- এই মুহূর্তে দে । শ
- নভেম্বর ৪, ২০২৩
ইডেনে বিশ্বকাপের টিকিটের নজিরবিহীন কালোবাজারি। লালবাজারে কলকাতা পুলিশের নগরপালের সঙ্গে দেখা করলেন সিএবি সভাপতি
বিশ্ব কাপ টিকিটের কালোবাজারি, ধৃত সিএবি সদস্য, স্নেহাশিষ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ধৃত ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না। এদিকে সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে শুক্রবার লালবাজার থেকে তলব করা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে লালবাজারে সাক্ষী হিসেবে ১০৬ সিআরপিসিতে নোটিশ পাঠিয়ে হাজিরার জন্য আসতে বলা হয়েছিল। তবে শুক্রবার স্নেহাশিস হাজিরায় না গিয়ে উল্টে বলেছেন, তিনি লালবাজার থেকে এমন কোনও চিঠি পাননি। এদিকে লালবাজার বলছে সিএবি-তে গিয়ে তাঁকে হাজিরার চিঠি দিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার স্নেহাশিসকে লালবাজারের তরফে আবার সাক্ষী হিসেবে তলব করা হলে, সন্ধ্যা ছটা নাগাদ তিনি কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। স্নেহাশিস গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, হেমল শাহ নামের সিএবি-র এ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার হয়েছে তাঁকে তিনি চেনেন না। টিকিটের কালোবাজারি প্রসঙ্গেও তাঁর বক্তব্য, এতে সিএবি-র কোনও দায় নেই। টিকেট বিক্রি হয়েছে “বুক মাই শো”-র মাধ্যমে। তবে শনিবার ময়দান থানায় সিএবি-র তিন প্রতিনিধি গিয়েছিলেন। তাদের টিকিটের কালোবাজারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর থেকে টিকিটের কালোবাজারি নিয়ে ৭টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১ জন সিএবি সদস্য রয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১০৮টি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট খেলার টিকিট। কলকাতার ময়দানের সঙ্গে ঘনিষ্ট ও ক্রিকেট ওয়াকিবহালরা বলছেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট নিয়ে যা চলছে তাকে ইডেনে ক্রিকেট খেলার ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এবং সংগঠিত টিকিট জালিয়াতি বললেও অত্যুক্তি হবে না।কলকাতা পুলিশও বলছে ইডেনের খেলার ইতিহাসে এই ধরণের কালোবাজারি তাদের নজরে প্রথমবার এলো। এর পিছনে বড় চক্র আছে। পুলিশের সন্দেহ পেছনে একটা নয় একাধিক বড়ো মাথা কাজ করছে।
লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯০০ টাকার টিকিট ৯০০০ টাকা দামে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নেতাজিনগর থানা এলাকা থেকে শুভ্রদীপ ভট্টাচার্য, সুমন সর্দার এবং সন্দীপন লাহা নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁদের কাছ থেকে পাওয়া ১৭টি টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভুয়ো ওয়েবসাইট থেকে চড়া দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগে হর্ষ গুপ্ত এবং হর্ষিত আগরওয়াল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টিকিটের কালোবাজারিতে সিএবির ওই ‘সাধারণ সদস্য’ হেমল শাহ সহ ৯ জনের কী ভূমিকা রয়েছে, তা দেখা হচ্ছে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
নেতাজিনগর এবং এন্টালি থানায় সিএবি ও টিকিট বিক্রি করা অনলাইন সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। লালবাজারের দাবি, অনলাইনে টিকিট কিনে তা চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন সংস্থাকে ব্যবহার করছে কালোবাজারিরা। হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ জানিয়েছে, একটি ফেসবুক পেজে টিকিট বিক্রি হচ্ছে দেখে এক জন ৯৪ হাজার টাকা নির্দিষ্ট একটি ইউপিআই অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, সেটি ভুয়ো। সাইবার থানার পুলিশ ওই মামলার তদন্ত শুরু করলেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে টিকিটের ছবি দেখিয়েও কালোবাজারিরা কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করেছে বলে অনুমান পুলিশের।
লালবাজারের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে তদন্তে দেখা যাচ্ছে, টিকিট বিক্রি বা বুকিংয়ের গোড়াতেই সমস্যা রয়েছে। এক জন হয়তো অনলাইনে টিকিট বুক করছেন। তার পর সুযোগ বুঝে সংস্থার দেওয়া কিউআর কোড এবং আইডি অন্য কাউকে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রথম ক্রেতা। সেও কিউআর কোড নিয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি নির্দিষ্ট টিকিট তুলছেন। তিনি আবার সেই টিকিট আরও চড়া দামে তৃতীয় কাউকে বিক্রি করছেন। মূলত অনলাইনেই কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে গিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। এমনকি অনলাইন সংস্থাটির থেকে তোলা টিকিট কালোবাজারে বিক্রির জন্য আস্ত একটি নকল ওয়েবসাইটও তৈরি হয়ে গিয়েছে ! শুক্রবার রাতে সেই সাইটে ৯০০ টাকার একটি টিকিটের দাম দেখিয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। অথচ সিএবি-র কোনও কোনও সদস্য বলছেন, তাঁদের কাছেই ম্যাচের টিকিট আসেনি। লালবাজার জানিয়েছে, টিকিটের এই হাহাকার এবং কালোবাজারির ঘটনায় বিসিসিআইয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিকেও ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পরে। তবে শনিবারও স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে লালবাজারের তরফে সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তবে তিনি বা সিএবি-র কোনও প্রতিনিধি লালবাজারে হাজিরায় যাননি।
সিএবি-র সদস্য এবং সাধারণ দর্শকেরা কেন পর্যাপ্ত টিকিট পাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলে ইডেন গার্ডেন্সে সিএবি দফতরের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। ক্ষোভের সুর তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরেও। টিকিটের কালোবাজারির প্রসঙ্গ তোলার পাশাপাশি ‘বেটিং চক্র’ দমন করতে কলকাতা পুলিশকে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ইডেনের ৬৮ হাজার আসনের মধ্যে ৯ হাজার টাকা এবং তার বেশি মূল্যের মাত্র ৯০টি টিকিট পড়ে থাকা নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বতন টুইটার) বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। টিকিটের সঙ্কট চলায় সব বিধায়কের জন্য টিকিট চেয়ে কয়েক দিন আগেই সিএবি সভাপতিকে চিঠি লিখেছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের দিন বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন স্নেহাশিস। বিধায়কদের জন্য একটি করে টিকিটও পাঠিয়েছে সিএবি।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে এ দিন কিছু ক্ষণ ইডেনের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ, প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, তপন আগরওয়াল, ইন্দ্ররাজ চট্টোপাধ্যায়েরা শামিল হয়েছিলেন বিক্ষোভে। তাঁদের বক্তব্য, ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষ-সহ সিএবি-র আজীবন সদস্যেরা পর্যন্ত ঠিকমতো টিকিট পাচ্ছেন না। অথচ টিকিট কালোবাজারে চলে গিয়েছে! তাঁদের আরও অভিযোগ, বিসিসিআই সচিব জয় শাহ ২৪ হাজার টিকিট নিয়ে গিয়েছেন।
❤ Support Us