মধ্যে দুদিন বাজার থেকে টাটকা করলা এনে চমকে দিয়েছি -বেশ হচ্ছে । আর উনি ভাল মানুষের মতো আনন্দে গদগদ হয়ে কয়েকটা হাম ফ্রি দিলেন । যাকগে ,আগে তো খাই ।পেটে খেলে নাকি পিঠে সয় । কিন্তু এখন দেখছি শক্তিবাবু আমার সর্বনাশ করে ছাড়বেন । বললাম ,দেখুন ,আমার একমাত্র ইয়ে ,দয়া করে ওকে বলে বিগড়ে দেবেন না । আপনার সুগার পে্শেন্ট গিন্নির জন্য এক ভাঁড় বাঞ্ছারামের রসগোল্লা পাঠিয়ে দেব ক্ষণ ।
এক অস্ত্রেই ঘায়েল ।বললেন ,আরে না না ,আমি আপনার প্রতিবেশী না । ওটা আপনি ভুলেও করবেন না । আমার ইয়ে আবার রসগোল্লা দেখলে সামলাতে পারে না ,সে তো আপনি জানেন । মাস খানেক আগে কতগুলো টাকা গচ্চা গেল । আমি তো বৌদিকে বলবই না । আপনিও না । আপনি বরং পর্দাটা ভাল করে মুড়ে রাখুন ।
– বলছেন যখন না মেনে পারি ! আমরা প্রতিবেশী কিনা ।
♦–♦♦–♦♦–♦
গল্পের সমস্ত চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই, কেউ যদি মিল খুঁজে পান তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ।
❤ Support Us