- এই মুহূর্তে
- মার্চ ৬, ২০২৩
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ভস্ম ৩৫টি মসজিদ, ২১ শিক্ষাকেন্দ্র ।আশ্রয়হীন অন্তত ১২ হাজার
ভেবে দেখা দরকার, বার বার রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন জ্বলে ওঠে কেন ?
চিত্র: সংবাদ সংস্থা
কক্সবাজারে রবিবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার শরণার্থী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মাথাগোঁজার মতো শেষ আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন। আগুন লাগার পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাঁশ ও তার্পোলিনের তাঁবুগুলিতে। বাংলাদেশের উদ্বাস্তু কমিশনার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, অন্তত দু’হাজার তাঁবু আগুনে পুরোপুরিভাবে ভস্মীভূত হয়েছে। এর জেরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নতুন করে আশ্রয়হীন হয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো খবর নেই। কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন কিনা তাও জানা যায়নি।
রবিবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, কীভাবে আগুন লাগল, এখনও তার কারণ জানা যায়নি। তবে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। প্রসঙ্গত, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছে শিবির সংলগ্ন এলাকার ৩৫টি মসজিদ এবং ২১টি লার্নিং সেন্টার। এখনও ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি স্থানীয় প্রশাসন। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। উল্লেখ্য, আগুন ছড়িয়েছে ১১ নম্বর শিবির থেকে।
অগ্নিকাণ্ডের জেরে সর্বহারা সেলিম উল্লাহ নামে রোহিঙ্গা শরণার্থী বললেন, ঘরের কিছুই বাঁচাতে পারিনি। ছয় ছেলেকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলি এখন বিষাদগ্রস্ত। ওঁদের কথায়, মায়ানমারে থাকাকালীন সামরিক বাহিনী গ্রামে ঢুকে আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত। অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়েও আবারও অগ্নিকাণ্ডের শিকার হতে হল।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা দফতর যে খতিয়ান পেশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলিতে। এর মধ্যে ৬০টি ক্ষেত্রে ওই শিবিরগুলিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের মার্চে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৫জনের মৃত্যু হয়। আশ্ৰয়হীন হয়ে পড়েন ৫০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী। নতুন করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল, তাতে অন্তত ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়হারা হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে এখনও কোনও তথ্য না জানালেও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস জানিয়েছে, রবিবারে ওই অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শরণার্খী শিবিরের ঘেষাঘেঁষি তাঁবুগুলিতে আগুন অতি দ্রুত ছড়িয়েছে।
রোহিঙ্গারা মায়ানমারেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁরা অত্যাচার-অবিচারের শিকার। সেনা সরকারের আমলে অত্যাচার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এপর্যন্ত ১০ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকায়। উদ্বাস্তু সমস্যা নানা ধরণের জটিলতা তৈরি করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই প্রথম নয়। কেন বার বার অগ্নিকাণ্ড ঘটছে এ নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। ঘিঞ্ঝি বস্তি, গলির পর গলি ঘনবসতি। যেকোনো অঘটন দ্রুত ছড়িয়ে পরলে রেহাই মেলে না। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের অন্যস্ত্র স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সফল হয়নি।
বিশ্বে এত জটিল উদ্বাস্তু সমস্যা আর কোথাও নেই। বাংলাদেশ সরকারও তাদের ফেরত পাঠাতে চায় । বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার দুই সরকারের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সুরাহা মেলেনি। শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেও মায়ানমার ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গারাও সামরিক সরকারের ওপর ভরসা করতে পারছে না, তাঁদের আদিভূমিতে পরিস্থিতি বিরূপ। যে সেনার অত্যাচারে দেশ ছেড়েছে সেই সেনারই তদারকিতে দেশে ফেরা সম্ভবত, নিরাপদ নয় ভেবেই কক্সবাজার ছাড়তে রাজি নয়। আন্তর্জাতিক বিশ্ব যেভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা, সেভাবে দাঁড়ায়নি। একমাত্র তুরস্ক ছাড়া অন্য কোনো দেশ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশ সরকারও তাঁদের ব্যাপারে সংশয়হীন, সন্দেহহীন নয়। কোনো কোনো মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধর্মীয় সন্ত্রাস বাড়িয়ে তুলতে সক্রিয়।
রোহিঙ্গা শিবিরে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কাকতালীয় নাও হতে পারে। এটাও হয়তো বা একধরনের উস্কানি। শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করার গোপন কৌশল নয় তো ? সামনে বাংলাদেশের সংসদীয় ভোট।বিএনপি, জামাতি ইসলামি রাস্তায় নামার চেষ্টা করছে, চট্টগ্রাম তাঁদের কৌশলগত বিচরণ ক্ষেত্র। আর ওখানেই সমুদ্র ঘেঁষা কক্সবাজারে ছড়িয়ে আছে রোহিঙ্গাদের বিপর্যস্ত যাপনের দিনরাত।
❤ Support Us