পুজোয় ঠাকুর দেখতে চতুর্থী থেকে নবমী দিন-রাত মিলবে সরকারি বাসের পরিষেবা

দূর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে কলকাতা একটি রঙিন ক্যানভাসে পরিণত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ কলকাতায় এসে পৌঁছয় কলকাতার  দূর্গা পুজো দেখতে। কলকাতার দূর্গা পুজো শুধু পুজোয় আটকে নেই, বাঙালির বৃহত্তর উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এই উৎসবের কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছে কলকাতা। তাই পুজোয় কলকাতার মানুষ তো বটেই, পাশাপাশি পুজো দেখতে আসা পর্যটকদের উপযুক্ত পরিবহন পরিষেবা দিতে বেসরকারি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ বার পুজোয় চতুর্থী থেকে নবমী পর্যন্ত দিনের পাশাপাশি রাতেও চলবে সরকারি বাস। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাস রাস্তায় নামতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগম এবং কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। ১৮ থেকে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে নিগমের চালক, কন্ডাক্টর ছাড়াও ট্র্যাফিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত সব আধিকারিক এবং কর্মীদের সব রকমের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুজোয় দর্শক ও পর্যটকদের উপযুক্ত পরিবহন পরিষেবা দিতেই রাজ্য পরিবহন দফতরের এই উদ্যোগ বলে রাজ্য পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ অক্টোবর কলকাতা ও জেলার বেশিরভাগ দূর্গা পুজো উদ্বোধন করে দিয়েছেন। কলকাতায় কোনও কোনও পুজো মণ্ডপে ইতিমধ্যয়েই দর্শকরা উঁকিঝুঁকি মারছেন। তাই রাজ্য পরিবহন দফতর চতুর্থী থেকে ষষ্ঠীর মধ্যে পুজো বাজারের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে দিনের বেলায় বেশি সংখ্যক বাস চালাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, একাধিক বড় পুজোর আগেই উদ্বোধন হয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীর ভিড়ও রাতে থাকবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। তাই বেসরকারি বাসের ধাঁচেই গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে যাত্রীদের উপস্থিতি অনুযায়ী বাস চালাবে রাজ্য পরিবহণ নিগম।

রাজ্য পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুজোর দিনগুলিতে সকালের দিকে এসি বাসের পরিষেবা কিছুটা দেরিতে শুরু হতে পারে। সপ্তমী থেকে নবমীর মধ্যে রাতের দিকেও বিমানবন্দরে ভলভো এসি বাস কিছুটা দেরিতে ছাড়তে পারে। তবে, ওই দিনগুলিতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব রুটে বাস থাকবে। ওই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০টি বাস রাতে ছুটবে। গুরুত্বপূর্ণ ডিপোগুলিতে বাস মেরামতির জন্য কর্মীদের তৈরি রাখার পাশাপাশি অন্তত দু’জন করে বাসচালক এবং কন্ডাক্টর মজুত রাখা হচ্ছে। যাতে কোনও প্রয়োজন হলেই তাঁরা বাস নিয়ে রওনা হতে পারেন।

উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতা, ই এম বাইপাস, নিউ টাউন, বারাসত সংলগ্ন বিভিন্ন রুট ছাড়াও এসপ্লানেড থেকে ডানলপের মধ্যে বিশেষ শাটল বাস সার্ভিস চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাজ্য পরিবহণ নিগম। যাত্রীদের ভিড় এবং চাহিদা অনুযায়ী ওই পরিষেবা চালানো হবে। কোনও কারণে মেট্রোর পরিষেবা ব্যাহত হলে উত্তরের যাত্রীদের জন্য ওই শাটল বাস সার্ভিস যাতে যাত্রী সমস্যা সমাধানে কার্যকরী হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এক দিকে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অন্যদিকে যাত্রীদের ক্রবর্ধমান চাহিদা, এই দুইয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে সজাগ থাকতে হচ্ছে সরকারি বাস পরিবহন ব্যবস্থাকেও। যাত্রী নেই বা কম এমন রুটের বদলে অনেক বেশি যাত্রী রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন এমন রুটে সরকারি বাস চালানোকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে রাজ্য পরিবহন নিগমের তরফে। পুজোর দিনগুলিতে সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতের পাশাপাশি পুজো পরিক্রমার যে বিশেষ পরিষেবা রয়েছে, তা-ও আলাদা ভাবে চালু থাকছে এই বছর। এ ছাড়াও রাস্তায় বাস পাওয়া নিশ্চিত করতে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও পুজোর মধ্যে সর্বদা তৈরি থাকতে হচ্ছে পরিবহন নিগমকে। বিপুল সংখ্যক যাত্রী যেহেতু এই সময়ে পথে নামেন, তাই এই সময়ে বেসরকারি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়ের সুযোগ বাড়াতে তৎপর হয়েছে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থাও।