Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ডিসেম্বর ৭, ২০২৩

“চিনপন্থী” পড়শী মলদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার ভারতের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
“চিনপন্থী” পড়শী মলদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার ভারতের

পড়শী দেশ মলদ্বীপে ক্ষমতা বদল ভারতের পক্ষে স্বস্তিদায়ক হল না। মলদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট চিনের ঘনিষ্ট। তাই পালাবদলের পরেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারত-মলদ্বীপ দুই দেশের মধ্যে। মলদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশ থেকে ভারতকে সেনা সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। মলদ্বীপের ক্ষমতায় এসেই নতুন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজু ভারতকে তাঁর দেশ থেকে সেনা সরানোর জন্য বার্তা দিয়েছেন।

সম্প্রতি মহম্মদ মুইজু জানিয়েছেন, সেনা সরানো নিয়ে তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ভারত। মলদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। একইসঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতার পথে চলার বার্তাও দিয়েছেন মলদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট।

একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মহম্মদ মুইজু জানিয়েছেন, মলদ্বীপে ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। মুইজুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মলদ্বীপে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। নিজের দফতরে বসে তাঁকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন মলদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট।

এই মুহূর্তে ভারতের ৭৫ জন সেনা জওয়ান মলদ্বীপে আছেন। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে নজরদারির কাজে সে দেশের স্থলসেনা এবং বায়ুসেনাকে সহায়তা করে থাকেন ওই জওয়ানেরা। মলদ্বীপের অর্থনৈতিক অঞ্চলের চারপাশে টহল দেয় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ। এ ছাড়াও  মলদ্বীপে মোতায়েন রয়েছে ভারতের বেশ কিছু কপ্টার। সেগুলি মলদ্বীপের নাগরিকদের নির্জন দ্বীপ থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।

মলদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজু “চিনপন্থী” হিসাবেই পরিচিত। তবে মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি ছিলেন “ভারতপন্থী”। যা নিয়ে সোলিকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি মুইজু। তাঁর অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতীয় সেনাকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিয়েছেন ইব্রাহিম সোলি।

মহম্মদ মুইজু নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে মলদ্বীপ থেকে বিদেশি সেনা তিনি সরাবেন। নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেই ভারতের সেনা মলদ্বীপ থেকে সরানোর তৎপরতা তিনি শুরু করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মহম্মদ মুইজু জানিয়েছেন, মলদ্বীপে দীর্ঘ দিন ধরেই ভারতের সেনা রয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের কথা মাথায় রেখে ভারতের সেনাদের মলদ্বীপ ছাড়তে তিনি বলেছেন। ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশের সেনা মলদ্বীপে থাকলেও তিনি একই কথা বলতেন বলে জানান।

অনেকে মনে করছেন, চিনপন্থী শাসক মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরিয়ে এ বার চিনের দিকে ঝুঁকতে চলেছেন মহম্মদ মুইজু। এবার হয়তো মলদ্বীপে চিনের সৈনিকদের তিনি জায়গা দেবেন। এর ফলে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপরাষ্ট্রে চিনের সেনা ঢুকে পড়তে পারে অনায়াসে। সে ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে ভারত। কারণ ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কাতেও চিনের আধিপত্য বেড়েছে। ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পড়শি শ্রীলঙ্কা। সেখানে চিনা সংস্থা সিনোপেক সম্প্রতি তেলের বাণিজ্যের বড় বরাত পেয়েছে। ফলে সেখানেও ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়াচ্ছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপে চিনপন্থী শাসক ভারতের পক্ষে নতুন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও মুইজু গত অক্টোবরেই জানিয়েছিলেন, মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরিয়ে চিনের সেনাকে ঢোকানোর কোনও পরিকল্পনা তাঁর নেই।

কিন্তু “চিনপন্থী” হিসেবে পরিচিত মহম্মদ মুইজু শেষ পর্যন্ত তাঁর কথা ভারতের সেনা সরানোর ক্ষেত্রে রাখলেও চীনের সেনাদের নিজের দেশে প্রবেশে কতটা বিরোধিতা করেন সেটা দেখার। তাই  মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরে যাওয়ার পর চিনা সৈনিকদের যদি সেখানে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তবে ভারত মহাসাগরের আঞ্চলিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে বাধ্য। মহম্মদ মুইজু নিজেও তা স্বীকার করেছিলেন। তাই মহম্মদ মুইজুর উপরেই এখন ওই এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তিনি কোন দিকে ঝুঁকবেন, কার কথা শুনবেন, কাকে কী ভাবে সুযোগ দেবেন, সে দিকে নজর রয়েছে সারা বিশ্বের।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!