Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • এপ্রিল ২৫, ২০২৫

সেনার গুলিতে নিহত লস্কর কমান্ডার আলতাফ, রাতভর ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলি বর্ষণ, পহেলগাঁও হামলার জবাব দিতে একাট্টা শাসক-বিরোধী দল

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সেনার গুলিতে নিহত লস্কর কমান্ডার আলতাফ, রাতভর ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলি বর্ষণ, পহেলগাঁও হামলার জবাব দিতে একাট্টা শাসক-বিরোধী দল

পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন পর্যটক। এই বর্বর হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে মোদি সরকারের পাশে সমস্ত বিরোধীদল। কাশ্মীরের বান্দিপোরায় সেনা-জঙ্গী সংঘর্ষে খতম লস্কর-ই তৈবার শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার আলতাফ লাল্লি। বৃহস্পতিবার রাতভর ভারত-পাক সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চলছে লাগাতার গুলি বর্ষণ, তাংধার সেক্টরে শুরু হয়েছে হেভি শেলিং। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর নেই।

ভারতীয় সেনার তরফে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার ভোরে পাক সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা বা ‘এলওসি’-র কাছে ভারতীয় সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাঘাত করে ভারতও। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ ভারতীয় সেনার এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পাক সেনা সীমান্তে গুলি চালিয়েছে। প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় সেনা। সীমান্তের এ পারে কেউ হতাহত হয়নি। অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীরে হামলাকারীদের খোঁজে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত। উপত্যকায় দুই লস্কর জঙ্গীর ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সীমান্তবর্তী এলাকায় রাতভর আকাশপথে নজরদারি ও জোরদার টহলদারী চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা।

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এর বৈসারণ মেহলায় পর্যটকদের হামলার ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা দেশ। হামলার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। গতকাল সর্বদলীয় বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে একাট্টা শাসক-বিরোধী দল। শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর যাচ্ছেন রাহুল গান্ধী। আজ বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বিশেষ বৈঠক রয়েছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। সিন্ধু জল চুক্তি রদকে কেন্দ্র করে পাল্টা আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা করে পাকিস্তানও, যার মধ্যে অন্যতম সিমলা চুক্তি। পেহেলগাঁও হামলা ও ভারত-পাকিস্তানের তীব্র ঘাত-প্রতিঘাতের আবহে প্রক্সি ওয়ারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ফলে যে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তান, উভয় পক্ষই তা মেনে চলবে। পারস্পরিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও কোনও পক্ষ একতরফা ভাবে এর লঙ্ঘন করবে না। তার পরেও অবশ্য পাকিস্তান একাধিক বার এই শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ, কার্গিল যুদ্ধ যার অন্যতম উদাহরণ। বিশ্লেষকদের মতে, জঙ্গীযোগের দায় এড়াতে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখাকে মান্যতা না-দিয়ে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে ইসলামাবাদ।

বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি জে.পি. নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি প্রমুখ। পেহেলগাঁও হামলার পাল্টা হিসাবে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে, মোদি-সরকারের পাশে থাকবার আশ্বাস দিয়েছে বিরোধী নেতারা। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ত্রুটি ও লাগাতার জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আটকাতে কেন্দ্র সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং বলেন, ‘এই অঞ্চলটি ২০ এপ্রিল থেকে খোলা ছিল, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেখানে ছিল না – নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বড়ো ত্রুটি ঘটেছে।’ রাহুল গান্ধী বলেন, “এক হাজারেরও বেশি মানুষ সেখানে গেলেন, অথচ পুলিশ কিছুই জানত না – এটা কীভাবে সম্ভব?’ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগ ব্যর্থতা হয়েছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি।’ বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, নিরাপত্তা ত্রুটি হয়েছিল। বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর উপস্থিত ছিলেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “সব রাজনৈতিক দল কেন্দ্রের সন্ত্রাসবিরোধী দৃঢ় অবস্থানে একমত হয়েছে।’ অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েসি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এবং সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি সাধারণ কাশ্মীরিদের ও কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপি পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ঐক্যমতের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সীমান্তে যুদ্ধ-আবহের মধ্যে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে চলেছেন, জানা যাচ্ছে বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

জম্মু-কাশ্মীরেরর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইউকে, ইজরায়েল, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব সহ একাধিক দেশ এই হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভূ-স্বর্গে নতুন করে সন্ত্রাসের আবহাওয়া, তুলনামূলকভাবে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে লাগাতার অনুপ্রবেশ, এশিয়ার নতুন রাজনীতি ও ক্ষমতার সমীকরণের তত্ত্বকে সামনে আনছে। ইদানিংকালে ভারত ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হয়েছে, বাংলাদেশ কখনো চিন-কখনো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে। উল্লেখযোগ্যভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকা, চিন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির দূরত্ব বেড়েছে। ‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উপর ভারত নিপীড়ন করে’ – এ অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান বরাবর সহানুভূতি নেবার চেষ্টা করে এক্ষেত্রেও কী তেমন ছবিই তৈরি করতে চাইছে তাঁরা। সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়ে মার্কিন-চীনা অস্ত্র বাজারের বিপুল চাহিদা তৈরি করবার চেষ্টা চলছে। ভারতে চলমান ঘৃণার পরিবেশ জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উপর দেশের নানা প্রান্তে হামলা, সংঘ্যালঘু মানুষদের উপর সামাজিকবভাবে অবহেলা ও বয়কটের পরিবেশ তৈরি করবার লাগাতার চেষ্টা চলছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ট সম্প্রদায়ের একাংশই এ কাজ করছেন, এর ফলে ভারত-এর বৈচিত্র্য ও সার্বভৌমত্যকে নষ্ট করবে, লাভ হবে ভারত-বিরোধী দেশ ও শক্তিগুলির।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!