Advertisement
  • খাস-কলম পা | র্স | পে | ক্টি | ভ মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
  • এপ্রিল ১৫, ২০২৩

কঠিন পথ পেরিয়ে ১৫ বছরেই ভারতীয় মহিলা হকির আইকন রানি রামপাল

উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলিতে একটা হকি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মহিলা খেলোয়াড়ের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম
কঠিন পথ পেরিয়ে ১৫ বছরেই ভারতীয় মহিলা হকির আইকন রানি রামপাল

অলঙ্করণ: দেব সরকার

দেশে মহিলা ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কম নেই। বিশ্বমঞ্চে দাপিয়ে খেলেছেন সানিয়া মির্জা, মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী অঞ্জুম চোপড়ার মতো মহিলা ক্রীড়াবিদরা। এখনও খেলছেন সাইনা নেহাল, পিভি সিন্ধু, মেরি কমরা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রত্যেকেই দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যে স্বীকৃতি পাননি, সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন ভারতীয় মহিলা হকি দলের স্ট্রাইকার রানি রামপাল। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলিতে একটা হকি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মহিলা খেলোয়াড়ের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।

রানি রামপাল নিজেই স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করেন। আর নিজের নামের স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন এই অলিম্পিয়ান। তিনি গর্বিত। এটাই তো স্বাভাবিক। জীবদ্দশায় তিনি দেখে যেতে পেরেছেন তাঁর নামে একটি হকি স্টেডিয়াম। যে স্টেডিয়ামে তিনি অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন, ভবিষ্যতেও লড়াই করবেন। রায়বেরিলির সাহাবাদের এই হকি স্টেডিয়াম উদ্বোধন করে রানি রামপাল বলেন, ‘‌এই ধরনের সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করবে। খেলোয়াড়দের নামাঙ্কিত ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলি সব সময় নতুন খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণার কাজ করে যাবে। আমি গর্বিত জীবদ্দশায় আমার নামে এইরকম একটা স্টেডিয়াম দেখে যেতে পারলাম।’‌

ভারতীয় মহিলা হকি দলের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন রানি রামপাল। বহু বছর ধরে ভারতীয় হকি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অনেক সাফল্যও পেয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সেমিফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করেছিল ভারতীয় মহিলা হকি দল। ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি পদ্মশ্রী এবং অর্জুন পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।‌

রানি রামপালের পথ চলাটা একেবারেই সহজ ছিল না। দেশের হকির সুপরিচিত নার্সারি হরিয়ানার শাহাবাদ মার্কন্দার অন্তর্গত হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে রানির পক্ষে খেলাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মালবাহী ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন রানির বাবা। একদিকে মেয়ের খেলার খরচ, অন্যদিকে সংসার চালানো, দুদিক সামলানো কঠিন ছিল রানির বাবার কাছে। অতি কষ্টে বাবা–মাকে রাজি করিয়ে ৭ বছর বয়সে বলদেব সিংয়ের শাহাবাদ হকি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রানিকে।

হরিয়ানার হয়ে অল্পবয়সেই নজর কাড়েন রানি রামপাল। ২০০৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পান। ওই বছর রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার ম্যাচে দেশের হয়ে অভিষেক হয়েছিল রানির। অল্পসময়ের মধ্যে দেশের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড হিসাবে আবির্ভূত হন। ২০১০ বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়া‌ড়ের স্বীকৃতি পান রানি রামপাল। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দু–দুটি বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড। ২০১৭ এশিয়া কাপে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের সদস্যও ছিলেন। পরের বছর এশিয়ান গেমসে তাঁর নেতৃত্বে রুপো জিতেছিল ভারত। ভারতের সাফল্যে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন রানি রামপাল।

রানির খেলার আকর্ষণীয় দিক হল চাপের মধ্যেও নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরতে পারা। ২০১৯ সালে ভুবনেশ্বরে অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের জন্য ভারতের চূড়ান্ত ম্যাচ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। প্রবল চাপের ম্যাচে তাঁর গোলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে টোকিও অলিম্পিকে জায়গা করে নিয়েছিল ভারত। টোকিও অলিম্পিকে দলকে সেমিফাইনালে তোলার ব্যাপারেও দারুণ অবদান ছিল রানি রামপালের। ‌দেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ২৫৪ টি ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন ১২০টি।  মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই ভারতীয় হকিতে আইকনে পরিণত হয়েছেন। ‌


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!