- খাস-কলম দে । শ
- ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
“ইন্ডিয়া” জোটে আসন সমঝোতা ! কি বলছে বাস্তব চিত্র
সাড়ে তিনমাস পরে মঙ্গলবার ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক শুরু হল দিল্লিতে। সোনিয়া গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, মে কে স্ট্যালিন, লালু প্রাসাদ যাদব, ডি রাজা সহ ২৬টি শরিক দলের নেতারা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। আসন সমঝোতা, প্রচার কৌশল, জোটের লোগো নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, যে রাজ্যে যে দল শাক্তশালী সেই রাজ্যে বিজেপি বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবে সেই দল। তবে এই ফর্মুলা দেশের সব রাজ্যে কার্যকর হয় কি না সেটাই বড় প্রশ্ন।
বাংলা, কেরল, দিল্লি, পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ফর্মুলা কার্যকর হয় কি না সেটাই দেখার। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেই আসন সমঝোতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারও উপর নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার মতো মানসিকতা নিয়ে তৃণমূল চলছে না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০০টি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোটের প্রার্থী দেওয়া গেলে বিজেপিকে পরাস্ত করা সম্ভব।
তবে বিষয়টি যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে বাস্তবে সেটা নয়। কারণ যদি বাংলার কথাই ধরা যায় তাহলে ইন্ডিয়া জোটের ছন্নছাড়া অবস্থাটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ বাংলায় সিপিএম কোনও অবস্থাতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোটে যাবে না। কংগ্রেস বাংলায় এককভাবে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরোধিতা করার রাস্তায় এখনও রয়েছে। এই পরিস্থিতি কেরল, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশের মতো একাধিক রাজ্যে হয়ে আছে। কাজেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা মেনে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার যে রণকৌশল সেটা বোধহয় সর্বত্র কার্যকরী হবে না। বাংলাতে তো কোনও অবস্থাতেই নয়, সেটা সিপিএম দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
সিপিআইএম(লিবারেশন)-এ সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আগেই জানিয়েছিলেন, “লোকসভা নির্বাচনের জাতীয় সমস্যা সমাধান করতে হয়। বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের সমস্যা সমাধান করতে হয়। তাই এই মুহূর্তে দেশের কাছে বড় বিপদ বিজেপি। তাই জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে বিজেপিকে দেশের ক্ষমতা থেকে সরাতে সব রাজ্যে সব বিভেদ ভুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি করে জোটের প্রার্থী দেওয়া জরুরি। কারণ বিজেপির হাতে দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র সবই বিপন্ন। তাই দেশ রক্ষার স্বার্থে এখন আঞ্চলিক রাজনীতি ভুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে লড়াই করা জরুরি।”
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধিতার যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটা যে তিনি বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতেই দিয়েছেন সেটা কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। সোমবার দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে বলেই দিয়েছেন, বাংলায় মাত্র দুটো আসন কংগ্রেসের আছে। আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন বাংলায় তিনি কংগ্রেসকে দুটি আসন ছাড়তে পারেন। তার মধ্য থেকে কংগ্রেস একটা বামেদের দিলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। এই জায়গায় দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় তাঁর রাজনৈতিক অধিকার এক ইঞ্চি ছাড়তে রাজি নয়। তাই কংগ্রেস আজ রাজ্যে লোকসভা আসনের নিরিখে ২ এবং সিপিএম শূন্য হলেও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যে কংগ্রেস ও সিপিএম তথা বাম তাদের ভোট বাড়াতে পারবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের এই সংখ্যক মন্ত্রী, বিধায়ক জেলে ছিলেন না। এই পরিমাণ দুর্নীতিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে আসেনি। তাই বাংলার কংগ্রেস ও সিপিএম তৃণমূলের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে মানুষের কাছ থেকে যে আরও বেশি সংখ্যক সমর্থন পাবে না কে বলতে পারে? রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। তাই সেখানে আজ যে ১০০ কাল সে ১ হবে না বা আজ যে ১ কাল সে ১০০ হবে এ সেটা কেউ বলতে পারে না।
আর এই জায়গাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলায় বাম, কংগ্রেসের বিরোধ। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল এখন কিছুটা অস্বস্তিতে আছে। তাই বিজেপি বিরোধিতার নাম করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইবেন বিজেপির বিরুদ্ধে বড় দল হিসেবে একমাত্র তৃণমূল প্রার্থী দেবে আর কংগ্রেস, বাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সমর্থন করবে। এর ফলে তৃণমূলের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরনী বাংলায় পার হতে কোনও অসুবিধা হবে না। আর বাম,কংগ্রেস তৃণমূলের স্লোগান অনুযায়ী সাইনবোর্ডে পরিণত হবে। আর দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে কোনও লড়াই না করেই বিজেপি জায়গা পেয়ে যাবে।
এই মুহূর্তে বাংলায় বাম,কংগ্রেসের জোট কোনও ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক যূপকাষ্ঠে মাথা দিয়ে শহিদ যে হবে না সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা অতীতে বারবার দেখেছি কংগ্রেস হাই কম্যান্ড শেষ মুহূর্তে বাংলায় কংগ্রেসকে তৃণমূলের হাত ধরতে বাধ্য করে। সেটা এবার হলে বাংলায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব আগামীদিনে যে আর থাকবে না সেটা সহজেই অনুমেয়। তাই এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কথায় যা বোঝা যাচ্ছে বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের মজবুত হওয়া খুব কঠিন বিষয়। কেননা অধীরের কথায় বাংলায় কংগ্রেস তৃণমূলের হাত ধরে বিজেপি বিরোধিতায় নামবে না। কেরলেও বাম-কংগ্রেস যে মুখোমুখি লড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পাঞ্জাবে আপ-কংগ্রেস লড়াই হবে। তাই বলা যায় ইন্ডিয়া জোট যত গর্জাচ্ছে ততো হয়তো বর্ষাতে পারবে না, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে।
❤ Support Us